মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

মালামাল আত্মসাতের অভিযোগ প্রধান শিক্ষিকার স্বামীর বিরুদ্ধে
ফরিদগঞ্জ ব্যুরো ॥

কোনো টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই সরকারি বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার স্বামী ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের এসএমসির একজন সদস্য থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তড়িঘড়ি করে রাতের আঁধারে ওই মালামালের কিছু অংশ বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা ফেলে রেখে যায়। যদিও প্রধান শিক্ষিকা ও তার স্বামীকে বাঁচাতে নূতন সীমানা প্রাচীর নির্মাণকারী ঠিকাদার ঘটনার দায় নিজের কাঁধে নেয়ার চেষ্টা করছেন। সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ইউএনও তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের আওতাধীন কালিরবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

জানা যায়, সম্প্রতি কালিরবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন সীমানা প্রাচীরের পাশপাশি নূতন করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শুরু করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। কিন্তু বিদ্যালয়টির পূর্বের সীমানা প্রাচীর ও লোহার ফটক নিয়মানুযায়ী টেন্ডারের মাধ্যমে ভেঙ্গে ফেলার কথা থাকলেও ১৮ নভেম্বর শনিবার হঠাৎ করেই কোনো রকম টেন্ডার ছাড়াই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা (ভারপ্রাপ্ত) কামরুন নাহার রুবির স্বামী ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাইনুল ইসলাম রাছেল সেটি ভেঙ্গে নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় নিয়ে রাখে। বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি জানতে পেরে বিদ্যালয়ের এসএমসির সদস্য ও ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর পাটওয়ারী শনিবার ১৮ নভেম্বর ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

থানায় লিখিত অভিযোগের সূত্র ধরে রোববার ১৯ নভেম্বর সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পুরাতন সীমানা প্রাচীরের ভাঙ্গা কিছু অংশ ও লোহার ফটক বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় এবং কিছু অংশ প্রধান শিক্ষিকা (ভারপ্রাপ্ত) কামরুন নাহার রুবির স্বামী ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাইনুল ইসলাম রাছেলের বাড়ির আঙ্গিনায় রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, থানায় লিখিত অভিযোগ করার পর পুলিশ আসলে তড়িঘড়ি করে আত্মসাৎ করা মালামালের কিছু অংশ শনিবার রাতে ফেলে রেখে যায়।

স্কুলের পুরাতন সীমানা প্রাচীর বিক্রি ও ভাঙ্গার বিষয়ে কোনো টেন্ডার প্রক্রিয়া না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা (ভারপ্রাপ্ত) কামরুন্নাহার রুবি জানান, দেয়াল কারা ভেঙ্গেছে আমি বলতে পারবো না। ‘আপনার স্বামীর নবনির্মিত বাড়িতে দেয়ালের মালামাল পাওয়া গেছে’ এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঠিকাদারের লোকজন তাদের সুবিধার্থে সেখানে মালামাল রেখেছে হয়তো।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সোহেল বলেন, স্কুলের দেয়াল ভেঙ্গে মালামাল নেয়ার বিষয়ে অভিযোগের পর শনিবার রাতে থানার এসআই মাহফুজুল হকের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। রাতেই আত্মসাৎকারী চক্রটি মালামালের কিছু অংশ স্কুলের পাশে এনে ফেলে রেখে যায়। সরকারের নিয়ম বহির্ভূত কাজে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবে বলে আশা করি।

এদিকে নতুন দেয়াল নির্মাণ কাজের ঠিকাদারের সহকারী কামরুল ইসলাম দেয়াল ভাঙ্গার দায় নিজের কাঁধে নিয়ে বলেন, কাজের সুবিধার্থে মালামাল অন্যত্র রাখা হয়েছে।

ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় কালিরবাজার কলেজের সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম পাটওয়ারী বলেন, স্কুলের দেয়াল ভাঙ্গার বিষয়টি প্রথমে আমি অবগত ছিলাম না। পরে জানতে পেরেছি, নতুন দেয়ালটি নির্মাণের সুবিধার্থে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন পুরাতন দেয়ালটি ভেঙ্গেছে। যেহেতু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দেয়ালটি ভাঙ্গা হয়নি, প্রধান শিক্ষিকাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমি বলেছি।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও অভিযুক্ত মাইনুল ইসলাম রাছেল বক্তব্য দিতে রাজি হননি। থানায় অভিযোগকারী জাহাঙ্গীর পাটওয়ারী বলেন, সরকারি নিয়ম না মেনে দেয়াল ভেঙ্গে মালামাল আত্মসাতের চেষ্টা করেন প্রধান শিক্ষিকা (ভারপ্রাপ্ত) কামরুন নাহার রুবির স্বামী ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাইনুল ইসলাম রাছেল। তাই এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি।

তবে মাইনুল ইসলাম রাছেলের শ্বশুর সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, মাইনুল ইসলাম রাছেল প্রতিহিংসার শিকার। তাকে অযথা হয়রানি করা হচ্ছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জহিরুল ইসলাম বলেন, দেয়াল ভাঙ্গার বিষয়ে কোনো টেন্ডার প্রক্রিয়া হয়নি। দেয়াল ভাঙ্গার বিষয়টি ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি, তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সাইদুল ইসলাম বলেন, উপ-পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুল হককে তদন্তভার প্রদান করা হয়েছে। শনিবার রাতেই তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌলি মন্ডল রোববার দুপুরে বলেন, সরকারের নিয়মবহির্ভূত কোনো ঘটনা হলে, তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়