বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

অপরিকল্পিত নগরায়নে ভাসছে গ্রামীণ জনপদ-৩

বাড়ছে অপরাধ ॥ ভাঙ্গছে সামাজিক ভারসাম্য

মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ ॥
বাড়ছে অপরাধ ॥ ভাঙ্গছে সামাজিক ভারসাম্য

পাখির কলকাকলি আর রোদণ্ডবৃষ্টি মিশ্রিত গ্রামীণ পরিবেশ। ধূলাবালিমুক্ত বাতাস, নদী, খাল আর দিগন্তজোড়া মাঠ। গ্রামীণ পরিবেশের এমন পরিচ্ছন্ন মোহনীয়তা আবহমানকাল থেকেই চলমান। যেখানে কয়েকটি বাড়ি মিলে একটি পাড়া, কয়েকটি পাড়া মিলে একটি গ্রাম। আর এ সকল গ্রামে হাট-বাজার, মসজিদণ্ড মাদ্রাসা, মক্তব, স্কুল-কলেজের মতো সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রামীণ সমাজের মৌলিক অনুষঙ্গ। এ পাড়ার মানুষের সাথে ও পাড়ার মানুষের রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও একটি সামাজিক বন্ধনে তারা একান্ত আপনজন হিসেবেই যুগের পর যুগ শতাব্দীর পর শতাব্দী বসবাস করে আসছে।

নিভৃত পল্লীর কেউ দেশের উপজেলা সদরে অথবা বড় কোনো বাজার এলাকায় বসবাস করার জন্যে এক খণ্ড জমি ক্রয় করে একতলা, দোতলা বা বহুতল বাড়ি নির্মাণ করছে। ফলস্বরূপ শতাব্দীর পর শতাব্দী চলে আসা সামাজিক বন্ধন, সামাজিক পরিবেশে অনুপ্রবেশ ঘটছে কিছু নতুন মানুষ, নতুন রুচিবোধ আর নতুন চিন্তাধারা। যাদের সাথে যুগ যুগ ধরে বসবাস করা মানুষগুলোর আচরণগত, অভ্যাসগত মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে তৈরি হচ্ছে নতুন একটি সামাজিক বলয়। এতে করে সামাজিক পরিবেশে এক ধরনের বৈশ্বিক দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে এক দেশের সাথে অন্য দেশের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যে চিন্তার বিবর্তনগুলো প্রকাশ পাচ্ছে, তেমনিভাবে সামাজিক পরিবেশেও ভিন্ন গ্রামের ভিন্ন জেলার ভিন্ন চিন্তার মানুষের অনুপ্রবেশ ঘটায় এখানেও সামাজিক বন্ধনের মধ্যে ভাঙ্গন লক্ষ্য করা গেছে।

শিল্প বিপ্লবের পর পারিবারিক এবং সামাজিক পরিবর্তনগুলোর সাথে সাথে মানুষের ধ্যানধারণা চিন্তা- পরিকল্পনার ব্যাপক পরিবর্তন হয়। শুরু হয় জীবিকার তাগিদে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। পরিবারের বয়স্করা সন্তানের সুখের কথা ভেবে একক পরিবার গঠনে সহায়তা করে। এভাবেই যৌথ পরিবার ভাঙ্গার পথ তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব এখন গ্রামীণ নগরায়নেও ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত।

আবার নতুন এই নগরায়ন পরিবেশে আধুনিক সব উপায়-উপকরণ হাতের নাগালে পাওয়ার সুযোগ থাকায় অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।

নেশাজাতীয় দ্রব্য এখন সব জায়গায় সহজলভ্য। সরকার মাদককে জিরো টলারেন্স নীতি হিসেবে গ্রহণ করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। যেখানে সমাজে বসবাসকারী সামাজিক এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে আদর্শের গুণাবলি অনেকাংশেই অনুপস্থিত, সেখানে সরকার এককভাবে আর কী করতে পারে। কেননা সরকার তো জনগণেরই একটা অংশ মাত্র।

গ্রামীণ নগরায়নে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এক নতুন সামাজিক কাঠামো। যে সমাজের অধিবাসীরা বংশগতভাবে বা যুগ পরম্পরায় পরিচিত নয়। ফলে শহরতলীর মতো গ্রামেও শহুরে ভাব তৈরি হচ্ছে। পার্থক্য শুধু শহরে প্রশাসনিক কাঠামো রয়েছে। আর গ্রামীণ নগরায়নের বিষয়টি এখনো সেভাবে কেউ চিন্তা করেনি। যার ফলে তরুণ প্রজন্মের মাঝে অপরাধ প্রবণতা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। লেখাপড়া বাদ দিয়ে মোবাইল গেম খেলায় ব্যস্ত থাকে শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ। ভার্চুয়াল রিয়্যালিটিতে আসক্ত এই শ্রেণি জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের মতো ভয়ংকর অপরাধে।

অপরিকল্পিত নগরায়নে সামাজিক দায়বদ্ধতা কম থাকায় এবং নতুন এ সামাজিক কাঠামোয় পরস্পর অপরিচিত হওয়ায় শ্রেণিভেদে শ্রদ্ধা-স্নেহ-মমতা অদৃশ্য প্রায়।

গ্রামীণ নগরায়নের ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় যেসব বিষয়ে প্রভাব পড়ে তার মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যার ঘনত্ব, বসতবাড়ির ধরণ, পরিবহন ব্যবস্থা, পরিবার, চালচলন, খাদ্যাভ্যাস ও পোশাক-পরিচ্ছদ, অর্থনীতি, সেবা-পরিষেবা সুবিধা, শিক্ষা ও চিকিৎসা, বিনোদন ব্যবস্থা, অপরাধবৃত্তি, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ইত্যাদি। গত ৫০ বছরে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে গ্রামীণ নগরায়নের হার সবচেয়ে বেশি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়