শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) জীবন কানাই দাশ

গান্ধীজীর অহিংস নীতির আলোকে সমাজে ভালোবাসা, সম্প্রীতি এবং ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করতে আমরা অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥
গান্ধীজীর অহিংস নীতির আলোকে সমাজে ভালোবাসা, সম্প্রীতি এবং ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করতে আমরা অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি

মেজর জেনারেল (অবঃ) জীবন কানাই দাশ সেনাবাহিনীর চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে নিতান্তই অবসরযাপনে ব্যস্ত হননি, বরং জীবনকে কর্মমুখর রেখে গতিশীলতায় ঋদ্ধ করার নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেশপ্রেমের মৌল চেতনায় তিনি সবসময় নিজেকে রাঙ্গিয়ে রাখার চেষ্টা করেন এবং দেশের কল্যাণে জনস্বার্থে নিজের আত্মনিবেদনকে নিশ্চিত করতে ভীষণ মনোযোগী থাকেন। তিনি চাকুরি থেকে অবসোত্তরকালে বিশ্বখ্যাত সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্যার উইলিয়াম বেভারিজ ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ কান্ট্রি চীফ হিসেবে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকে নিজের সমাজমনস্কতাকে উজ্জ্বল প্রতিভাসে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন এবং নিজের স্বচ্ছ-উদার দৃষ্টিভঙ্গিকে জনসমক্ষে তুলে ধরার পাশাপাশি কিছু দক্ষতা ও পারঙ্গমতাকে সুস্পষ্ট করে সরকারসহ বোদ্ধাদেরও নজর কেড়েছেন। তাঁকে সরকার নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগে অবস্থিত বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সম্মানিত করেছে। তিনি বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বার্থহীন সেবার প্রতিষ্ঠান রোটারী ইন্টারন্যাশনালের আওতায় সহযোদ্ধাদের সমন্বয়ে গড়েছেন রোটারী ক্লাব অব মুক্ত স্বদেশ। সেজন্যে স্বদেশের তরে তাঁর মনপ্রাণকে নিবিষ্ট রাখেন সর্বদাই। শিক্ষকপুত্র হিসেবে আদর্শ লালনে ন্যূনতম কমতি নেই তাঁর। সমাজসেবার ক্ষেত্রে গতানুগতিকতা পরিহারের মানসিকতা তাঁর স্পষ্ট। তাইতো তিনি সাধারণ মানুষের জন্যে কিছু করতে রাজধানী থেকে কিংবা নোয়াখালী থেকে ছুটে যান অনেক দূরে, যাকে বলতেই হয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বসবাসস্থল তথা প্রত্যন্ত জনপদ। তিনি সময়-সুযোগের সমন্বয় করতে পারলেই হলো, তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা বিশেষ করে ব্যক্তিত্বগুণে অনেককেই করে ফেলেন একত্রিত। তিনি প্রায় প্রতিবছর নদীর চরে কিংবা বিচ্ছিন্ন অন্য কোনো জনপদে কষ্ট করে ছুটে যান সেবাদানকারীদের বহর নিয়ে। এইতো সেদিন গত ৮ মার্চ ২০২৪ শুক্রবার তিনি চাঁদপুর জেলার দুর্গম জনপদ হাইমচরের সাহেববাজারে যান অনেককে নিয়ে। তিনি ইতিহাসের এই দিনটিতে মহাত্মা গান্ধীর হাইমচর অবস্থানকে উদযাপন করতে বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করেন। গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সহযোগিতায় এই ক্যাম্পের আয়োজক ছিলো রোটারী ক্লাব অব মুক্ত স্বদেশ, রোটারী ক্লাব অব চাঁদপুর এবং ঢাকাস্থ আমরা চাঁদপুর ফাউন্ডেশন। স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহের সম্ভাব্য পৃষ্ঠপোষকতাও তিনি নিয়েছেন অকপটে। আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ ও শৃঙ্খলা রক্ষায় হামিদুল মিসবাহ ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রতন হাজীর অকৃপণ সহযোগিতায় এই ক্যাম্পে বিনামূল্যে ঔষধসহ ছয়জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সেবাগ্রহণে প্রায় চারশ' চরবাসীর কোনো বেগ পেতে হয়নি। তাই সকাল ১১টায় চাঁদপুর শহর থেকে আড়াই ঘণ্টার উত্তাল মেঘনা ও শাখা নদী পেরিয়ে শরিয়তপুর জেলার সীমানাঘেঁষা জনপদে পৌঁছে পড়ন্ত বিকেলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বিদায় নেয়া সম্ভব হয়েছে। এই মেডিকেল ক্যাম্প নিয়ে এটির মূল উদ্যোক্তা জনাব জীবন কানাই দাশ মুখোমুখি হন চাঁদপুর কণ্ঠের। নি¤েœ পত্রস্থ করা হলো প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে সাজানো সংক্ষিপ্ত সেই পর্ব----

চাঁদপুর কণ্ঠ : নোয়াখালী, ঢাকা ও চাঁদপুর থেকে সেবাদানকারীদের বহর নিয়ে হাইমচরের দুর্গম জনপদে যে মেডিকেল ক্যাম্প করলেন, তাতে সফলতার পরিমাণ কতোটুকু লেগেছে আপনার অনুভবে?

