প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
আমার বাবা আমার মাকে আমার নানার বাড়িতে রেখে না বলে মুক্তিযুদ্ধে চলে যান। যুদ্ধের পুরোটা সময় আমার মা তার বাবার বাড়িতে ছিলেন। বাবা যুদ্ধে গেছেন সেটা আমার মামা আমার ছোট চাচা থেকে শুনে বাড়িতে গিয়ে বলার পরে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে আমার মা তার পরের দিনগুলো বাবার জন্যে অনেক কেঁদেছেন। আমার জন্ম তার বহু বছর পরে। যুদ্ধ শেষে বাবা জন্ডিসে আক্রান্ত হয় মৃত্যুপথযাত্রী হয়ে পড়েন। এ কথাগুলো আমার নানার পরিবার ও মায়ের কাছ থেকে শুনেছি। পরে বাবার মুখে যুদ্ধের বহু ঘটনা আর স্মৃতি শুনেছি, যাতে গা শিহরিত হয়েছে, আর মনে মনে অনেক ভয় পেয়েছি। এভাবেই বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশের জন্যে স্বাধীনতা এনেছেন, পতাকা এনেছেন। সেই মুক্তিযোদ্ধাগণের অধিকাংশ আজ বেঁচে নেই। আমার বাবার কথাই বলি, যুদ্ধে যদি বাবা শহিদ হতেন, তাহলে নিশ্চিত আমরা পৃথিবীর আলোর মুখ দেখতাম না, মা বিধবা হতেন। দেশ স্বাধীন হলে সরকারি সুবিধা নিবেন, সন্তানদের নির্দিষ্ট কোটায় চাকুরি দিবেন, ভাতা পাবেন, মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার পাবেন এমন চিন্তা করে বাবাসহ অন্য সকল মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে যাননি। অনেক কষ্ট পাই যখন দেখি মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা নিয়ে রিকশা চালকরা পর্যন্ত কটুক্তি করতে দ্বিধা করছে না। আরো কষ্ট পাই যখন দেখি কিছু বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা স্বাধীনতার সপক্ষে কথা বলেন না, অবস্থান নেন না। আমি বলতে চাই, প্রতিটি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা যেন আমৃত্যু স্বাধীনতার সপক্ষে থাকে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর উপলক্ষে চাঁদপুর কণ্ঠের বিশেষ আয়োজন ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভাবনা’ শিরোনামে আজকের পর্বে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সিরাজুল ইসলামের ছেলে কামরুজ্জামান টুটুল। তিনি তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন উপরোক্ত কথাগুলো। তার সেই সাক্ষাৎকারটি প্রশ্নোত্তর আকারে নি¤েœ তুলে ধরা হলো।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার বাবা (যিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা)-এর নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় কী? তিনি কোথায় যুদ্ধ করেছেন?
কামরুজ্জামান টুটুল : বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম (বর্তমানে মরহুম), পিতা ফজলুল রহমান (বর্তমানে মরহুম), গ্রাম সন্না, বাকিলা, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর। এমআইএস কমপ্লিটসহ গেজেট নং ১০৫৭, বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচিতি নং-০১১৩০০১৭১৮। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বশেষ প্রকাশিত সমন্বিত তালিকার সিরিয়াল নাম্বার ১৯২। বাবার কাছ থেকে শুনেছি তিনি বাকিলার ফুলছোঁয়া গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে ও রাজারগাঁওয়ের মুকুন্দসারের যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া তিনি ওই অঞ্চলে যুদ্ধের পুরো সময় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আপনার অনুভূতি কী?
কামরুজ্জামান টুটুল : আমার বাবা এই দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা আনতে পরিবার পরিজন ছেড়ে পুরো ৯ মাস যুদ্ধের মাঠে ছিলেন, বিজয়ী হয়েছেন, তার জন্যে আমি সবসময় গর্ব অনুভব করি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চারে আপনার করণীয় কী কী হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
কামরুজ্জামান টুটুল : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চারে আমার করণীয় হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে তথা স্বাধীনতার সপক্ষে সবসময় দৃঢ় অবস্থানে থাকা। আরো স্পষ্টভাবে বলি, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের আমৃত্যু স্বাধীনতার সপক্ষে থাকা বাঞ্ছনীয়।
কামরুজ্জামান টুটুল দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের হাজীগঞ্জ ব্যুরো ইনচার্জ এবং দৈনিক কালের কণ্ঠ ও জনপ্রিয় সংবাদভিত্তিক স্যাটেলাইট টেলিভিশন একাত্তর টিভির উপজেলা প্রতিনিধি। পারিবারিক ব্যবসা ছাড়াও তিনি সাংগঠনিকভাবে হাজীগঞ্জ উপজেলা সাংবাদিক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি, হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের নির্বাচিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছেন।