প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
হাইমচর উপজেলার গন্ডামারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে নতুন কমিটির তফসিলসহ সভাপতির চেকে প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরে বিভিন্ন ভাউচার মিল করে টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মোঃ খোরশেদ আলম পাটওয়ারী অনিয়মের তদন্ত সাপেক্ষে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন-২০২৩ বাতিল করা প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়া ওই অভিযোগপত্রের অনুলিপি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর প্রদান করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য মোঃ ফারুক হাওলাদার বলেন, বিগত ২৮ বছর আমি কমিটির দায়িত্ব পালন করে আসছি। বর্তমানে প্রধান শিক্ষক যেকোনো মিটিং তার ক্ষমতার বলে করে আসছেন। আমাদেরকে কোনো দিন মিটিংয়ে ডাকেন না। কোনো কাজেই আমাদের সাথে কোনো পরামর্শ করেন না। বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ তসলিম শেখ দেশের বাইরে আছেন, কিন্তু তার চেক ও ভাউচারে কিভাবে স্বাক্ষর হয় তা আমরা জানি না। শুনতেছি কিছুদিন আগে বর্তমান সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক নিজেদের একান্ত সিদ্ধান্তে নতুন কমিটির তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল ঘোষণার পর প্রতিষ্ঠান প্রধান তার স্বার্থে একটি পকেট কমিটি করার জন্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছেন। আমরা চাই এই ম্যানেজিং কমিটিতে প্রবাসী সভাপতি না রেখে, বিদ্যালয়ের স্বার্থে এলাকার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে সভাপতি করা হোক। এ বিষয়ে আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদককেও জানাই। এই কমিটি নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যেও কয়েকটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। তাই আমরা এলাকার মানুষ সবাই চাই, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মানোন্নয়নের জন্যে সঠিকভাবে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হোক।
ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য আবুল হোসেন বলেন, আমরা পূর্বের যে কমিটিতে ছিলাম, তাতে সঠিকভাবে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করেছি। কোনো রকম দুর্নীতি হয় নি। বর্তমানে আমরা শুনতে পাচ্ছি, যারা কমিটির দায়িত্বে আছেন তাদের বেশি সংখ্যকের নামে অভিযোগ রয়েছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফয়সাল আহম্মেদ পাটওয়ারী বলেন, কমিটি হচ্ছে বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে করা এবং এলাকার সকলের সাথে আলাপ-আলোচনা করে করা। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হচ্ছেন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। আমাদের বিদ্যালয়ের সভাপতি যেহেতু বিদেশ থাকেন, তাই এলাকার সকলে মিলে একটা ভালো কমিটি উপহার দেয়ার আহ্বান জানাই।
এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিল করে সবকিছু করে ফেলেন। মিটিং না করেও তারা রেজুলেশন জালিয়াতি করে ভাউচার মিল করে টাকা উত্তোলন করেন।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বর্তমানে কমিটির অনিয়ম নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে যে গুঞ্জন রয়েছে তা সঠিক নয়। আমাদের সকল শিক্ষকের মধ্যে ঐক্য রয়েছে। তবে একজন শিক্ষক মোঃ জাকির হোসেন বিগত ২৫ দিন প্রতিষ্ঠানে আসে নাই। কোনো ছুটিও কাটান নি। তার জন্য ঐ বিষয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমরা তাকে শোকজ করেছি। ম্যানেজিং কমিটির জন্যে আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে ৩ জন কমিটির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান। আমরা সবাইকে নিয়ে বসে তাদের থেকে ১ জনকে দেয়ার চেষ্টা করবো।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মোঃ সাখাওয়াত হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিদ্যালয়ের সকল কিছু নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনা করে থাকি। আমার বিদ্যালয়ের নামে যে অভিযোগ উঠছে, সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি নিয়ম অনুসারে তফসিল ঘোষণা করছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মোস্তফা কামালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ অভিযোগটি আমাদের জেলা শিক্ষা অফিস বরাবর করা হয়েছিল। আমি এই অভিযোগের অনুলিপিটি পেয়েছি। যেহেতু আমি এ উপজেলায় দায়িত্বরত রয়েছি, সেহেতু আমি বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো।