প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৫, ১১:৩২
আউটার স্টেডিয়ামটি খেলার উপযোগী করে গড়ে তোলার দাবি খেলোয়াড়দের

চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামের মাঠটি খেলার উপযোগী করে গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন খেলোয়াড়রা। চাঁদপুর জেলা শহরের স্টেডিয়াম ব্যতীত একটি বড়ো মাঠই রয়েছে, সেটি আউটার স্টেডিয়াম। সেই মাঠটিতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দেখা যায় বিভিন্ন বয়সী স্কুল পড়ুয়া এবং বিভিন্ন স্থানের খেলোয়াড়রা এসে খেলাধুলা করে।
চাঁদপুর জেলা শহরে খেলার জন্যে প্রয়োজনীয় মাঠ নেই, যার ফলে ক্রীড়াবিদদের অনুশীলন ও খেলাধুলার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ছে। চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামটি দ্রুত সংস্কার করে খেলার উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন খেলোয়াড়সহ ক্রীড়া সংগঠকরা।
বিশেষ করে যারা মূল স্টেডিয়ামে খেলার সুযোগ পান না, সেই সমস্ত উঠতি বয়সী খেলোয়াড়ের জন্যে আউটার স্টেডিয়ামটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নিয়মিত অনুশীলনের সুযোগ পেলে তারা তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাবে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, এ মাঠটিকে মেলাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় গেলে দেখা যাবে যে, পুরো মাঠের বিভিন্ন জায়গায় ইট সুড়কিসহ বিভিন্ন জিনিস পড়ে রয়েছে।
অল্প ক'দিন আগে এই মাঠে শেষ হলো মাসব্যাপী মেলা। মেলা শুরু হওয়ার প্রায় এক মাস আগ থেকে এবং মেলা শেষ হওয়ার পর আজ প্রায় এক সপ্তাহের উপরে হলো মাঠটি সেভাবেই রয়ে গেছে। সংস্কার না করায় মাঠটি কেউ দেখতে আসলে মনে করবে, এখানে পুরানো ইট বিক্রি করা হয়।
জেলা স্টেডিয়ামে নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্লাব ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার অন্তর্ভুক্ত খেলোয়াড়রা ছাড়া তেমন কেউ খেলার সুযোগ পায় না। চাঁদপুর জেলা শহরটি ছোট হলেও বিভিন্ন স্কুল কলেজ পড়ুয়া অনেক খেলোয়াড় রয়েছে যে, তারা বিকেল বেলা একটু খেলার জন্যে মাঠ খোঁজে। আউটার স্টেডিয়ামের বেশিরভাগ অংশই গর্ত হয়ে যাওয়াতে সেখানে কোনো খেলার পরিবেশ নেই বর্তমানে।
আউটার স্টেডিয়ামটি সংস্কার করা হলে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় টুর্নামেন্টের প্রাণকেন্দ্র হবে মাঠটি। কিন্তু বর্তমানে মাঠের অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় এটি আর খেলাধুলার উপযোগী নেই। ঘাসহীন মাঠ ও অপর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার কারণে এখানে নিয়মিত খেলাধুলা করতে পারছে না বিভিন্ন বয়সী খেলোয়াড়রা।
আউটার স্টেডিয়ামের মাঠটি যদি সংস্কার করে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, তবে এখানে সব বয়সী খেলোয়াড় নিয়মিত অনুশীলন করতে পারবে। এতে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্ক খেলোয়াড়দের জন্যে একটি আদর্শ অনুশীলন কেন্দ্র গড়ে উঠবে। শুধু পেশাদার খেলোয়াড়ই নয়, সাধারণ মানুষও এখানে শরীর চর্চা ও বিনোদনের সুযোগ পাবে।
স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠকেরা মনে করেন, স্টেডিয়ামটি সংস্কার করা হলে ফুটবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিক্সসহ বিভিন্ন খেলাধুলার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হবে। এতে জেলার ক্রীড়াঙ্গন আরও সমৃদ্ধ হবে এবং নতুন প্রতিভা বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে।