জীবন কানাই দাশ : পরিসংখ্যানের ভাষায় বললে আমরা নারী, শিশু, প্রবীণ ব্যক্তিসহ প্রায় ৪০০ জনের চিকিৎসা দিতে পেরেছি। তার চেয়ে বড় কথা হলো, আমরা ৬জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পেশাগত দক্ষতার ছোঁয়া দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি, উন্নতমানের ঔষধ প্রদান করেছি। অনেকের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হাসপাতাল তথা চিকিৎসকের সেবা গ্রহণে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়েছি। যোগাযোগ ভালো হলো আরো বেশি ব্যক্তিকে আমরা সেবা দিতে প্রস্তুত ছিলাম। চিকিৎসকবৃন্দ আন্তরিকভাবে তাদের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয় বিষয়ে তথ্য তথা উপদেশ দিতে প্রয়াস পেয়েছেন। আগেও আমরা এই হাইমচরে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প আয়োজন করেছি। ক্যাম্প থেকে ফিরে যাবার পথে তাাদের হাস্যোজ্জ্বল মুখ আমাদের অনেক সন্তুষ্টি দিয়েছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের এমন সেবাদান ছাড়াও আর কী কী কার্যক্রম রয়েছে, সেটা তুলে ধরবেন কি?

জীবন কানাই দাশ : গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট নোয়াখালী, ফেণী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা এবং চাঁদপুর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অনেক কর্মসূচি নিয়ে থাকে। তাদের বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, স্যানিটেশন, পানীয় জলের ব্যবস্থা, পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তিসহ বিভিন্ন রকমের কাউন্সেলিংও আমরা করে থাকি। গান্ধীজীর অহিংস নীতির আলোকে সমাজে ভালোবাসা, সম্প্রীতি এবং ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করতেও আমরা অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। অনেক পরিবারই সামাজিক সুরক্ষা লাভে শেষ আস্থা/ভরসার স্থল হিসেবে এই ট্রাস্টে যখন আসে আমরা তাতে প্রীত হয়ে যথাসাধ্য প্রয়াস চালিয়ে যাই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি টেকসই করা এবং সামগ্রিকভাবে শান্তি সুসংহত করার ক্ষেত্রে কতোটুকু কার্যকর বলে আপনি মনে করেন?

জীবন কানাই দাশ : মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতি বিশ্বে বহুল আলোচিত এবং আদৃত। যুগ যুগ ধরে তা প্রাসঙ্গিক থাকবে। তবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বা শান্তি বিনষ্টের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হলো ব্যক্তি, পারিবারিক, সম্প্রদায়গত এমনকি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বৃহত্তর স্বার্থকে উপেক্ষা করে হীন ক্ষুদ্র স্বার্থকে লালন এবং বিকশিত করা।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অবসরযাপন না কর্মমুখর জীবন উপভোগ--কোন্টাকে মানুষ বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত?

জীবন কানাই দাশ : মানুষের জীবনে পরিপূর্ণ অবসর কোনো অবস্থা আছে বলে আমি মনে করি না। জীবনের বিভিন্ন সময়ে কাজের পরিধি, গতি এবং ধরণ ভিন্ন হতে পারে। মৃত্যু অনিবার্য হলেও যেহেতু আমরা জানি না যে কবে এই ধরণী হতে বিদায় নেবো; তার জন্যে অপেক্ষা না করে আমৃত্যু নিজের এবং সমাজের জন্যে সাধ্যমতো কিছু করার চেষ্টা আমাদের সকলেই করা উচিত বলে আমি মনে করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অরাজনৈতিকভাবে সমাজসেবামূলক কাজ করার সুবিধা কেমন, আর অসুবিধা বা প্রতিবন্ধকতা কী?

জীবন কানাই দাশ : নিঃস্বার্থভাবে সমাজসেবামূলক কাজ করার উদ্যোগ নিলে তাতে সাফল্য আসবেই। উদ্যোগটার প্রচার আবশ্যকীয়, তবে তা যেন একমাত্র উদ্দেশ্য না হয়। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গও সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকেন। তবে সম্ভাব্য কাউকে উপেক্ষা না করে কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিস্থিতিতে ঠেলে না দিয়ে ‘সকলের তরে সকলে আমরা’ এই মনোভাব নিয়ে কাজ সম্পাদন করতে কোনো অসুবিধে হবার কথা নয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়