প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
শাহরাস্তি উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামে স্বামী জামাল হোসেনকে ঘুমের ঔষধ ও বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী ফাতেমা আক্তার (৩৪)কে যাবজ্জীবন কারাদ-, ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদ- দিয়েছে আদালত। গতকাল ২৪ রোববার অক্টোবর বিকেলে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম ফারহানা ইয়াসমিন এই রায় দেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ১৪ এপ্রিল ফাতেমা আক্তারের সাথে তার স্বামী মৃত জামাল হোসেনের পারিবারিক বিষয়ে ঝগড়া-বিবাদ হয়। সন্তানদের সামনে ফাতেমাকে তার স্বামী মারধর করায় তিনি অসম্মানবোধ করেন। এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামীকে জীবনে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন। পরদিন ১৫ এপ্রিল পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত ১১টায় বাজার থেকে স্বামী ঘরে আসলে জন্ডিসের তরল ঔষধের সাথে ৮টি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে রাখেন। ওই ঔষধ পান করে রাতে স্ত্রী ফাতেমাসহ ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে জামাল হোসেন অচেতন হয়ে পড়লে নাকে-মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। ঘটনাটি গোপন করার জন্য ফাতেমা পাশর্^বর্তী ঘর থেকে তার ছেলে জাহিদুল ইসলাম ফাহিম (১৫)কে ঘুম থেকে উঠিয়ে তার পিতা মৃত্যুবরণ করেছেন বলে জানান। ছেলেকে ফাতেমা বলেন, তার পিতার সাথে ঝগড়া বিবাদ হয়েছে দিনে, যার ফলে তার মৃত্যুর ঘটনায় তাদেরকে সন্দেহ করবে। এই জন্য মা ও ছেলে একসঙ্গে বাড়ির পাশে পুরানো গর্তকে আকারে বড় করে জামালকে মাটি চাপা দেয়। সকাল বেলায় ফাতেমা প্রচার করে তার স্বামী ঢাকায় চাকুরির জন্যে গিয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি জামাল হোসেন পরিবারের সন্দেহ হলে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে সন্ধান পায়নি। পরবর্তীতে ফাতেমাকে দিয়ে ২৮ এপ্রিল শাহরাস্তি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করান।
এরপর ৩০ এপ্রিল দুপুরে ফাতেমা আক্তার তার স্বামীর নিকটাত্মীয় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মোঃ আমির হোসেনের নিকট পুরো ঘটনার বিবরণ দেন। আমির হোসেন ঘটনাটি শাহরাস্তি থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে তাদেরকে থানায় নিয়ে যায় এবং জিজ্ঞাসাবদের এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে জামাল হোসেনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। এই ঘটনায় ওইদিনই আমির হোসেন বাদী হয়ে শাহরাস্তি থানায় ফাতেমা আক্তার ও তার ছেলে জাহিদুল ইসলাম ফাহিমকে আসামী করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
শাহরাস্তি থানা পুলিশ ওইদিনই ফাতেমা আক্তার ও তার ছেলেকে আদালতে পাঠান। গত ৬ বছর ফাতেমা চাঁদপুর জেলা কারাগারে এবং ছেলে জাহিদুল ইসলাম শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে থেকে এখন জামিনে আছেন। জাহিদুলের মামলাটি শিশু আদালতে চলমান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন শাহরাস্তি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সমির মজুমদার তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি বদিউজ্জামান কিরণ বলেন, মামলাটি আদালতে ৬ বছর চলমান থাকা অবস্থায় ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। মামলার সাক্ষ্য ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসামীর উপস্থিতিতে বিচারক এই রায় দেন।
আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট সেলিম আকবর, কাজী জুম্মন ও ইয়াসিন আরাফাত ইকরাম।