মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

স্বামী স্বরূপানন্দের স্মৃতি রক্ষায় চাঁদপুরের সচেতন মহল ঐক্যবদ্ধ রয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার ॥

অখণ্ড আদর্শ অনুসারীদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ সম্মিলিত অখণ্ড সংগঠনের সহযোগিতায় (বাসাস) চাঁদপুর শহরের পুরাণ আদালতপাড়াস্থ অযাচক আশ্রমে ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া অখণ্ড সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুদিনব্যাপী সম্মেলনের গতকাল ১৭ নভেম্বর শুক্রবার ছিলো দ্বিতীয় দিন। এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় আশ্রম প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধন করেন চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক রোটারিয়ান কাজী শাহাদাত। তিনি ভ্রাতৃ দ্বিতীয়ার তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, প্রতি বছরই অযাচক আশ্রম এমন সুন্দর আয়োজনটি করে থাকেন। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে নিজেদের মাঝে একটি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে, যা সাংগঠনিকভাবে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করে। আশ্রম কর্তৃপক্ষের ভ্রাতৃত্ব বন্ধন বা নিজেদের মধ্যে কতটুকু সুসস্পর্ক রয়েছে যা আজকের উপস্থিতিই স্মরণ করিয়ে দেয়। আজ প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যেভাবে স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের ভক্ত অনুরাগী বা অখণ্ড সংগঠনের কর্মকর্তাগণ এসেছেন তা সত্যিকার অর্থেই প্রশংসনীয়। আমরা চাঁদপুরবাসী এই পবিত্র স্থানকে নিয়ে গর্ব করি। এই স্থানে আন্তর্জাতিক মানের ধ্যান মন্দির গড়ে উঠছে। যা আমাদের সকলের জন্যই আনন্দের। তিনি মন্দিরের উন্নয়নসহ সকল কাজের সফলতা কামনা করেন।

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর হরিবোলা সমিতির সভাপতি অজয় কুমার ভৌমিক। তিনি সকলকে ভ্রাতৃ দ্বিতীয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মন্দির হলো পবিত্র স্থান, নিজেকে সংশোধন করার জায়গা, এখানে মানুষ শান্তি ও স্বস্তি লাভের আশায় আসেন এবং ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করেন। মন্দির বা কোনো পবিত্র স্থানের নেতৃত্ব পেতে হলে মামলা মোকদ্দমার প্রয়োজন হয় না, যা করতে হয় তা হলো মন্দিরের প্রতি করণীয় কর্তব্য এবং সততার সাথে দায়িত্ব পালন। যদি তা করা যায় তাহলে এমনি এমনিই দায়িত্ব লাভ করা যায়। তিনি চাঁদপুরে অযাচক আশ্রম গড়ে ওঠার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, স্বরূপানন্দ ভক্তদের অনেক শ্রম ও কষ্টের বিনিময়ে আজ আশ্রমের এই ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে আশ্রমের প্রয়াত অধ্যক্ষ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারীর কথা না বললেই নয়। তার যে কী পরিমাণ কষ্ট ছিলো তা চাঁদপুরবাসী জানেন। আজ শুনেতে পাচ্ছি আশ্রম নিয়ে কতিপয় মহল মামলা মোকদ্দমা করছেন, যা রীতিমত অবাক করার বিষয়। তিনি রহিমপুর আশ্রমের অধ্যক্ষের নাম উচ্চারণ করে বলেন, একজন সজ্জন ও ভালো মানুষ হিসেবে আমরা উনাকে চিনতাম ও জানতাম। তার মতো লোক যদি নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মামলা-মোকদ্দমার সাথে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে এর চেয়ে আর কোনো দুঃখ থাকতে পারে না। আমার অনুরোধ থাকবে, আর যাই হোক না কেনো, মন্দিরের মত পবিত্র স্থানকে কেন্দ্র করে কেউ মিথ্যা মামলায় নিজেদেরকে জড়াবেন না।

