সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

উন্নত দেশ গঠন ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ। হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের নাটেহরা গ্রামের মৃত আবদুর রহমানের সন্তান। বর্তমানে স্থায়ী বসতি হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন মকিমাবাদ গ্রামে। স্ত্রী আর ৪ সন্তান নিয়ে জীবনের শেষ বয়সে এসে মানসিক শান্তিতে বেঁচে আছেন। বয়সের ভারে আর নানাবিধ রোগে আক্রান্ত আবুল কালাম আজাদ সন্তানদের করেছেন উচ্চ শিক্ষিত। বড় ছেলে সাইফুল মালেক রাজধানীর উত্তরা ট্রাফিক সার্কেলের এএসপি। মেঝো ছেলে মেহেদি হাসান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক পদে কমর্রত ও পিএইচডি করছেন; আর ছোট ছেলে হাজীগঞ্জ বাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। মেয়ে পুরো দস্তুর গৃহিণী। ১৯৭১ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হয় তখন হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ইন্ডারমিডিয়েটে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। সেই সালের ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতার ভাষণ উপস্থিত থেকে সরাসরি শুনেছেন। মূলত সেই ভাষণ শুনে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার জন্যে সংকল্প করেন। ১৯৭১ সালের ২৩ জুন ৭ জনের একটি দলের সাথে ট্রেনিং করার জন্য ভারতে চলে যান। ভারতের আগরতলার অম্পিনগরের ক্যাম্পে ২১ দিন ট্রেনিং করে ফের মেলাঘর ক্যাম্পে ১ মাস কাটিয়েছেন অস্ত্রের জন্য। অস্ত্র হাতে পেয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম বর্ডার হয়ে দেশে ঢুকেন। চৌদ্দগ্রাম থেকে নৌকা আর পায়ে হেঁটে হাজীগঞ্জের গ্রামে পৌঁছেন। ৬নং বড়কুল ইউনিয়নের সেন্দ্রা আখড়া বাড়ির ক্যাম্পে থেকে যুদ্ধ করেন। আখড়া বাড়ির ক্যাম্পে অনেক দেশীয় লোককে নিজের অস্ত্র দিয়ে ট্রেনিং করিয়েছেন। বলাখালের খেয়াঘাটের হরিসাহার বাড়ির সামনে ও রামচন্দ্রপুর বাজারে পাক বাহিনী ও রাজাকারের সাথে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন।

দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজন ‘বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : কেমন আছেন মুক্তিযোদ্ধাগণ’ আজকের পর্বে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ। তিনি পরবর্তী ও বর্তমান প্রজন্মকে বলেন, উন্নত দেশ গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। এছাড়াও তিনি যা যা বলেছেন তার একাংশ চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : বছর ঘুরে আবার আসলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আপনার অনুভূতি কেমন?

মোঃ আবুল কালাম আজাদ : ডিসেম্বর মাস আমাদের গৌরবের মাস। সেই গৌরবের মাস আসলে নিজে নিজে আত্মহারা হই। পাকিস্তানী শক্তিশালী আর্মি আর আমরিকার অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়ে মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা লাভ করেছি, এ অনুভূতি বোঝানো যাবে না।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সার্বিকভাবে আপনি কেমন আছেন?

মোঃ আবুল কালাম আজাদ : পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো থাকলেও বয়সের কারণে ভালো থাকতে পারছি না।

চাঁদপুর কণ্ঠ : ৫২ বছর পূর্বের মুক্তিযুদ্ধের কোন্ স্মৃতি আপনার মনে এখনও জ্বলজ্বল করছে?

মোঃ আবুল কালাম আজাদ : ৫২ বছর পূর্বের মুক্তিযুদ্ধের কোনো স্মৃতি এখন আর তেমন মনে করতে পারছি না। বিশেষ করে হাজীগঞ্জের মকিমাবাদ গ্রামে সুভাষ মুকুন্দসারের যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হয়। আমরা তাকে হসপিটালে নিয়ে চিকিৎসা করেছি। যা এখনো ভুলতে পারি না।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অনেক রক্তে অর্জিত প্রিয় স্বাধীন দেশের বর্তমান অবস্থায় আপনি কতোটুকু সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট।

মোঃ আবুল কালাম আজাদ : যুদ্ধ করেছি দেশ স্বাধীন হয়েছে, ৭ কোটি মানুষকে মুক্তির স্বাদ দিয়েছি। স্বাধীনতা পেয়েছি, এতে আমি সন্তুষ্ট। অনেক অর্জিত স্বাধীন দেশে যখন দেখি গণতান্ত্রিক অধিকার ঠিক মতো পাইনি, স্বাধীনতার সুফল পাইনি, আমি নিজে ভোট দিতে পারিনি, ভোটের অধিকার পাইনি-এসবে আমি অসন্তুষ্ট থাকি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই মানুষের জন্ম/মৃত্যু। মাফ করবেন, তবুও জানার ইচ্ছা, আপনি আর কতোদিন বাঁচতে চান?

মোঃ আবুল কালাম আজাদ : যে ক’দিন সৃষ্টিকর্তা বাঁচিয়ে রাখেন, সেই ক’দিন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ যেনো দুইবেলা ভালোভাবে খেতে পারে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে, দ্রব্যের অগ্নিমূল্য থেকে সাধারণ জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে চলে আসে, এমনটাই দেখতে চাই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমান বা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আপনি কী কথা রেখে যেতে চান?

মোঃ আবুল কালাম আজাদ : দেশের সবাই উন্নত শিক্ষায় উন্নত হবে, ধর্মীয় হিংসা-বিদ্বেষ দূর করবে, সবার জন্যে সব অধিকার নিশ্চিত করবে। সেটাই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়