প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
উদীয়মান গবেষক মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসলো প্রকৃত ইতিহাস
চাঁদপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠা হয় ১ অক্টোবর ১৮৯৭ : প্রথম পৌর পরিষদ নয় সদস্য বিশিষ্ট
চাঁদপুর কণ্ঠের সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক প্রকাশনা ‘সুচিন্তা, শিক্ষাঙ্গন, পাঠক ফোরাম ও প্রযুক্তি কণ্ঠ’র বিভাগীয় সম্পাদক এবং সহ-সম্পাদক মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের অনুসন্ধানে চাঁদপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসলো। এতোকাল যাবত এই পৌরবাসী চাঁদপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠা সাল ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দ জেনে আসলেও এ তথ্যটি যে সঠিক নয়, তা বেরিয়ে আসলো মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের অনুসন্ধানে। চাঁদপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেলো এটি প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৮৯৭ সালের ১ অক্টোবর। আর পৌরসভার প্রথম পরিষদ গঠিত হয় একই বছরের ২৮ অক্টোবর। চাঞ্চল্যকর এ তথ্যটি জানা গেলো ১৮৯৭ সালের ৩ নভেম্বর তারিখে প্রকাশিত ‘দ্য ক্যালকাটা গেজেট’ থেকে। ‘দ্য ক্যালকাটা গেজেট, বুধবার, নভেম্বর ৩, ১৮৯৭’ শিরোনামে প্রকাশিত গেজেট নোটিফিকেশন থেকে চাঁদপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যায়। এই গেজেটেই চাঁদপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ইতিহাস, প্রতিষ্ঠালগ্নে এর সীমানা এবং নয় সদস্য বিশিষ্ট প্রথম পৌর পরিষদের নাম উল্লেখ রয়েছে।
|আরো খবর
জানা গেছে, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েলের অনুরোধ, পরামর্শ, উৎসাহ এবং দিকনির্দেশনায় উদীয়মান গবেষক মুহাম্মদ ফরিদ হাসান চাঁদপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ডকুমেন্টারি ইতিহাস বের করার কাজে নিজেকে মনোনিবেশ করেন। তিনি সফলও হন।
৩ নভেম্বর ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দ তারিখে প্রকাশিত ক্যালকাটা গেজেট থেকে জানা যায়, ত্রিপুরা জেলার চাঁদপুর শহর ১ অক্টোবর ১৮৯৭ সাল থেকে পৌরসভা হিসেবে কার্যকারিতা পায়। এর প্রেক্ষাপট হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ত্রিপুরা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর শহরকে লেফটেন্যান্ট-গভর্নর কর্তৃক পৌরসভা ঘোষণার অভিপ্রায় ১৫ এপ্রিল, ১৮৯৭ তারিখের স স্মারক নং ২১৫১ এম মোতাবেক একই মাসের কলকাতা গেজেটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ঘোষিত হলে এর বিপক্ষে বৈধ কোনো আপত্তি উত্থাপিত না হওয়ায় চাঁদপুর শহরকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর এটি ১ অক্টোবর ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতিষ্ঠাকাল ধরা হয়। যা পরবর্তীতে ৩ নভেম্বর ১৮৯৭ সালে প্রকাশিত গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানান দেয়া হয়। এই গেজেটেই তৎকালীন চাঁদপুর পৌরসভার সীমানা উল্লেখ করা হয় এবং নয় সদস্য বিশিষ্ট প্রথম পৌর পরিষদের নামও গেজেটে উল্লেখ করা হয়।
নয় সদস্য (কমিশনার) বিশিষ্ট প্রথম পৌর পরিষদ হচ্ছে : মহকুমা কর্মকর্তা (পদাধিকারবলে), সিভিল হাসপাতাল সহকারী, চাঁদপুর, গ্রামীণ সাব-রেজিস্ট্রার, চাঁদপুর, মিস্টার জে ফ্লিন্ট, মিস্টার ই জে ওকলে, বাবু হরদয়াল নাগ, বাবু গিরিশ চন্দ্র সেন, বি এল, বাবু গিরিশ চন্দ্র ঘোষ ও বাবু জগবন্ধু গুহ। পরবর্তীতে লেফটেন্যান্ট গভর্নর সানন্দ চিত্তে মহকুমা কর্মকর্তা চাঁদপুরকে পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন।
৩ নভেম্বর, ১৮৯৭ তারিখে ‘দ্য ক্যালকাটা গেজেট’ নামে প্রকাশিত গেজেটের হুবহু বঙ্গানুবাদ তুলে ধরা হলো-
