শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

আইনি জটিলতার বেড়াজালে উটতলী সেতু

স্বপ্নযাত্রা এখনো অধরাই

প্রবীর চক্রবর্তী ॥
স্বপ্নযাত্রা এখনো অধরাই

দিনটি ছিলো ২০২২ সালে ১৬ অক্টোবর। ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের মধ্যে ছিলো উচ্ছ্বাস ও আনন্দ। বিশেষ করে জাতীয় প্রেসক্লাবের দুবারের সভাপতি, বিশিষ্ট সাংবাদিক, চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনের দুই বারের সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমানের দুই দশকের স্বপ্নের ডানা মেলার দিন ছিলো সেদিন। ডাকাতিয়া নদীর উপর ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ দুই উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত স্বপ্নের সেতু উটতলী সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয়েছিলো। ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মূল সেতু এবং অ্যাপ্রোচ সড়কসহ মোট ১০৭ কোটি টাকার ব্যয় সাপেক্ষ কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু উদ্বোধনের প্রায় ৬ মাস পরে সেতুটির টেস্ট পাইলিং শুরু হলেও হঠাৎ করেই এর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। উচ্চ আদালতে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সেতুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশায় এলাকাবাসী। তাদের উটতলী সেতু নিয়ে স্বপ্নযাত্রা এখনো অধরাই।

জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তরাঞ্চল এবং হাজীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার লক্ষ্যে ২০২০ সালের জুলাইয়ে একনেক সভায় উটতলী খেয়াঘাটে সাড়ে ৫৫০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের জন্যে ১০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন হয়। ওই বছর টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে কাজ পায় ঢাকার দোহার উপজেলার মোঃ আইয়ুব আলীর মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজ।

২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কয়েক মাস পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেস্ট পাইলিংয়ের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন।

শর্তানুযায়ী ২০২৪ সালের জুন মাসে মূল সেতুর কাজ শেষ করার চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটির হাজীগঞ্জের অলিপুর অংশে প্রতিষ্ঠানের সাইট নির্মাণ কাজ শুরু করার পর মাত্র ২০টি পিলারের পাইলিং কাজ সম্পন্ন করে।

বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীরগতির কারণে ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট চুক্তিপত্র বাতিল করে এলজিইডি। কাজের চুক্তি বাতিলের সূত্র ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট করলে আদালত থেকে সেতুর কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়। তারপর সেতুর কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, সেতু নির্মাণে মোট চার একর জমির মধ্যে হাজীগঞ্জ উপজেলার অলিপুর অংশে এক দশমিক ৩১৩৮ একর এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলার বাজপার মৌজায় দুই দশমিক ৪০৭৫ একর ও সাচনমেঘ মৌজায় শূন্য দশমিক ২২৩০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্যে নির্ধারিত হয়। অধিগ্রহণকৃত ভূমির প্রাক্কলন মূল্য নির্ধারণ করা হয় চার কোটি ৯১ লাখ আট হাজার ৬৬৩ টাকা। এর মধ্যে হাজীগঞ্জের অলিপুর মৌজায় এক কোটি ৩৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪০৭ টাকা এবং ফরিদগঞ্জ অংশে তিন কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার ২৫৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

উটতলী ঘাট এলাকায় দেখা যায়, খেয়াঘাটে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পারাপার হচ্ছে দুই পাড়ের মানুষ। প্রতিবার পার হওয়ার জন্যে ইজারাদারকে ৫ টাকা ও নৌকার মাঝিকে ১০ টাকা করে দিতে হয়। এতে দুই উপজেলার সাধারণ মানুষকে ব্যবসা-বাণিজ্য, বাজারে যাতায়াতের সময় টাকা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

অলিপুর গ্রামের সিএনজি অটোরিকশা চালক বাবলু বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সেতুটির অপেক্ষায় রয়েছি। সেতুর কাজ শুরু হওয়ার ক’ মাস পরই কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। অপরাপর সিএনজি অটোরিকশা চালক হানিফ, আরিফ হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, শাহপরাণ জানান, আমরা এখন অলিপুর থেকে কৈয়ারপুল পর্যন্ত যাত্রী আনা-নেয়া করি। সেতুটি নির্মিত হলে যাত্রীও বাড়বে, আমাদের আয়ও বাড়বে। কিন্তু কবে নাগাদ এটি নির্মাণ হবে তা নিয়েই আমরা সন্দিহান।

স্থানীয় বাসিন্দা নেওয়াজ উদ্দিন, তপন দাস, নাছির উদ্দিনসহ অন্যান্য লোকজন জানান, স্থানীয়দের অভিযোগ, জমি অধিগ্রহণের কোনো কাগজপত্র তারা বুঝে পাননি। উল্টো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের বিপুল সম্পদের ক্ষতি করেছে। তারা আস্তে আস্তে তাদের মালামাল নিয়ে যাচ্ছে।

উটতলী খেয়াঘাটের মাঝি চন্দন বলেন, হঠাৎ করেই সেতুর কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। সেতু নির্মাণ হলে আমাদের নৌকা চালানো বন্ধ হয়ে গেলেও বিকল্প কাজ হয়ে যেতো। মোটকথা, সেতুটি আমাদের জন্যে আশীর্বাদ হয়ে আসতো।

ইউনিয়নের বাসিন্দা আওয়ামী লীগ নেতা খাজে আহমদ মজুমদার বলেন, উটতলী সেতুর জন্যে প্রখ্যাত সাংবাদিক জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমানের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমি যতোটুকু জানি, আইনি জটিলতায় সেতুর নির্মাণ কাজ থমকে রয়েছে। আশা করছি, দ্রুত এর সমাধানও হবে। ইতঃমধ্যেই জমি অধিগ্রহণের অর্থ জেলা প্রশাসকের কাছে এসেছে। খুব শীঘ্রই লোকজন জমি অধিগ্রহণের টাকা পেয়ে যাবে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আববার আহমেদ জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়মের কারণে এলজিইডি তাদের চুক্তি বাতিল করে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করলে আদালতে স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। আদালতের বিষয়টি নিষ্পত্তির পর নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়