বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

হাজীগঞ্জে শত কোটি টাকার অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবসা
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

হাজীগঞ্জে বর্ষা মৌসুমে প্রায় শত কোটি টাকার অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবসা রমরমা হয়ে উঠে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে কারেন্ট জালের ব্যবসা প্রকাশ্যে চলে আসে। হাজীগঞ্জ বাজারস্থ বণিক পট্টি তথা বাইন্না পট্টির অধিকাংশ জাল ব্যবসায়ী অবৈধ কারেন্ট জাল ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত এবং অনেকটাই বেপরোয়া। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার জেলা কোস্টগার্ড মাত্র ৪টি গুদামে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১২ কোটি টাকার কারেন্ট জাল জব্দ করে। এ সময় অন্য গুদামের মালিকরা কোস্টগার্র্ড দেখে পালিয়ে যায়। বাইন্না পট্টির অন্য কারেন্ট জালের গোডাউনে অভিযান চালালে হয়তো কমপক্ষে অর্ধশত কোটি টাকার কারেন্ট জাল পাওয়া যেতো বলে মনে করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। হাজীগঞ্জ বাজারের কারেন্ট জাল ব্যবসায়ীরা হাজীগঞ্জ বাজারেই তাদের অবৈধ জালের ব্যবসা সীমাবদ্ধ রাখেননি, বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী আশপাশের বিভিন্ন বাজারে পাইকারি কারেন্ট জালের বিশাল মার্কেট তৈরি করে নিয়েছেন বলে বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাজীগঞ্জ বাজারের বণিক পট্টি একটি নামকরা বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এই পট্টি তথা গলিতে রয়েছে হার্ডওয়্যার, মুদি পাইকারি, সিরামিক, সিলভার সামগ্রী, কাপড়ের পাইকারি মার্কেট, মাটির তৈজসপত্রের পাইকারি দোকান, মাছ শিকারের দেশীয় জালের পাইকারি বাজার। এই গলিতেই প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়ে থাকে। একই গলিতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত দেশীয় জালের দোকান রয়েছে। এই সকল দোকানে মাছ ধরার যত ধরনের জাল রয়েছে তার সবই পাইকারি ও খুচরাভাবে বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু এই গলির প্রায় অর্ধশত জাল ব্যবসায়ীর মধ্যে ১০/১২ জন তাদের বৈধ জালের ব্যবসা থেকে অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবসার পিছনে লগ্নি করেছেন কয়েকগুণ বেশি।

জানা যায়, স্থলপথের ছেয়ে নদী পথে হাজীগঞ্জে সবচে’ বেশি কারেন্ট জাল আসে। বিশেষ করে ঢাকার পাইকারি বাজার কিংবা ঢাকার আশপাশের কারেন্ট জালের ফ্যাক্টরী থেকে সরাসরি বড় নৌকায় করে অন্য সকল মালামালের সাথে কারেন্ট জালের চালান চলে আসে। হাজীগঞ্জ বাজারস্থ ট্রাক রোডের শেষ মাথায় জাল নিয়ে আসা নৌকা ভিড়লেই নৌকা ঘাট থেকে মাত্র ৩০/৪০ হাত হাঁটলেই অধিকাংশ জাল ব্যবসায়ীর গুদামে যাওয়া যায়। বণিক পট্টির শেষ মাথাসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি অবৈধ কারেন্ট জালের গুদাম রয়েছে। জাল ব্যবসায়ীদের ব্যবসাই বর্ষা মৌসুম কেন্দ্রিক হওয়ায় বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই এই সকল জাল ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকার কারেন্ট জাল কিনে গুদামজাত শুরু করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক পট্টির একজন জাল ব্যবসায়ী জানান, বাবা, আমি কারেন্ট জাল বিক্রি করি না, এ জন্য আমার বেচাকেনা যৎসামান্য। প্রথমত এটা অবৈধ ব্যবসা আর দ্বিতীয়ত কারেন্ট জালের ব্যবসা করতে হলে ভারী ক্যাশ টাকার দরকার হয়। এই যে যাদের জাল কোস্টগার্র্ড নিয়ে গেছে তারা বেশিরভাগ ব্যবসায়ী দায়-দেনা করে মোকাম করেছে। তারা এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রতি বর্ষা মৌসুমে শুধু হাজীগঞ্জ বাজারে শত কোটি টাকার কারেন্ট জালের ব্যবসা হয়। তবে এতো বিশাল পরিমাণ টাকার জাল হাজীগঞ্জে চলে না। হাজীগঞ্জের অবৈধ কারেন্ট জাল আশপাশের অন্য সকল উপজেলায় পাইকারি বিক্রি হয় বিধায় এখানের ব্যবসায়িক রুলিংটা এতো উঁচু মাত্রার হয়ে থাকে। আবার কিছু ব্যবসায়ী সব দিক ম্যানেজ করে তাদের অবৈধ জাতি ব্যবসা বছরের পর বছর চালিয়ে আসছেন।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, হাজীগঞ্জ বাজার থেকে পাইকারি ভাবে বিক্রিত কারেন্ট জাল উপজেলা ও উপজেলার বাইরের খুচরা বাজারে দেদারচে বিক্রি হয়ে থাকে। বিশেষ করে রাজারগাঁও, বাকিলা, রামপুর, ওয়ারুক বাজারে ওজনে গ্রাম হিসেবে কারেন্ট জাল বিক্রি হয়।

এদিকে হাজীগঞ্জ বাজারের অবৈধ কারেন্ট জাল ব্যবসার খবর বেশ ছড়িয়ে পড়ার কারণে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে কারেন্ট জাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। গত বছর কয়েক কোটি টাকার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করেছে কোস্টগার্র্ড। চলিত বছর তথা গত বৃহস্পতিবার মাত্র ৪ ঘন্টার অভিযানে ৪টি গুদামে অভিযান চালিয়ে ৩৩ লাখ মিটার কারেন্ট জাল, ৪৭০টি চায়না চাঁই জাল জব্দ করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা। এদিন যে ক’টি গুদামের মালিক কোস্টগার্ডের অভিযান দেখে পালিয়েছে তাদের গুদামগুলোতে অভিযান চালালে সব মিলিয়ে অর্ধশত কোটি টাকার কারেন্ট জাল পাওয়া যেতো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বৃহম্পতিবারের অভিযান পরিচালনাকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা কোস্টগার্ডের কর্মকর্তা লেঃ সামছ্, হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আশরাফুল আলম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হায়দার পারভেজ সুজন।

বৃহস্পতিবারের কোস্টগার্র্ড অভিযানের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এনামুল হাছান জানান, আজকে আমরা প্রায় ১২ কোটি টাকা মূল্যের কারেন্ট জাল ও চায়না চাঁই জাল জব্দ করেছি। অপরদিকে অপরাধ স্বীকার করায় দুই জাল ব্যবসায়ীকে ৫ হাজার টাকা করে ১০ টাকা জরিমানা করেছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়