প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:২১
জুলাই আন্দোলনে আহত হয়ে এখনো বিছানায়
বুলেটে বিঁধেছে নাঈমের স্বপ্ন
একটি বুলেট দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নকে ধূসর করে তুলেছে। জুলাই আন্দোলনে বিজিবির ছোড়া বুলেটে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা এখন নাঈমকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। অথচ ইচ্ছে ছিলো দিনমজুর বাবার দুঃখ ঘোচাতে এবং বড়ো ভাইয়ের পাশে দাঁড়াতে কিছু একটা করা। সেই পথে অনেকটা এগিয়ে গেলেও বুলেটের আঘাতে পায়ের হাড় ভেঙ্গে এখনো অনেকটা পঙ্গুত্বের জীবনযাপন করছেন। বলছিলাম জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর মোল্লা বাড়ির দিনমজুর আলমগীর হোসেনের ছেলে ও নারায়ণগঞ্জ তুলারাম সরকারি ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম ইসলামের কথা।
গত ১৯ জুলাই ২০২৪ শুক্রবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিতে গেলে ঢাকার বনশ্রীতে একটি বুলেট বাঁ-পায়ে লেগে বেরিয়ে যায়। এতে করে বাঁ-পায়ের হাড়টি ভেঙ্গে যায়।
জানা গেছে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে গ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জে খালার বাসায় গিয়ে উঠেন নাঈম ইসলাম। ভর্তি হন তুলারাম সরকারি ডিগ্রি কলেজে। ওই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় নিজের খরচ মেটাতে স্থানীয় একটি ফার্মেসীতে চাকুরি নেন। ভবিষ্যতে স্টুডেন্ট ভিসায় কোরিয়া যাবার মনোবাসনা নিয়ে কোরিয়ান ভাষা এবং কোর্সে ভর্তি হন। কোর্সও শেষ করেন। এরই মধ্যে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
শিক্ষার্থী নাঈম ইসলাম বলেন, সরকারি তুলারাম কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রায়ই যোগ দিতাম। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে ঢাকার বনশ্রীতে আন্দোলনরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হই। তখন সেখানে আমার বন্ধুরা ছিলো। তারা আমাকে পাশের হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর পঙ্গু হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পড়ালেখার সাথে সাথে আমি পাশাপাশি কোরিয়ান ল্যাগুয়েজ শিখছিলাম। যাতে স্টুডেন্ট ভিসায় বা অন্য কোনো ভিসায় কোরিয়া যাওয়া যায়। এখন তো আর সম্ভব হচ্ছে না। কারণ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সম্ভব হবে না যাওয়া। আমার সুস্থ হতে অনেকদিন সময় লাগবে। আর পরিপূর্ণ সুস্থ হই কিনা তা সময়ই ভাল বলবে।
তিনি জানান, ৫ আগস্টের আগে ১৯ জুলাই থেকে তাকে প্রাইভেট বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করানো বাবদ ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা ঋণ করেছে পরিবার। বর্তমানে সিএমএইচের অধীন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আহত নাঈমের ভাই মোশারফ হোসেন জানান, নাঈম বর্তমানে সিএমএইচে চিকিৎসাধীন থাকলেও ৫ আগস্টের আগে ১৯ জুলাই থেকে আমরা তাকে প্রাইভেটে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। সেখানে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। তারপর সরকার ঘোষণা দিলে এখন সরকারিভাবে তার চিকিৎসা খরচ চলছে। কিন্তু তার আসা-যাওয়া, তার খাওয়া খরচ এগুলো সম্পূর্ণ নিজেদেরই বহন করতে হয়। এগুলো ঋণ করে অনেকটা আমাদেরই চালাতে হয়। আমাদের একটাই আবেদন, আমার ভাই যাতে স্বাবলম্বী একটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে-- এই সহায়তা যাতে ওর পাশে জুলাই ফাউন্ডেশন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করে।
স্থানীয় এলাকাবাসী রাকিব হাসান জানান, নাঈমের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ নাঈম যে পরিমাণ অসুস্থ, তাতে আরো দুটা অস্ত্রোপাচার করতে হবে। যে অস্ত্রোপচার করার পরে আরো এক বছরেও হাঁটতে পারে কিনা সন্দেহ আছে। এই মুহূর্তে নাঈমের পাশে দেশবাসী সকলেরই থাকা উচিত।
উল্লেখ্য, নাঈম তার বাবা দিনমজুর আলমগীর হোসেনের দ্বিতীয় পুত্র। তার বড়ো ভাইয়ের আয়ের উপরই নির্ভরশীল পুরো পরিবার। তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরি করছেন।