বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

ফরিদগঞ্জে বিলুপ্তির পথে গিগজ ধানের হাতে ভাজা মুড়ি
এমরান হোসেন লিটন ॥

রমজান মাসে মুড়ি ছাড়া বাঙালির ইফতার কল্পনাও করা যায় না। ইফতারে অন্য আইটেমের কমতি থাকলেও মুড়ি থাকাই চাই। কিন্তু আধুনিক যান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষের জীবনমানের অগ্রগতির পথে আজ প্রাচীন ঐতিহ্যের অনেক কিছু বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এই হারানো ঐতিহ্যগুলোর অন্যতম হলো হাতে ভাজা গিগজ ধানের দেশি মুড়ি।

গত কয়েক বছর পূর্বেও ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম আলোনিয়া, পূর্ব আলোনিয়া, রূপসা, সুবিদপুর ইউনিয়ন ও গুপ্টি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম মুড়ির গ্রাম হিসেবে খ্যাত ছিলো। রমজান মাস আসলেই ওই গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই মুড়ি ভাজার ধুম লেগে থাকতো। গিগজ ধানের মুড়ি, যার খ্যাতি ছিল সর্বত্র। কিন্তু কালক্রমে যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় হাতে ভাজা মুড়ির বাজার দখল হয়ে গেছে। উপজেলার ১১নং চর-দুঃখিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম আলোনিয়া গ্রামের ছৈয়াল বাড়ির পলাশ দাস সংবাদ কর্মীদের কথা শুনে রাগ হয়ে যান এবং অভাব-অনটনের কথা বলে তিনি জনপ্রতিনিধিদের ওপর বিভিন্ন রকম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কারণ হিসেবে জানতে চাইলে তিনি বলেল, মুড়ি শিল্প বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। এ এলাকায় শত শত মুড়ি ভাজার লোক ছিলো। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে কোনোরকম সহযোগিতা এবং সরকারের পক্ষ থেকে কোনরকম দান অনুদান না পাওয়ার কারণে ঐতিহ্যবাহী এই গিগজ ধানের মুড়ি হারিয়ে যাওয়ার পথে।

খোকন নামের একজন বলেন, এক সময় আলোনিয়া গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই মুড়ি ভাজা হতো এবং এই গ্রামের মুড়ি দিয়ে আশপাশের উপজেলা গুলোতে মুড়ির চাহিদা পূরণ করা হতো। তিনি আরো বলেন, এখানে কয়েকটি পরিবার গিগজ ধানের হাতে ভাজা মুড়ি এখনও ভাজে। আর তা ধরে রাখার কারণ হলো, বাপ-দাদাদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখা এবং অন্য কোনো কাজ পারে না বিধায় সংসার চালানোর প্রয়োজনে।

বিনয় কৃষ্ণ দাস নামের একজন বলেন, ঐতিহ্যবাহী হাতে ভাজা এই গিগজ ধানের মুড়ি অত্যন্ত সুস্বাদু। বর্তমান বাজারে সচরাচর যে মুড়িগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো কেমিক্যালযুক্ত এবং যান্ত্রিকভাবে তৈরি। কিন্তু আমাদের হাতে ভাজা গিগজ ধানের মুড়িতে শুধু আমরা লবণ ব্যবহার করি। এতে করে শারীরিক কোনো সমস্যা হয় না।

শীতল নামের একজন জানান, চাঁদপুর জেলায় বেশির ভাগ মুড়ির চাহিদা ফরিদগঞ্জের আলোনিয়া থেকে মেটানো হতো। অনেক কষ্টে মুড়ি ভেজে হাটে নিয়ে মুড়ি বিক্রি করতাম। তখন প্রচুর চাহিদাও ছিল। কিন্তু এখন ধানের দাম, চালের দাম, লাকড়ির দাম দুই-তিন গুণ বেড়ে যাওয়ায় এই মুড়ি শিল্প থেকে অনেকে সরে গেছে। জনপ্রতিনিধি ও সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কোনোরকম সহযোগিতা পাই না বলে এখন এই শিল্প বিলুপ্তির পথে।

মুড়ি ভাজা ছেড়ে দেওয়া মদন চন্দ্র দাস বলেন, ‘এক মণ চালের মুড়ি তৈরি করতে ২-৩ দিন সময় ব্যয় হয়। বর্তমানে ধানের দাম বৃদ্ধি, পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত খড়ি ছাড়াও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি মুড়ি উৎপাদনে গড়ে খরচ হয় প্রায় ১০০ টাকা। হাতে তৈরি মুড়ি কেমিক্যাল মুক্ত, খেতে সুস্বাদু হয়। এছাড়া ৩০/৪০ দিন ঘরে রাখলেও এর স্বাদের কোনো পরিবর্তন হয় না। মুড়ি শিল্পের কারিগরদের কথা, সরকারের একটু সহায়তা পেলে এই শিল্প বাচাঁনো সম্ভব।

মুড়ি শিল্পের সাথে জড়িত একজন মহিলা শ্রমিক শিবালী রাণী দাস অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে বলেন, আমাদের দুর্দশা তুলে ধরার জন্য ইতিপূর্বে অনেক টেলিভিশন সাংবাদিক এসেছেন। কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় নি। এ সময় তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ওপর খুব বেশি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা শুধু নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই আমাদের পায়ে হাত দিতে আসে। কিন্তু পরে আর তাদের দেখি না। আমরা স্থানীয় প্রশাসন এবং সরকারের পক্ষ হতে সহযোগিতা আশা করছি।

এই প্রসঙ্গে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লারের সভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, হাতে ভাজা মুড়ি আমাদের হারিয়ে যাওয়া অতীত ঐতিহ্য। এটা এক ধরনের শিল্প, কিন্তু আমাদের এই পুরানো ঐতিহ্য আর শিল্পটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তিনি আরো বলেন, হাতে ভাজা মুড়ির সঙ্গে বর্তমানে কারখানায় তৈরি বিভিন্ন কোম্পানির কেমিক্যাল যুক্ত প্যাকেট মুড়ির তুলনা চলে না। সব দিক দিয়ে বিবেচনা করলে দেখা যাবে হাতে ভাজা মুড়ি অতুলনীয় এবং খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়