শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৫, ২২:৫১

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে বিয়ের কারণে এসএসসিতে অনুপস্থিতির হার বেশি , ৯৭ শতাংশই ছাত্রী

অনলাইন ডেস্ক
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে বিয়ের কারণে এসএসসিতে অনুপস্থিতির হার বেশি , ৯৭ শতাংশই ছাত্রী

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ৬ হাজার ৩৮৯ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে খসড়া প্রতিবেদনে ১ হাজার ২০৩ জনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছিল। পরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির সময় ১ হাজার ৩৫০ জন অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর তথ্য পাওয়া যায়, যার ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। তথ্য পাওয়া এসব পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৪১ শতাংশের (৫৪৯) বিয়ে হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৯৭ শতাংশই ছাত্রী। ৩ শতাংশ ছেলে পরীক্ষার্থী বিয়ে করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুপস্থিতির প্রধান কারণ বাল্যবিবাহ।

আইনানুযায়ী, বাংলাদেশে মেয়েদের ১৮ বছর ও ছেলেদের ২১ বছরের নিচে বিয়ে হলে সেটিকে বাল্যবিবাহ বলা হয়। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বয়স সাধারণত ১৮ বছরের নিচে হয়। অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে।

মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার একটি বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছিল ৫২ জন পরীক্ষার্থী, কিন্তু পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪৮ জন। বিদ্যালয়টির একজন শিক্ষক প্রথম আলোকে জানান, বাকি চারজনের পরীক্ষার আগে বিয়ে হয়েছে। এই তথ্য তাঁরা জানতে পারেন, যখন দেখেন পরীক্ষার আগমুহূর্তেও ওই পরীক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র নিতে আসছে না। পরে জানতে পারেন, কোনো কোনো ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে পরীক্ষার কয়েক দিন আগে। তখন বুঝিয়েও আর লাভ হয়নি।

এবারের এসএসসি পরীক্ষায় মানিকগঞ্জ জেলায় অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যতজনের তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ বিয়ের কারণে অনুপস্থিত ছিল বলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন ১৩টি জেলার মধ্যে এই হার সবচেয়ে বেশি মানিকগঞ্জে, এর পরেই আছে মাদারীপুর। এই জেলায় যতজন অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে ৫৪ শতাংশের বাল্যবিবাহ হয়েছে। ঢাকা ছাড়া অন্যান্য জেলায় এই হার ৩৯ শতাংশ থেকে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত। গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় নিজেদের বোর্ডের অধীন পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। গত বুধবার প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে দিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রতিবছরই অনেক পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকে, কিন্তু কারণ জানা হয় না। এর মধ্যে এবার পরীক্ষার ফরম পূরণ করে অংশ না নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল অন্যবারের তুলনায় বেশি। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এই পরীক্ষার প্রথম দিনেই অনুপস্থিত ছিল ২৬ হাজার ৯২৮ পরীক্ষার্থী। অথচ গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রথম দিনে অনুপস্থিত ছিল ১৯ হাজার ৩৫৯ পরীক্ষার্থী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের বোর্ডের অধীন পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয় ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এ জন্য অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের তথ্য নির্ধারিত গুগল ফরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়।

কোন জেলায় কত বিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনুপস্থিত মোট পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যে ১ হাজার ৩৫০ জনের তথ্য পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ৬৯ জন মানিকগঞ্জ জেলার। তাদের মধ্যে ৪৫ জন বিয়ের কারণে পরীক্ষার্থীয় অনুপস্থিত ছিল।

বিয়ের কারণে পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকা মানিকগঞ্জ জেলার এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তিনি বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আর তাঁর মেয়ের বয়স ১৯ বছর হয়ে গেছে। এখন বিয়ের পর মেয়ে পড়াশোনা করবেন কি না, সেটি তাঁর স্বামী ঠিক করবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তথ্য পাওয়া অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মাদারীপুরে ৯২ জনের মধ্যে ৫০ জন, ঢাকায় ৩৪১ জনের মধ্যে ৯০ জন, গাজীপুরে ১০৮ জনের মধ্যে ৫৩ জন, নরিসংদীতে ১১০ জনের মধ্যে ৫২ জন, নারায়ণগঞ্জে ১০৯ জনের মধ্যে ৪৭ জন, ফরিদপুরে ১০১ জনের মধ্যে ৩৭ জন, শরীয়তপুরে ৮২ জনের মধ্যে ৩৬ জন, গোপালগঞ্জে ৮৪ জনের মধ্যে ৩৫, কিশোরগঞ্জে ৮১ জনের মধ্যে ৩৫, টাঙ্গাইলে ৭৯ জনের মধ্যে ৩০, রাজবাড়ীতে ৪৫ জনের মধ্যে ২০ এবং মুন্সিগঞ্জে ৪৯ জনের মধ্যে ১৯ পরীক্ষার্থী বিয়ে হওয়ার কারণে এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। এ ছাড়া বাকি পরীক্ষার্থীরা অসুস্থতা, ভালো প্রস্তুতি না থাকা, পারিবারিক অসচ্ছলতা, বিদেশে চলে যাওয়া, মৃত্যু, মামলাসহ বিভিন্ন কারণে পরীক্ষা দেয়নি।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেও তাদের মধ্যে একটি অংশ পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকতেই পারে, কিন্তু অনুপস্থিতির কারণগুলোর মধ্যে এমন কিছু বিষয় দেখা যাচ্ছে, যা নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধান ও উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন আছে। যেমন বাল্যবিবাহের কারণে ৪১ শতাংশের অনুপস্থিতি এবং ২২ জন মেয়ে শিক্ষার্থীর গর্ভধারণের কারণে অনুপস্থিতি নিঃসন্দেহে একটি উদ্বেগের বিষয়। আবার প্রায় ৭ শতাংশের মতো পরীক্ষার্থী পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ১০ বছর পড়াশোনার পর ফরম পূরণ করেও আর্থিক সংকটে পরীক্ষা দিতে না পারা দুর্ভাগ্যজনক। সমাজ ও রাষ্ট্রের কার্যকর সহায়তাব্যবস্থা থাকলে এদের ভাগ্য ভিন্ন রকম হতে পারত।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড বলছে, অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডসহ এই কার্যক্রমকে নিয়মিতভাবে পরিচালনা করা গেলে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণ ও করণীয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে তা ভূমিকা রাখবে। সূত্র: প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়