শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল

কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব নিলেন সিভিল সার্জন

চ্যালেঞ্জ বটে, তবে সকলের সহযোগিতা পেলে তেমন কঠিন হবে না : ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ

কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব নিলেন সিভিল সার্জন
এএইচএম আহসান উল্লাহ ॥

লোকবলের তীব্র সংকট। মূল্যবান অনেক মেশিন নষ্ট হয়ে আছে। গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে দীর্ঘদিন। তত্ত্বাবধায়কের সাথে ডাক্তার ও অন্য স্টাফদের ছিল দূরত্ব। ব্যবস্থাপনায় ছিল না তেমন একটা সমন্বয়। ডাক্তারদের কেউ কেউ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতেন না। একই অবস্থা বিরাজমান নার্সদের মধ্যেও। এমন বাস্তবতায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব নিলেন চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ। সিভিল সার্জনের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তাঁকে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে খোদ মন্ত্রণালয় থেকে। একজন করিৎকর্মা ও কর্মদক্ষ মানুষ হিসেবেই ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহকে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান দায়িত্বের পাশাপাশি আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতালেরও প্রধান কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন হাসপাতালের চিকিৎসকগণ। তবে হাসপাতালটিকে বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখলেও এটিকে খুব বেশি কঠিন মনে করছেন না নবাগত তত্ত্বাবধায়ক। পরিকল্পনা অনুযায়ী সকলের সহযোগিতায় তিনি এ হাসপাতালটিকে মানুষের সেবার আস্থার জায়গায় নিয়ে আনতে পারবেন বলে আশাবাদী।

আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালটি শুধু চাঁদপুর জেলারই নয়, আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষের চিকিৎসার প্রধানতম আস্থার জায়গা। পাশর্র্^বর্তী লক্ষ্মীপুর ও শরীয়তপুর জেলার অনেক মানুষ এ হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়ে থাকেন। বর্তমান করোনাকালে এটি খুব বেশি উপলব্ধি করা গেছে। অসুস্থ মানুষের এমন একটি আস্থার জায়গা এ হাসপাতালটি অনেকদিন যাবত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি পদে ডাক্তার নেই দীর্ঘদিন যাবত। গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে লোক না থাকায় সে বিভাগগুলো বন্ধ হয়ে আছে অনেকদিন ধরে। যেমন রেডিওলজিস্ট না থাকায় এ হাসপাতালে দুই বছরের উপরে হবে আল্ট্রাসনোগ্রাম ও এক্স-রে বন্ধ হয়ে আছে। চক্ষু ডাক্তার না থাকায় চক্ষু বিভাগ বন্ধ। গাইনি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট নেই। এভাবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে ডাক্তারসহ লোকবল সংকট অনেক দিন যাবত। মূল্যবান অনেক মেশিনপত্রও নষ্ট হয়ে আছে। এমনকি কিছুদিনের মধ্যে ডায়াবেটিক পরীক্ষাও হয়তো বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন এক চিকিৎসক।

অপরদিকে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায়ও রয়েছে সমস্যা। বর্তমানে যে জনবল আছে, তাঁদেরকে ঠিকভাবে পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছেন বিদায়ী তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হাবিব-উল-করিম। হাসপাতালের ডাক্তার এবং স্টাফদের সাথে ছিল বিদায়ী এ তত্ত্বাবধায়কের দূরত্ব। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় তেমন একটা সমন্বয় ছিল না। জনস্বার্থে হাসপাতালের ডাক্তারদের নানা পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করতেন তত্ত্বাবধায়ক। বিদায়ী এ তত্ত্বাবধায়কের কার্যক্রম নিয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির একাধিক সভায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে খোদ জেলা প্রশাসকও রয়েছেন। জেলা প্রশাসক নিজেই বলেছেন, হাসপাতালের কোনো সমস্যা বা অভাব-অভিযোগের বিষয়ে তিনি নিজ থেকে জানতে চেয়েও তত্ত্বাবধায়কের কাছ থেকে সময়মতো সঠিকভাবে পান নি। তত্ত্বাবধায়কের এমন নির্লিপ্ততার কারণে হাসপাতালটি ঠিকভাবে পরিচালিত হয় নি। এ সুযোগে কোনো কোনো ডাক্তার এবং স্টাফ দায়িত্ব পালনে অবহেলার সুযোগটি নিয়েছেন। আবার যাঁরা মানুষের সেবায় নিজেদের সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রেখেছেন, তাঁদেরকে তিনি কোনো যৌক্তিক সহযোগিতা করতেন না, কোনো প্রণোদনা দিতেন না। এ সব নানাবিধ কারণে জেলার সর্ববৃহৎ এ হাসপাতালটি চালিয়ে নেয়া এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যায়। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়কের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নিলেন সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ। একই আদেশে তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হাবিব-উল-করিমকে বদলি করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক হাবিব-উল-করিমকে বদলি এবং সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এমন খবর শুনে ডাক্তাররা অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন বলে অনুভব করা যাচ্ছে। ৩১ আগস্ট বিদায়ী তত্ত্বাবধায়ক আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিলেন এবং নবাগত তত্ত্বাবধায়কের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করলেন।