দ্য ক্যালকাটা গেজেট
বুধবার, ৩রা নভেম্বর ১৮৯৭ খ্রিঃ
অংশ-১বি ২৪৮
বিজ্ঞপ্তি
নং ১২৫৯ টিএম ২৮ অক্টোবর ১৮৯৭
যেহেতু, ত্রিপুরা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর শহরকে লেফটেন্যান্ট-গভর্নর কর্তৃক পৌরসভা ঘোষণার অভিপ্রায় ১৫ এপ্রিল, ১৮৯৭ তারিখের স্মারক নং ২১৫১ এম মোতাবেক একই মাসের কলকাতা গেজেটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ঘোষিত হয়েছে, এবং যেহেতু কোনো বৈধ আপত্তি উত্থাপিত হয় নাই, অতএব, সাধারণের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্ট ১৮৮৪ এর ৩ (বেঙ্গল অ্যাক্ট এক-১৮৯৪ এর ৪ এবং ১৮৯৬ এর ২ মোতাবেক সংশোধিত)-এর ৮নং অনুচ্ছেদ মতে লেফটেন্যান্ট-গভর্নর এর ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে কথিত চাঁদপুর শহরের ওপর তা পহেলা অক্টোবর ১৮৯৭ তারিখ থেকে প্রযুক্ত হবে। এই পৌরসভার সীমানা নিম্নোক্তরূপে নির্ধারিত হবে:-
উত্তরে : আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের কোড়ালিয়াস্থ ভূমির উত্তর সীমা, শ্রীরামদি, উত্তর-পশ্চিম কোণের জঙ্গল থেকে বিষ্ণুদির মিয়াজানের ঘরের উত্তরে।
পূর্বে : মিয়াজানের বাড়ির পূর্বসীমা, ডেঙ্গু, হানিফ ছৈয়াল, রঞ্জা গাজী, তাজামাদ্দি, বাইলার খাঁ এবং নূর বকশ্ হতে রেলওয়ে সড়কের ২নং কালভার্ট পর্যন্ত এবং সেখান থেকে জামাল খাঁ-এর বাড়ির পূর্ব সীমা, আলাবকশ্, হানিফ, কুকুরী শাহর ছারাবাড়ি, বাইলার খাঁর বাড়ি, ডেঙ্গু ছৈয়াল, গোবিন্দ ধূপী, গোবিন্দ সাহা এবং জমিরুদ্দিনের বাড়ি হতে বাগাদি ফেরি পর্যন্ত।
দক্ষিণে : ইচলি গ্রামের উত্তর সীমা, রঘুনাথপুর, জাফরাবাদ ও নাপিতবাড়ি খাল।
পশ্চিমে : নাপিতবাড়ি খালের উত্তর পাড়ে হরি পোদ্দারের বাড়ির পশ্চিম সীমা, শ্রীরামদি সড়কের পশ্চিম মাথা হতে মেঘনা নদী বরাবর সড়ক ও মেঘনা নদী।
২. নতুন পৌরসভা পূর্বোক্ত অ্যাক্টের প্রথম ও দ্বিতীয় শিডিউলে অন্তর্ভুক্ত হবে।
৩. পৌরসভার কমিটিতে নয়জন কমিশনার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এইচ এইচ রিজ্লে
সচিব
গভর্নমেন্ট অব বেঙ্গল।
সূত্র : দ্য ক্যালকাটা গেজেট, ৬ অক্টোবর-২৪ডিসেম্বর
১৮৯৭, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
কৃতজ্ঞতা : ন্যাচনাল আর্কাইভ, পশ্চিমবঙ্গ ও গোবিন্দ সাহা
এতোকাল পর মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের ভেতরে চাঁদপুর পৌরসভার ইতিহাস নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা কেনো বা কী কারণে জাগ্রত হলো জানতে চাইলে উদীয়মান এই গবেষক জানান, চাঁদপুরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে আমি গত চার বছর নিবিড়ভাবে গবেষণা করছি। এ গবেষণা কাজের অংশ হিসেবে আমি কলকাতা গিয়েছি। সেখানকার লাইব্রেরি, আর্কাইভ ও বাংলাদেশের আর্কাইভ থেকে তথ্য ও দলিলপত্র সংগ্রহ করেছি। সেখানেই আমি ‘দ্য ক্যালকাটা গেজেট, ৬ অক্টোবর থেকে ২৯ ডিসেম্বর ১৮৯৭, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান : গভর্নমেন্ট অব ইস্ট বেঙ্গল’ দলিলটি পাই। সেখানেই চাঁদপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ইতিহাস খুঁজে পেলাম। আর এ হিসেবে চাঁদপুর পৌরসভার বর্তমান বয়স ১২৪ বছর। আগামী বছরের ১ অক্টোবর ১২৫ বছর পূর্ণ হবে।
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান আরো বলেন, চাঁদপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল পৌরসভা সংক্রান্ত দলিলপত্র সংগ্রহে আমাকে উৎসাহিত করেছেন। এজন্যে আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। আর এ সব তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে মুহাম্মদ ফরিদ হাসান ন্যাশনাল আর্কাইভ অব ইন্ডিয়া ও গোবিন্দ সাহার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।