সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

লাউকরা যুদ্ধে বাঁশঝাড়ে বসে শত শত গুলি চালিয়েছি
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

যুদ্ধের বছর শাহরাস্তির রহিমানগর শেখ মুজিব কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন রাড়া গ্রামের মৃত মহব্বত আলীর ছেলে শামসুল আলম। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে যুদ্ধ করার প্রস্ততি নেন মনে মনে। যুদ্ধ শুরু হলে ১০ জুন কুমিল্লার চান্দিনা হয়ে ভারতের মেলাঘর পৌঁছেন। সেখান থেকে আসামের অম্পিনগরে বাঙালি আর্মি অফিসার লেঃ আলী আকবরের অধীনে ট্রেনিং করেছেন পুরো এক মাস। বর্তমানে হাজীগঞ্জের মাতুন গ্রামে বসতি গড়ে স্থায়ীভাবে বসবাসরত শামসুল আলম ৩ সন্তানের জনক। ট্রেনিং শেষে ভারতের কংস নগর হয়ে মেলাঘর। মেলাঘর থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে ২২ জুলাই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম হয়ে দেশে ফিরেন। ৪২ জনের দলের সাথে পায়ে হেঁটে বড়ুয়া এক রাত থেকে সরাসরি হাজীগঞ্জের নাসিরকোর্টে পৌঁছলে যুদ্ধকালীন কমান্ডার মজিবুর রহমান মজুমদার তাদেরকে রিসিভ করেন। শামসুল আলম বলেন, মজিবুর রহমান মজুমদার কয়েকটি গ্রুপ করেন। বিভিন্ন গ্রুপ করার পর আমি আবুল খায়ের গ্রুপের সদস্য হই। হাজীগঞ্জের লাউকরা যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হয়েছি। লাউকরা যুদ্ধ শুরুর আগে এক রাজাকার পরিচয় গোপন করে আমাদেরকে লাউকরা নিয়ে যায়। পরে বুঝতে পেরেছি বিষয়টি যে, হাজীগঞ্জের নামকরা রাজাকার বাচ্চু আমাদেরকে মারার জন্যে ঐ টোপটি পেতেছিলেন। টানা ৯ ঘণ্টা যুদ্ধ শেষে আমাদের দুই যোদ্ধা শহিদ হন। সেই যুদ্ধে স্থানীয়দের মধ্যে ১৭ জন নিরীহ বাসিন্দাকে হত্যা করে পাকবাহিনী ও রাজাকার দল। একই সাথে লাউকরা মজুমদার বাড়ির ২৫টি বসতঘর ও রান্নাঘর জ্বালিয়ে দেয় পাকবাহিনী। আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হলেও সেই যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হই। এছাড়াও উয়ারুক রেলক্রসিংয়ের সামনে রেলসেতুর কাছ থেকে ৭ জন রাজাকারকে ধরে জগন্নাথপুর ক্যাম্পে নিয়ে ক্যাম্প কমান্ডারের হাতে তুলে দেন তিনিসহ তার দল। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজন ‘বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : কেমন আছেন মুক্তিযোদ্ধাগণ’ আজকের পর্বে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম তিনি বলেন, বাঁশঝাঁড়ের ভেতরে বসে পাকআর্মির সাথে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন। এছাড়া তিনি যা যা বলেছেন তার একাংশ চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :

চাঁদপুর কণ্ঠ : বছর ঘুরে আবার আসলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আপনার অনুভূতি কেমন?

শামসুল আলম : অনুভূতি কেমন হয় তা বলে বোঝানো যাবে না। এ এক ভিন্ন মাত্রার আনন্দের।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সার্বিকভাবে আপনি কেমন আছেন?

শামসুল আলম : আলহামদুলিল্লাহ্, সব মিলিয়ে ভালো আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : ৫২ বছর পূর্বের মুক্তিযুদ্ধের কোন্ স্মৃতি আপনার মনে এখনও জ্বলজ্বল করছে?

শামসুল আলম : হাজীগঞ্জের হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের লাউকরা যুদ্ধটি অনেক যোদ্ধার মতো আমাকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়। লাউকরা যুদ্ধে আমরা ২৮ জন মুক্তিবাহিনী অংশ নিই। ২২ অক্টোবর ছিলো প্রথম রমজান। সেদিন ভোররাতে সেহরি খেয়ে শোয়ার পর একটা গুলির শব্দ শুনি। এরপরে আমরা সতর্ক হয়ে অবস্থান নেই। আমি আর আমার আরেক সহযোদ্ধা হাটিলা ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের আবুল মালেক বাঁশঝাড়ের ভেতরে ঢুকে প্রস্ততি গ্রহণ করি। এ সময় পাকবাহিনী ও রাজাকার একত্র হয়ে আমাদের উপর অতর্কিতভাবে হামলা শুরু করে। আমি আর মালেক বাঁশঝাড়ের ভেতরে বসে পাকবাহিনীকে গুলি করি। তারা আমাদের লক্ষ করে গুলি ছুঁড়লে ও সব গুলি কাঁচা বাঁশে লেগে এদিক সেদিক চলে যাওয়ার কারণে আমরা অক্ষত থেকে যুদ্ধ করতে পারি। এভাবে পরের দিন ২৩ অক্টোবর বেলা ১টার দিকে আমরা যখন দেখি পাকবাহিনীর দিক থেকে একতরফা গুলি আসছে তখন আমরা সরে পড়ি। এ সময় মালেকসহ অন্যরা স্থান ত্যাগ করলেও আমি পাশের ডোবায় পানির নিচে নাক জাগিয়ে বসে থাকি। এ সময় পাকবাহিনী ও রাজাকার দল আমাদেরকে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে মজুমদার বাড়ির ২৫টি বসতঘর ও রান্না ঘর জ্বালিয়ে দেয়। আর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ১৭ জন নিরীহ মানুষ হত্যা করে। বেলা ৩টার দিকে পাকবাহিনী চলে গেলে আমি পানি থেকে উঠে হাজীগঞ্জের জগন্নাথপুরে চলে যাই। লাউকরার ঐ যুদ্ধে আমাদের ২ জন মুক্তিবাহিনী শহিদ হলে ও পাকবাহিনীর ৪৫ জন সৈন্য আর ৬৫ জন রাজাকার মারা যায়।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অনেক রক্তে অর্জিত প্রিয় স্বাধীন দেশের বর্তমান অবস্থায় আপনি কতোটুকু সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট?

শামসুল আলম : দেশ মুক্ত করেছি স্বাধীন দেশে বাস করছি এতেই আমি সন্তুষ্ট আর যখন দেখি বিএনপির হাত ধরে স্বাধীনতাবিরোধী দল রাজনীতি করে। এসব দেখলে অসন্তুষ্ট হই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই মানুষের জন্ম/মৃত্যু। মাফ করবেন, তবুও জানার ইচ্ছা, আপনি আর কতোদিন বাঁচতে চান?

শামসুল আলম : বর্তমানে দেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে তার ধারাবাহিকতা দেখে যেতে পারলে শান্তি পাবো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমান বা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আপনি কী কথা রেখে যেতে চান?

শামসুল আলম : বর্তমান বা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলবো তারা যেন স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যায়ন ধরে রাখে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়