শাহরাস্তির সাংবাদিক জগৎ অত্যন্ত উন্নত, সকলের প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর প্রেসক্লাব ভবন করবো

এদেশের মানুষের জন্যে, ইতিহাসের জন্যে আজ একটি বিশেষ দিন। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছি, ১৯৭১ সালে আমি নিশ্চিত ছিলাম না বেঁচে থাকবো কিনা। আজকে আমি আমার জন্মভূমিতে এসে বক্তব্য রাখতে পারছি, এজন্যে মহান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করছি। আমি আমার এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে চাই, আজকের এই দিনে আমি আহ্বান রাখছি আমার যত ভালো উদ্যোগে আপনারা আমাকে সহযোগিতা করুন।

শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের জমির দলিল হস্তান্তর ও দাতা সদস্যদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টর কমান্ডার, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে ২৬ মার্চ মঙ্গলবার বেলা তিনটায় শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সদস্য ফয়েজ আহমেদের সঞ্চালনায় সাদ বিন মহিউদ্দিনের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত। সংবর্ধনা দেয়া হয় শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি অ্যাডঃ ইলিয়াস মিন্টুকে। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আরাফাত, বিশিষ্ট সমাজসেবক আব্দুল হান্নান, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও আনোয়ার হোসেন, শাহরাস্তি পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুল লতিফ, শাহরাস্তি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেড এম আনোয়ার হোসেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ৫ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম আরও বলেন, আমাদের সম্পদ দিয়ে পাকিস্তানিরা নিজেদের ভাগ্য গড়ে তুলেছে, বাংলার মানুষ ছিল অবহেলিত। স্বাধীনতাকে কখনোই দ্রব্যমূল্য দিয়ে যাচাই করা যাবে না। স্বাধীনতা এক অমূল্য সম্পদ যা মহান আল্লাহ পাক মানুষ জাতিকে উপহার দিয়েছেন। যে জাতি যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে পারে, সে জাতির নতুন প্রজন্ম যুদ্ধ করেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করবে সে বিশ্বাস আমার আছে। জাতিকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করতে হবে। আর এখানে মূল ভূমিকাটা হলো কবি-শিল্পী-সাহিত্যিক এবং সাংবাদিকদের। পৃথিবীর যত দেশ উন্নতি লাভ করেছে, গণতন্ত্র যেখানে সুপ্রতিষ্ঠিত, তার পেছনে রয়েছে গঠনমূলক, বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতা। এই সৎ সাংবাদিকতা না থাকলে পৃথিবীর কোনো দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। উন্নত দেশগুলোতে জনগণের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিকগণ সরকারের ভুল-ত্রুটি তুলে ধরছে। মানব সভ্যতায় ডেমোক্রেসির বিকল্প এখনো আসেনি, যেভাবেই হোক এই ডেমোক্রেসি দিয়ে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে, এই ডেমোক্রেসিকে রক্ষা করতে হলে সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠান এতোটা সুন্দর যে, আমি শাহরাস্তির মধ্যে দীর্ঘদিন পর এটি দেখতে পেলাম। এ জন্যে শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের গরিব অসহায় মানুষের স্বার্থটা আমাদের দেখতে হবে। আমাদের মতপার্থক্য থাকতে পারে এবং যত কিছুই থাকুক আমাদের একত্রে কাজ করতে হলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমার কাছে ভালো সাংবাদিক যে দলই করুক আমি তাকে সম্মান করবো, সমর্থন করবো, তাকে সহযোগিতা করবো।

তিনি তাঁর বক্তব্যে গুরুত্বপূর্ণ নিউজের ফলোআপ করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, গরিব অসহায় মানুষের পক্ষে টাকা খরচ করে ভালো আইনজীবী পাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু সাংবাদিকরা যদি তার পাশে দাঁড়ায় তাহলে তার মনে সাহসের সঞ্চার হবে। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে রিপোর্টিং। কিন্তু তা নয়। এর সাথে মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, মানুষের স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস জড়িত আছে। সাংবাদিকরা যদি বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা না করতো তাহলে মানব সভ্যতার এতো দ্রুত পরিবর্তন হতো না।

তিনি বলেন, সাংবাদিকতা পেশা একটি মহান পেশা। কেউ কেউ এটিকে কলঙ্কিত করে। কিন্তু কয়েকজন ব্যক্তির জন্যে পুরো সংবাদ মাধ্যমকে দোষারোপ করা সঠিক নয়। সাংবাদিকরা এখানে অনেক ভূমিকা রাখেন। আমি সাংবাদিকদের রিপোর্ট পেয়ে তৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই, আমি নিজেই ফলোআপ করি।

আমি আবারও বলবো, শাহরাস্তির সাংবাদিক জগৎ অত্যন্ত উন্নত। এখানে কোনো ব্ল্যাকমেইলিং হয় না, এখানে হলুদ সাংবাদিকতা খুবই কম। তিনি বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে আগামী দিনগুলোতে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শাহরাস্তিতে সুন্দর একটি প্রেসক্লাব ভবন তৈরি করা। আমি সমস্ত সহযোগিতা শাহরাস্তি প্রেসক্লাবকে দেবো। একটি সুন্দর ভবন হবে, যেখানে পরিবেশটাও ভালো থাকবে। আমরা সেখানে সবাইকে স্বাগত জানাবো। আমরা সবার জন্যে দরজা উন্মুক্ত রাখবো। আমরা সকল ক্ষেত্রে শাহরাস্তি উপজেলাকে মডেল হিসেবে গড়ে তুলবো।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করেন শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ। এরপর শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের লোগো ও শাহরাস্তির মানচিত্র খচিত সম্মাননা স্মারক প্রধান অতিথির হাতে তুলে দেন শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজল ও সাধারণ সম্পাদক স্বপন কর্মকার মিঠুন। একই সাথে প্রধান অতিথি মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের হাতে শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্যের সম্মাননাপত্র তুলে দেয়া হয়। সুশৃঙ্খল ও মনোরম পরিবেশে বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের নিজস্ব সম্পত্তির ঐতিহাসিক দলিল শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের পক্ষে গ্রহণ করেন মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি। এ সময় তিনি প্রসন্ন হয়ে শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের ভূমির দলিলটি খুলে দেখেন এবং সকল সদস্যকে নিয়ে ফটোসেশনে অংশ নেন। প্রধান অতিথি আজীবন সম্মাননায় ভূষিত কাজী শাহাদাতের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি অ্যাডঃ ইলিয়াস মিন্টু প্রধান অতিথির হাত থেকে সম্মাননাপত্র গ্রহণ করেন। এছাড়া একে একে শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের দাতা সদস্যদের সম্মাননাপত্র ও ক্রেস্ট দিয়ে বরণ করে নেন শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম।

আসরের নামাজের পর অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান চৌধুরী, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতির সভানেত্রী নাছিমা আক্তার, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী ও সাবেক সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শাহরাস্তি পৌরসভার সাবেক মেয়র মোঃ মোশারফ হোসেন পাটোয়ারী, শাহরাস্তি উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মোঃ মোস্তফা কামাল, শাহরাস্তি উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুল মান্নান মোল্লা, মেহের ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান, সুচিপাড়া ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষকবৃন্দ ও বিশিষ্টজনরা। অনুষ্ঠান শেষে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এরপর অতিথি ও আমন্ত্রিত ব্যক্তিবর্গ একসাথে ইফতার মাহফিলে শরিক হন।