প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
![এক বছরে ৬৩ লক্ষাধিক টাকার ইয়াবা উদ্ধার! এ যেনো মাদকের স্বর্গরাজ্য](/assets/news_photos/2023/04/03/image-31441.jpg)
ফরিদগঞ্জে মাদক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে মাদকের স্বর্গরাজ্য ফরিদগঞ্জ। মাদক জালের মতো তা ছড়িয়ে গেছে উপজেলার প্রায় প্রতিটি কোণায়। ফরিদগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, গত এক বছর তথা ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ১৬ হাজার ৬শ’ ৭৭ পিচ ইয়াবা ও ৪৯ কেজি ৯৭৫ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করেছে। ১৬,৬৭৭ পিচ ইয়াবার আনুমানিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। ইয়াবা উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশ ইয়াবা কারবারীদের কাছ থেকে নগদ ৩৯ হাজার টাকাও উদ্ধার করে। মাদক বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় ১৬৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই সাথে ২০১ জনকে আটক করে পুলিশ। ফরিদগঞ্জে মাদকের এই ভয়াল চিত্রের নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু অসাধু নেতার আশ্রয় প্রশ্রয়। তাদের ছত্রছায়াই চলছে মাদক ব্যবসা।
অপ্রতিরোধ্য মরণঘাতী নেশা ইয়াবা এখন নানা অপরাধের প্রধান নিয়ামক। এই ভয়াল মাদক তারুণ্য, মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষ্যত্ব সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিনষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ-মায়া, ভালোবাসা, পারিবারিক বন্ধন। ইয়াবায় আসক্ত সন্তানের হাতে বাবা-মা, ঘনিষ্ঠ স্বজন নির্মম অত্যাচারের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নেশাখোর মাদক সংগ্রহে ব্যর্থ হওয়ার ক্রোধে যেকোনো ঘটনা ঘটাতে দ্বিধা করে না।
গত এক বছরে ফরিদগঞ্জে মাদকের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো : ২৮ জানুয়ারি ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ৪ কেজি গাঁজাসহ দুই যুবককে আটক করে। ২ মার্চ ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ভাটিয়ালপুর থেকে ১ হাজার ৫০পিচ ইয়াবাসহ এক মাদক কারবারীকে আটক করে পুলিশ। ৯ এপ্রিল উপজেলার গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নে ৪০ পিচ ইয়াবাহসহ শরীফ (৩১) নামের একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৬ এপ্রিল গভীর রাতে পুলিশ উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রাম থেকে শাহজাহান আটিয়া (৪০) নামে একজনকে ৫০ পিচ ইয়াবাহসহ আটক করে। ১৮ মে উপজেলার রূপসায় মাদকসহ ২জনকে আটক করে পুলিশ। ৮ জুন উপজেলার গোবিন্দপুর থেকে ৫ কেজি গাঁজাসহ তাসলিমা বেগম (২৬) নামে এক নারীকে আটক করে। ২৪ জুলাই উপজেলার ১৪নং ইউনিয়ন থেকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে শামিমকে ৫১ পিচ ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ। ২৭ জুলাই উপজেলার পৌর সদরে ১শ’ ৫ পিস ইয়াবা ও ১ কেজি গাঁজাসহ পুলিশ ৩ জনকে আটক করে। ২৯ জুলাই উপজেলার আইটপাড়া গ্রাম থেকে ১ কেজি গাঁজাসহ ২ জনকে আটক করা হয়। ২৪ আগস্ট পৃথক অভিযানে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ২ কেজি গাঁজাসহ ২জনকে আটক করে। ২৪ ডিসেম্বর ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ভাটিয়ালপুর এলাকা থেকে ২০৭ পিচ ইয়াবাসহ শরীফ শেখ বাবু নামের একজনকে আটক করে চাঁদপুর ডিবি পুলিশ।
বিগত বছরে ফরিদগঞ্জে মাদক উদ্ধারে সবচেয়ে সফল পুলিশ কর্মকর্তা হলেন এসআই নূরুল ইসলাম। তাঁর এই সফলতার পিছনের রহস্য সম্পর্কে তিনি এই প্রতিনিধিকে বলেন, মূলত দেশপ্রেম থেকে আমার এ কাজ। আমি মনে করি এটা আমার নৈতিক দায়িত্ব। রাষ্ট্র আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে। আমি কাজ করতে গিয়ে দেখেছি- কত মায়ের কান্না, বাবার অসহায়ত্ব। এই মাদকের ভয়াল থাবায় অনেক পরিবারের শান্তি হারিয়ে গেছে, অনেক পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। এসব ঘটনা দেখে আমি স্থির থাকতে পারতাম না। ঘটনাগুলো আমাকে মানসিক যন্ত্রণা দিতো। আল্লাহ পাক যেহেতু আমাকে সুযোগ দিয়েছেন, তাই আমি আমার ঈমানী দায়িত্ব পালন করেছি। অসহায় পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজের ভিতর এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, সমাজের প্রায় প্রতিটি অপরাধের অপরাধী কোনো না কোনোভাবে মাদকের সাথে যুক্ত। হত্যা, ধর্ষণ, মারামারি, চুরি-ডাকাতি, অপহরণ এই ঘৃণ্য কাজগুলো যারা করে এদের অনেকেই মাদকের সাথে যুক্ত।
ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবদুল মান্নান এ বিষয়ে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে কিশোর-তরুণদের বাবা-মাকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। স্কুল, কলেজে গিয়ে মাদক বিরোধী ক্যাম্পেইন আমি করে যাচ্ছি। কারণ মাদকসেবী কমাতে পারলেই এ আন্দোলনের সফলতা আসবে। সকল পেশাজীবী এবং সব শ্রেণির মানুষকে একযোগে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। যাকে যেভাবে বুঝানো যায়, বিশেষ করে মেডিকেল সায়েন্স এবং ধর্মীয় বিষয়গুলোও মাদকসেবী ও কারবারীদের সামনে নিয়ে আসতে হবে। আমি ঠিক সেভাবেই এগুচ্ছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি মনিটরিং করছেন এবং মাদক উদ্ধার ও এর ভয়াবহতা থেকে সমাজকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।