প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার) বলেছেন, মার্চ মাস আমাদের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই মাসে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ও মহান স্বাধীনতা দিবস। এই মাসের প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ। জাতির পিতার অনেক ত্যাগের কারণে এবং তার সাহসী নেতৃত্বে অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীনতা পেয়েছি। যে কারণে আজকে স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমি পুলিশ সুপার হিসেবে কথা বলছি। তিনি এই দেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (১৮ মার্চ) দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের মহামায়া হানাফিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা। কিন্তু সে স্বপ্ন তিনি বেশি দূর এগোতে পারেননি। কারণ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি শাহাদাতবরণ করেন। মাত্র ৩ বছরের কাছাকাছি সময় তিনি দেশ পরিচালনার সময় পেয়েছিলেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে পুলিশ সুপার বলেন, যখন পাকিস্তানিরা এদেশে যুদ্ধ শুরু করে, তখন তাদের লক্ষ্য ছিলো এদেশের মানুষ আমাদের দরকার নেই, এদেশের মাটি আমাদের দরকার। এজন্য তারা আমাদের ৩০ লাখ মানুষকে মেরে ফেলে। তখন আমাদের লাখ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা আমাদের দেশের স্কুল, কলেজ, সড়ক, ব্রিজসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়। এরপর বঙ্গবন্ধু দেশ গড়ার জন্য খুব অল্প সময় পেয়েছেন। এ সময় কিছু বিপথগামী মানুষের হাতে তিনি শাহাদাতবরণ করেন।
পুলিশ সুপার বলেন, বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবরণের পর স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিলো। এরপর বঙ্গবন্ধুকন্যা ক্ষমতায় আসার পর বিশেষ করে ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ কিন্তু এখন অনেকখানি এগিয়েছে। আমরা নিম্নআয়ের দেশ থেকে মধ্যমআয়ের দেশে উপনীত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে এবং উন্নয়নশীল দেশ হবে। তখন আমরা না থাকলেও আজকে তোমরা যারা শিক্ষার্থী আছ তোমরা দেখবে স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশের নেতৃত্ব তোমরাই দিবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার জন্যে তোমাদেরকে তৈরি করতে হবে। আমরা এখন ডিজিটাল নাগরিক হয়ে গেছি। কারণ আমাদের প্রত্যেকের হাতে স্মার্ট মোবাইল আছে। আমরা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করি। গুগুলের মাধ্যমে সকল তথ্য জানতে পারি। বিশ্ব এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। এক্ষেত্রে তোমাদেরকে তৈরি হতে হবে। স্মার্ট দেশের নাগরিক হওয়ার জন্য বেশি করে বিজ্ঞান, গণিত ও অন্যান্য বিষয় পড়তে হবে। আবার কারো যদি গণিত কিংবা বিজ্ঞান পড়তে ভাল না লাগে তাহলে সাহিত্য পড়বে। সাহিত্যিক হবে এবং সাহিত্য চর্চা করবে। কোনোভাবে পিছিয়ে থাকা যাবে না।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান ইবনে আমিন। বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য শফিউল আলমের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোরশেদ আলম মোল্লা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারী, বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ও ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম খান, শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান নান্টু, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের কো-অপ্ট সদস্য শামসুজ্জামান পাটওয়ারী।
উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়ালি উল্যাহ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হাজী, শিক্ষক প্রতিনিধি আব্দুল কাদের, রাজিব হোসেন ও শাহিনা আক্তার, অভিভাবক প্রতিনিধি শহীদুল হক সেলিম, মোস্তফা মিয়া, আলী আক্কাছ পাটওয়ারী, লোধেরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসেন, মহামায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহীনা আক্তার, মহামায়া শিশু শিক্ষা নিকেতনের অধ্যক্ষ শীতল চন্দ্র ও ব্যবসায়ী প্রণয় রায় প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন শিক্ষার্থী শিহাব হোসেন এবং গীতা পাঠ করেন দিয়া রায়। এরপর শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। বিদ্যালয় আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি পুলিশ সুপারসহ অতিথিদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সবশেষে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি, সভাপতিসহ অন্যান্য অতিথিরা। মনোমুগ্ধকর এই আয়োজন সঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভাপতির বক্তব্য রাখেন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান ইবনে আমিন।