সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৯

আগুনের নদী

মিজানুর রহমান রানা
আগুনের নদী

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

ছয়.

সত্যিই মানুষের জীবনটা এক বৈচিত্র্যময়। এই জনমে তাই কতো রকম ঘটনাই হয়। কখনো স্বাদের কখনো আবার বিষাদের। হাসপাতালে ইরফানের বেডের পাশে বসে এই কথাগুলোই ভাবছে অধরা। সে এবার পেছন ফিরে তাকালো। তারপর দেখলো অনন্যাকে। অনন্যা তার জীবনের যে ঘাত-সংঘাত পেরিয়েছে, অধরা কিন্তু তার এক অংশও দেখেনিএবং এসব বিপদাপদ অতিক্রম করেনি।

অনন্যা তাদের ক্লাসের ফার্স্টগার্ল ছিলো। মেয়েটি বেশ সুন্দরী ও বুদ্ধিমতি ছিলো। কিন্তু আজ প্রকৃতির গ্যাঁড়াকলে সে একজন খুনি। মৃত্যুর প্রহর গুণছে কানাডায় বসে। হয়তো তার ফাঁসিও হয়ে যেতে পারে।

ইরফান চোখ খুললো। তারপর অধরাকে বিছানার পাশে বসে ভাবতে দেখে পরিবেশটাকে শান্ত করার জন্যে উচ্চারণ করলো, ‘হাই অধরা। কেমন আছো তুমি?’

অধরা ইরফানের কথায় ভাবনার জাল ছিন্ন করে বাস্তবতায় ফিরে এলো। ইরফানকে কথা বলতে দেখে তার অন্তরে জলের জোয়ার বইলো।

জীবনে এই প্রথম সে কারো প্রতি একটা গভীর টান অনুভব করলো। যা কখনও আগে ঘটেনি। অধরা ভাবলো, তাহলে একেই বলে প্রেম?

‘কী ভাবছো অধরা। আমার হাতটা ধরো, খুব ব্যথা হচ্ছে।’

অধরা ইরফানের স্যালাইনযুক্ত হাতের আঙ্গুলগুলো ধরে বললো, ‘শান্ত থাকো ইরফান। তোমার হাতে সার্জারি করে গুলিটা বের করা হয়েছে। তোমাকে কমপক্ষে ১৪ দিন বিশ্রামে থাকতে হবে। চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। তুমি যখন হসপিটাল থেকে রিলিজ পাবে, তখন আমার বাসায় তোমাকে নিয়ে যাবো। আমার বাবা-মায়ের সাথে কথা হয়েছে। আমার জীবনে তোমাকে অনেক দরকার ইরফান। তোমাকে অনেক দরকার।’

এই বলে হু হু করে ইরফানের হাতের উপর মাথা রেখে অঝোরে কাঁদতে লাগলো অধরা। তার চোখের বিন্দু বিন্দু জল ইরফানের হাতের ওপর টপটপ করে পড়তে লাগলো।

ধীরে ধীরে বলতে লাগলো ইরফান, ‘শোনো মেয়ে, তুমি একজন চিকিৎসক। তোমাকে কান্না মানায় না। তুমি কাঁদলে তোমার রোগী আরো নার্ভাস হয়ে যাবে। তুমি কি বোখরাত, ইবনে সিনার বিষয়ে জানো না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বোখরাত বা হিপোক্রেটস কীভাবে তার রোগীদেরকে সহানুভূতিশীল হয়ে ধৈর্য সহকারে চিকিৎসা দিতেন। আর ইবনে সিনা তো তার সারাটা জীবনই জীবনযুদ্ধের পাশাপাশি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চিকিৎসা শাস্ত্রের আদিগন্ত খুলে দিয়ে গিয়েছেন মানুষের কল্যাণে। তোমাকে তেমনি হতে হবে। চিকিৎসা শাস্ত্রে তোমাকে ধীরে ধীরে তাদের মতো ভিন্ন চিন্তা করতে হবে। মেধা খাটাতে হবে। এই মেধা খাটিয়েই নিত্য নতুন বিষয়গুলো আবিষ্কার করে যেতে হবে মানুষের কল্যাণে। কারণ চিকিৎসকের একমাত্র কাজই হলো মানুষের কল্যাণ। আর দুনিয়ার সব কাহিনী মস্তিষ্কের বাইরে রাখতে হবে।’

ইরফানের কথাগুলো শুনে অধরা তার চোখের জল মুছলো। তারপর সে এক ভিন্ন ইরফানকে আবিষ্কার করলো। এমন সময় ইরফানে ফোনে একটা কল এলো। অধরা কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো, ‘এএসপি সাহেব। তুষার আহমেদের খুনির সন্ধান পাওয়া গেছে।’

অবাক হলো অধরা। ইরফান তাহলে এএসপি? সে তো তাকে তার সত্যিকার পরিচয় বলেনি। এ সময় ইরফান অধরাকে ইশারা করলো তাকে ফোনটা দেওয়ার জন্যে। অধরা ইরফানকে ফোনটা দিলো।

‘হ্যাঁ, বলো।’

‘স্যার। তুষার আহমেদের খুনির সন্ধান পাওয়া গেছে। তাকে হত্যা করেছে তারই আপন চাচা ইলিয়াস মণ্ডল। সে পালিয়ে আছে। শুনেছি সে নাকি কানাডা তার মেয়ের স্বামীর কাছে চলে গেছে।’

‘আচ্ছা। ঠিক আছে। আমি সুস্থ হয়ে নেই। তারপর তোমাকে কল করবো।’

‘স্যার কী হয়েছে আপনার?’

‘তেমন কিছু না। সম্ভবত গ্যাং লিডার এর লোকেরা আমাকে স্নাইপার রাইফেল দিয়ে গুলি করেছে। হাতে লেগেছে। সার্জারি করে গুলি বের করা হয়েছে। কিছুদিন রেস্টে থাকতে হবে।’

‘স্যার অফিসে জানালেন না কেনো?’

‘আমি চাই আমি কী কাজে এসেছি তা মোবাইলে আড়ি পেতে কেউ জানতে যেনো না পারে।’

‘তবুও তো জেনে গেছে স্যার।’

‘জানুক। কিন্তু আমি নিজ থেকে জানাতে চাই না। সতর্ক থাকতে হবে। কারণ খুনিদের টার্গেটই থাকে আমাদের উপরে। যাই হোক, তোমরা চিন্তা করো না। আমি সুস্থ হয়ে যাবো ইনশাল্লাহ।’

‘ঠিক আছে স্যার, সাবধানে চলাফেরা করবেন।’

‘ধন্যবাদ।’

ইরফান কথা শেষ করতেই অধরা প্রশ্ন করলো, ‘লোকটা এএসপি বললো কাকে?’

‘বলবো তোমাকে এক সময়। তবে এখন নয়।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি আগে সুস্থ হও। তারপর সব জানা যাবে।’ অধরা তাকে সান্ত্বনা দিলো। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়