শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

সরকারি নির্দেশ অমান্য করে
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

সরকারি নির্দেশ অমান্য করে হাজীগঞ্জের বেশ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোটা অঙ্কের ফি আদায়ের মধ্য দিয়ে বার্ষিক পরীক্ষা নিচ্ছে। পরীক্ষা নেয়া বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা নিশ্চিত করলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা বার্ষিক পরীক্ষাকে নির্বাচনী পরীক্ষা বলে গণমাধ্যমকে আখ্যায়িত করেছেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি অবগত নন জানিয়ে বলেন, ফি ফেরত দেয়া হবে আর এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়কে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা হবে। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) মহামারীর কারণে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী (বার্ষিক) পরীক্ষা বাতিল করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওয়ার্কশিটসহ (বাড়ির কাজ) বা অ্যাসাইনমেন্টের মতো কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত করার জন্যে এই মূল্যায়ন করবে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি গণমাধ্যমকে এমন বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুব রহমান তুহিন।

সরজমিনে শনিবার উপজেলার কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নের বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, চিলাচোঁ সরকারি প্রাথমিক ও ভাটোরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। এদিন প্রথম শ্রেণির বাংলা, পরবর্তী সকল শ্রেণির গণিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উক্ত পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জনপ্রতি ২০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণির জনপ্রতি ৩০ টাকা, তৃতীয় শ্রেণির জনপ্রতি ৪০ টাকা, চতুর্থ শ্রেণির জনপ্রতি ৫০ টাকা এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জনপ্রতি ৬০ টাকা করে পরীক্ষার ফি নিয়েছে বিদ্যালয়গুলো। তবে বিদ্যালয় থেকে কাগজ ও প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের। বিষয়টি শ্রেণি কক্ষে সহকারী শিক্ষকের সামনে নিশ্চিত করেছে শিক্ষার্থীরা।

চিলাচোঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী জিহাদ, মানহা, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল রাব্বী, মারিয়া, ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মেশকাত, নূরজাহান, পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইউনুস, আব্দুর রহমানসহ অন্যান্য শিক্ষার্থী জানান, গতকাল শনিবার তাদের গণিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং বার্ষিক পরীক্ষার ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শ্রেণী অনুযায়ী ঊর্ধ্বমুখী ক্রমান্বয়ে জনপ্রতি ৩০, ৪০, ৫০ ও ৬০ টাকা নেয়া হয়েছে।

ভাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির নূরুন নাহার, তামান্না, মাহিমা, তৃতীয় শ্রেণির উম্মে হাবিবা, নুসরতা জাহান, চতুর্থ শ্রেণির আব্দুল কাইয়্যুম, মুনতাহি জাহানসহ অন্য শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের আজ গণিত পরীক্ষা হচ্ছে।

চিলাচোঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মনজুর হোসেন জানান, আমরা অভিভাবকদের অনুরোধে বার্ষিক পরীক্ষা নয়, মূল্যায়ন পরীক্ষা নিচ্ছি। পরীক্ষা ফি আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, পরীক্ষার প্রশ্ন ও খাতা ক্রয় বাবদ ন্যূনতম একটা ফি (টাকা) শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে। তার বিদ্যালয় ছাড়াও ওই ক্লাস্টারে বেশ কিছু বিদ্যালয় এই মূল্যায়ন পরীক্ষা নিচ্ছে। তার বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ৮৯জন বলে তিনি জানান এই প্রধান শিক্ষক।

ভাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আবুল কালাম বলেন, বার্ষিক পরীক্ষা নয় আমরা মূল্যায়ন পরীক্ষা নিচ্ছি। বার্ষিক পরীক্ষা আর মূল্যায়ন পরীক্ষার তফাৎ না বলতে পারলেও এই প্রধান শিক্ষক বলেন, ক্লাস্টার কর্মকর্তার (সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) অনুমতি নিয়েই আমরা এই পরীক্ষা নিচ্ছি আর এই বিদ্যালয়ে ১৩৬জন শিক্ষার্থী রয়েছে বলে তিনি জানান।

রামপুর ক্লাস্টার কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আনিসুর রহমান জানান, সরকারিভাবে সমাপনী পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশনা নেই। তাই আমরা কাউকে পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশনা দেইনি। তবে অভিভাবকদের চাহিদার ভিত্তিতে বিদ্যালয়গুলো মূল্যায়ন পরীক্ষা নিচ্ছে সেটা আমি অবগত আছি। অপর এক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, মূল্যায়ন পরীক্ষার ফি বাবদ টাকা নেয়ার কথা আমি জানি না। যদি ফি নিয়ে থাকে, তাহলে শিক্ষার্থীদের ফেরত দেয়া হবে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আবু সাইদ চৌধুরী বলেন, পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি আমি অবগত নেই। যেহেতু পরীক্ষা নেয়ার সরকারি নির্দেশনা নেই, সেহেতু যদি কোনো বিদ্যালয় পরীক্ষা নেয়, তাহলে তাকে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এখন উপজেলার কোন্ কোন্ বিদ্যালয় পরীক্ষা নিচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলে আগাঈকাল (আজ রোববার) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়