গতকাল ১ সেপ্টেম্বর বুধবার এই প্রতিবেদকের কথা হয় হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ও জেলা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহমুদুন্নবী মাসুম এবং হাসপাতালের আরএমও ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেলের সাথে। ডাঃ মাসুম বলেন, আমাদের সিভিল সার্জন তথা বর্তমানে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক স্যার খুবই ডায়নামিক একজন অফিসার। চাঁদপুরের স্বাস্থ্য বিভাগে অনেক অসম্ভব কাজও ইতিমধ্যে সম্ভব হয়েছে তাঁর দৃঢ় মনোবল এবং চৌকস চিন্তা ও নেতৃত্বের কারণে। তিনি কাজ আদায় করে নিতে পারেন এবং কৌশলে ম্যানেজ করে ঘাটতি পূরণ করতে পারেন। আমরা আশাবাদী নতুন তত্ত্বাবধায়ক স্যারের নেতৃত্বে হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো দূর হবে এবং জনবল সংকটসহ অন্যান্য সমস্যা অনেকটা কেটে উঠবে।

একইভাবে বললেন ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল। তিনি বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে চলমান করোনাকাল স্যারের সাথে আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করেছি। আমাদের হাসপাতাল আলাদা ডিপার্টমেন্ট হলেও আমরা সকল বিষয়ে বলতে গেলে সিভিল সার্জন স্যারের পরামর্শ নিয়েছি এবং তাঁর সহযোগিতা পেয়েছি। আর এখন তো তিনি আমাদের নিজেদের ভুবনের লোক। এখন আমরা কাজ করতে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবো। যদিও দুটি বড় দায়িত্ব, স্যারের জন্য কিছুটা কঠিন হবে। তবে আমরা সবাই আন্তরিকতার সাথে সহযোগিতা করলে স্যার পারবেন বলে আমরা আশাবাদী।

কথা হয় নবাগত তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহর সাথে। তিনি জানান, এটি একটা চ্যালেঞ্জ বটে, কিন্তু খুব কঠিন কিছু নয়। যদি সকলের আন্তরিক সহযোগিতা পাই।

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম কাজ কোনটি করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমে আমি হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ঠিক করবো। অর্থাৎ যে জনবল আছে তাঁদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার দিকে মনোযোগী হবো। তাদের সেবা যেনো মানুষ সঠিকভাবে পায় এ বিষয়টি নিশ্চিত করবো। এরপর হাসপাতালের কী কী মেশিন এবং জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে আছে তা চিহ্নিত করে গণপূর্ত বিভাগের সাথে কথা বলে সমস্যাগুলোর সমাধান করবো। তিনি আজই হাসপাতালের প্রত্যেক ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে দেখে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, জনবল সংকটের কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে সব বিভাগ বন্ধ হয়ে আছে সে জনবল নিয়োগের বিষয়ে আমাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে এর পেছনে লেগে থেকে সংকট কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করবো। আমি আশাবাদী, চাঁদপুরের মানুষের সহযোগিতা পেলে আমার কর্মকালে হাসপাতালটির জন্য ভালো কিছু করে দিয়ে যেতে পারবো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়