বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর

এমরান হোসেন লিটন ॥
বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর

এক সময় গ্রামীণ জনপদের অধিকাংশ বাড়িতেই ছিলো কাচারি ঘর। আর এই কাচারি ঘর ছিলো গ্রাম-বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির একটি অংশ। কালের বিবর্তনে আজ কাচারি ঘর বাঙালির সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। গেস্ট রুম কিংবা ড্রইং রুমের আদি ভার্সন কাচারি ঘর এখন আর গ্রামীণ জনপদে দেখা যায় না।

কাচারি ঘর মূল বাড়ির একটু বাইরে আলাদা খোলামেলা একটি ঘর। অতিথি, পথচারী কিংবা সাক্ষাৎ প্রার্থীরা একসময় এই ঘরে এসেই বসতেন। প্রয়োজনে দু-একদিন রাত যাপনেরও ব্যবস্থা থাকতো কাচারি ঘরে। কাচারি ঘর ছিলো বাংলার অবস্থাসম্পন্ন গৃহস্থের আভিজাত্যের প্রতীক। কাঠের কারুকাজ করা টিন অথবা ছনের ছাউনি থাকতো কাচারি ঘরে। আলোচনা, সালিসি বৈঠক, বিয়ের আয়োজন, গল্প- আড্ডার আসর বসতো কাচারি ঘরে।

বর্ষা মৌসুমে গ্রামের লোকজনদের উপস্থিতিতে কাচারি ঘরে বসতো পুঁথিপাঠ। পথচারীরা এই কাচারি ঘরে ক্ষণিকের জন্যে বিশ্রাম নিতেন। কাচারিওয়ালা বাড়ির মানুষজন এদেরকে মেহমান হিসেবেই দেখতেন। গৃহস্থের বাড়ির ভেতর থেকে এদের জন্যে খাবারের ব্যবস্থাও করা হতো।

এছাড়া আবাসিক গৃহ শিক্ষকদের (লজিং মাস্টার) থাকার ব্যবস্থা থাকতো কাচারি ঘরেই। এসব কাচারি ঘর সকাল বেলায় আরবি পড়ার মক্তব হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায় বাংলো টাইপের এ কাচারি ঘর। এখন সেই জায়গায় স্থান করে নিয়েছে মানুষের ড্রয়িং রুম এবং প্রতি বাড়ির সামনে থাকা পাকা মসজিদ ঘর। বর্তমানে দুই-এক জায়গায় কাচারি ঘর থাকলেও তা অবহেলায় অযত্নে পড়ে আছে। সময়ের বিবর্তনে শহরের পাশাপাশি গ্রামের পরিবারগুলো ছোট ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। তাই বিলুপ্তির পথে শতবর্ষের বাঙালির ঐতিহ্য কাচারি ঘর।

এমনই এক কাচারি ঘর ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২নং বালিথুবা ইউনিয়নের সরখাল আব্দুল হামিদ মিয়াজী বাড়ির জোড় কাচারি ঘর। আব্দুল হামিদ মিয়াজী হলেন ঐতিহ্যবাহী বালিথুবা আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর বাড়ির সামনে ছিলো একই সাথে তিনটি কাচারি ঘর। তিনটি কাচারি ঘরের বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজনীয়তা বলতে গিয়ে এলাকার প্রবীণ নুরুল ইসলাম ও মোস্তফা বলেন, এখানে মোট তিনটি জোড় কাচারি ঘর ছিলো এবং এগুলো বালিথুবা আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল হামিদ মিয়াজী দেখাশোনা করতেন। এই কাচারি ঘরগুলো একসময় সালিসি বৈঠক, পুঁথিপাঠ, দেশীয় গান, বাঙালির বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেহমানদারি, পথচারীদের বিশ্রাম, রাত্রিযাপন বা দু-তিনদিন থাকা, আরবি পড়া, গৃহ শিক্ষক অথবা লজিং মাস্টারের থাকার ব্যবস্থা, বিবাহ অনুষ্ঠানসহ হরেক রকমের কাজের জন্যে ব্যবহার হতো।

আব্দুল হামিদ মিয়াজী সাহেব জীবিত না থাকায় এবং তাঁর পরিবার-পরিজন এলাকায় না থাকার কারণে অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে ঐতিহ্যবাহী এই কাচারি ঘর। মূলত স্মৃতি হিসেবেই কাচারি ঘরগুলো রেখে দেওয়া হয়েছে। তাদের ধারণা মতে, এই কাচারি ঘরগুলোর বয়স একশ’ বছরের উপরে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে মুক্তিযোদ্ধারাও থাকতেন বলে তারা জানান।

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব কাচারি ঘর স্মৃতি হিসেবে রেখে দেওয়ার জন্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অথবা প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ ব্যবস্থা নিতে পারে বলে সুধীজন মনে করেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়