চাঁদপুরের ক্রীড়াপ্রেমী জনগণ ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো জেলা প্রশাসন ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে আউটার স্টেডিয়ামটি পুরো খেলার উপযোগী করে। সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়িত হলে চাঁদপুরের ক্রীড়াঙ্গন আরও এগিয়ে যাবে। চাঁদপুর স্টেডিয়ামের পাশাপাশি আউটার স্টেডিয়াম।
এই আউটার স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণ তেমন না থাকার কারণেই বিশেষ করে সকালবেলা হলে চলে গাড়ির চালক প্রশিক্ষণের কাজ।
বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন ও স্থানীয় খেলোয়াড়রা চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন দ্রুত আউটার স্টেডিয়ামটি সংস্কার করে খেলাধুলার জন্যে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করেন।
ক্লেমন চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা ও ক্রিকেট কোচ শামিম ফারুকীর সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপচারিতায় তিনি বলেন, এই মাঠটি খেলাধুলার জন্যে ভালো একটি মাঠ। চাঁদপুর শহরে এমন মাঠ নেই। একটি মাঠ চাঁদপুর স্টেডিয়াম হওয়াতে সেটিতে প্রেশার পড়ে বেশি। চাঁদপুরে ক্রীড়ার জন্যে উন্মুক্ত স্থান প্রয়োজন। বর্তমানে বিভিন্ন স্থানের ছেলেরা এসে খালি পায়ে স্টেডিয়ামে খেলছেন। বিভিন্ন জেলাতে উন্মুক্ত মাঠ থাকায় স্টেডিয়ামে প্রেশার পড়ে কম। আমরা চাই আউটার স্টেডিয়ামটি উন্মুক্ত করে দেয়া হোক, যাতে করে মাঠটিতে খেলার পরিবেশ ফিরে আসে।
সাবেক ফুটবলার ও কোচ আনোয়ার হোসেন মানিকের সাথে আলাপকালে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আউটার স্টেডিয়ামটি দ্রুত সংস্কার করে দেয়া হোক। আর না হলে আউটার স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। আউটার স্টেডিয়ামে খেলতে না পেরে ছেলেরা স্টেডিয়ামে চলে আসেন। যারা আসে তারা খালি পায়েই খেলে। বৃষ্টি হলে পুরো মাঠ কাদায় ভরে যায়। পানি যাতে মাঠে জমা না থাকে সেই ববস্থা করতে হবে।
ঢাকা আই স্পোর্টসের স্বত্বাধিকারী হাইমচর উপজেলার ইমাম হোসেন নিয়মিত মাঠে আসেন, খেলাধুলার খোঁজ-খবর রাখেন। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপ করার সময় তিনি বলেন, খেলাধুলার জন্যে মাঠ উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন। যারা ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত নয়, তারা আউটার স্টেডিয়ামে খেলতে চায়। স্টেডিয়াম তো নির্দিষ্ট দলের খেলোয়াড়দের জন্যে বরাদ্দ থাকে। তাই আউটার স্টেডিয়াম মাঠটিকে খেলার উপযোগী করে তোলা হোক। কোনো প্রোগ্রাম থাকলে সেটা স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ করা হলে আবারও যেন পুনরায় মাঠ সংস্কার করা হয়। বিগত সরকারের আমলে মাঠ দখল করে নিয়েছিল প্রভাবশালী অনেক মানুষই। এতে করে উঠতি বয়সী ছেলেরা মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছে।
সাবেক ফুটবলার ও কোচ জাহাঙ্গীর গাজীর সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তিনি বলেন, মেলা শেষ। মাঠের এখনও সংস্কার হয়নি। একটি মাত্র স্টেডিয়াম, সেটিতে তো প্রেসার চলছে প্রচুর। আউটার স্টেডিয়ামের মাঠটি সংস্কার করে খেলার উপযোগী করে তোলা হোক। ভালো মতো মাঠটি তৈরি করা দরকার। ছোট ছোট টুর্নামেন্টের খেলাগুলো যেনো এই মাঠে আয়োজন করা হয় সেই প্রত্যাশা করছি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসকের কাছে।