ভ্রাতৃ সম্মেলনে অন্যান্য বক্তারা বলেন, অযাচক আশ্রম চাঁদপুরের গর্ব, এই পবিত্র স্থানে জন্ম নিয়েছেন অখণ্ড মণ্ডলেশ্বর শ্রী শ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব। স্বামী স্বরূপানন্দের স্মৃতি রক্ষায় চাঁদপুরের সচেতন মহল ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। তাই মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমা করে কেউ নিজেদেরকে সমাজের চোখে হেয়-প্রতিপন্ন করবেন না। আজ এই স্থানে যে দৃষ্টিনন্দন আন্তজার্তিক মানের ধ্যান মন্দির নির্মিত হচ্ছে, তাতে স্বরূপানন্দ পরমহংস দেবের আশীর্বাদ রয়েছে বলেই আমরা মনে করি। বক্তাগণ সকল ভক্ত হৃদয়ের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, মিথ্যার আশ্রয়ে না থেকে আসুন সকলে মিলে ভালো কাজের সাথে সম্পৃক্ত হই এবং স্বরূপানন্দের পুণ্য জন্মস্থানের উন্নয়নে সহযোগিতা করি। অতিথিদের মাঝে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ রনজিত রায় চৌধুরী (পিপি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক উত্তম কুমার রায়, বাংলাদেশ সম্মিলিত অখণ্ড সংগঠনের সমন্বয়কারী ও সহ-সভাপতি তাপস কান্তি সরকার, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তপন সরকার, চাঁদপুর কণ্ঠের চীফ রিপোর্টার বিমল চৌধুরী ও বাংলাদেশ সম্মিলিত অখণ্ড সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক সুধাংশু সূত্রধর।

পুণ্য জন্মস্থান চাঁদপুর অযাচক আশ্রমের সহ-সভাপতি দুলাল চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে এবং অযাচক আশ্রম বোর্ড অব ট্রাস্টের সদস্য সচিব মৃনাল কান্তি দাসের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সম্মিলিত অখণ্ড সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার দে। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বরূপানন্দ সংগীত পরিবেশন করেন অখণ্ড সংগঠনের গুরু ভ্রাতা মানিক রায় এবং অখণ্ড সংহিতা পাঠ করেন গুরু ভ্রাতা অরুণ কুমার ঘোষ (হরিওঁ)। এই দিন সকাল সাড়ে ৮টায় ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া অখণ্ড সম্মেলন উপলক্ষে জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষ সমবেত উপসনা ছাড়াও দুপুরে হরিওঁ কীর্তন ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে এদিন আমন্ত্রিত অতিথিসহ স্বরূপানন্দের ভক্ত, শিষ্য ও অনুরাগীদের ব্যাপক উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে। ভ্রাতৃ সম্মেলনের প্রথম দিন অর্থাৎ ১৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পুণ্য জন্মস্থান চাঁদপুর অযাচক আশ্রমে নিয়মিত সন্ধ্যাকালীন উপাসনা শেষে অনুষ্ঠিত হয় সাংগঠনিক অধিবেশন। সমবেত প্রেমধ্বনির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়।

চাঁদপুর অযাচক আশ্রম পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি অরুণ কুমার ঘোষের সভাপতিত্বে সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে অতিথিদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা করেন বাসাসের উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক উত্তম কুমার রায়, সদস্য নির্মল কুমার ভৌমিক, সহ-সভাপতি দুলাল চন্দ্র দাস, তাপস কান্তি সরকার ও সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার দে। আরো আলোচনা করেন ফেনী জেলার গুরু ভ্রাতা নিবারন কুমার দাস, ঢাকা জেলার রত্ন বিজয় সাহা, মুন্সীগঞ্জ জেলার বলরাম ঘোষ, শ্রী মতি ইলা ভৌমিক, পলাশ কুমার দাস, চাঁদপুর অযাচক আশ্রম বোর্ড অব ট্রাস্টের সদস্য মনতোষ সাহা, সঞ্জয় ভৌমিক, মৃদুল কান্তি দাস, প্রণব সাহা প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অখণ্ড সংহিতা থেকে নির্বাচিত অংশ পাঠ করেন বাসঅসের প্রচার ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস। ব্যাপক আলোচনা শেষে শান্তি বাচনের মাধ্যমে ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া সম্মেলনের প্রথম পর্বের সাংগঠনিক অধিবেশনের মুলতবি ঘোষণা করেন সভার সভাপতি অরুণ কুমার ঘোষ। পরদিন তা আবার শুরু হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়