বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০

বিএনপির আন্দোলন আমরা মোকাবেলা করার পূর্বে জনগণ মোকাবেলা করছে
গোলাম মোস্তফা ॥

চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের দুবারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ হুমায়ুন কবির খান বলেছেন, রাজনীতি হলো জনগণের জন্যে। আমরা রাজনীতি করছি জনস্বার্থে। আর বিএনপি রাজনীতি করছে দেশকে ধ্বংস করতে। বিএনপির রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে, আন্দোলন করারও অধিকার রয়েছে। কিন্তু সেটি হতে হবে অবশ্যই গণতান্ত্রিক পন্থায়। কিন্তু আন্দোলনের নামে রাজপথে যারা আগুন-সন্ত্রাস করে, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে তাদের আন্দোলন তো কখনোই সফল হবে না। কারণ জনগণের সমর্থন যাদের আন্দোলনে নেই বা যাদের প্রতি জনসমর্থন নেই, তাদের স্থান হবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। আমি মনে করি, বিএনপির আন্দোলন আমরা মোকাবেলা করার পূর্বে জনগণ মোকাবেলা করেছে। আর আমরা যদি রাজপথে নামি তাহলে ওদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। অতএব বিএনপির এই হাঁকডাকের রাজপথে কঠোরভাবে জবাব দেয়া হবে। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠকে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন। তার দেয়া পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকার পাঠকদের জন্যে নি¤েœ তুলে ধরা হলো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি আওয়ামী লীগের যে ইউনিটের সাথে সংশ্লিষ্ট সে ইউনিটের সর্বশেষ সম্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

মোঃ হুমায়ুন কবির খান : সম্মেলনের তারিখটি আমার খেয়াল নেই। তবে চাঁদপুর পৌর পাঠাগারে পৌর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে নাছির উদ্দীন আহমেদ সভাপতি, মরহুম লুৎফুর রহমান পাটোয়ারীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কতো বছর পর পর একটি শাখা/ইউনিটের সম্মেলন করতে হয়?

মোঃ হুমায়ুন কবির খান : দলের গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্ট বলা রয়েছে, ৩ বছর পর পর প্রতিটি ইউনিটের সম্মেলন করতে হবে। কিন্তু এখনতো গঠনতন্ত্র দিয়ে সংগঠন চলে না। সংগঠন চলে পছন্দ দিয়ে। ফলে পছন্দের লোকজন নেতৃত্বে থাকলে মেয়াদ থাকলেও সমস্যা নেই, না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। এটি হলো সংগঠনকে একেবারেই দুর্বল এবং নাজুক পরিস্থিতিতে ফেলে ধ্বংস করার পাঁয়তারা।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার ইউনিটের সম্মেলন আয়োজনে কী কী বাধা আছে বলে মনে করেন?

মোঃ হুমায়ুন কবির খান : চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার জন্যে সকল প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সমন্বয়হীনতা ও ব্যর্থতার কারণে বহু বছর পেরিয়ে গেলেও সম্মেলন করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে সংগঠনটিতে যে দুজন ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে রয়েছেন, এদের অদক্ষতা ও অনভিজ্ঞতার কারণে চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগ সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় পড়েছে। নাছির উদ্দিন আহমেদ ও মরহুম লুৎফর রহমান পাটোয়ারীর নেতৃত্বে পৌর আওয়ামী লীগ ছিলো সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন। পৌর আওয়ামী লীগের প্রতিটি ওয়ার্ড ছিলো অত্যন্ত শক্তিশালী। যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে এবং কর্মসূচিতে পৌর আওয়ামী লীগের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে অনেক নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমার মনে হয়, ক’দিন পরে পৌর আওয়ামী লীগ নামের সংগঠনটি অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হবে। এর কারণ, আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃত্বের অন্তঃকোন্দলের কারণে বা প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে এ সম্মেলন হচ্ছে না। সম্মেলন হলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কার লোক হবেন, অর্থাৎ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের লোক, নাকি মন্ত্রীর লোক। শুধুমাত্র এসব সমন্বয়হীনতার কারণে পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে না। এদিকে পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার জন্যে প্রতিটি ওয়ার্ড সম্মেলন করা হয়। সে ওয়ার্ড কমিটি নিয়েও রয়েছে নানা কথা। যা হোক সেগুলো বলতে চাই না। আজ সেই ওয়ার্ড কমিটিগুলো নীরব, নেই কোনো কার্যক্রম। আমি চাই, খুব শীঘ্রই চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হোক। নিষ্ক্রিয়তা থেকে সক্রিয়তায় এসে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা মার্কার বিজয় নিশ্চিত করতে প্রতি ওয়ার্ড পর্যায়ে দলকে গতিশীল করে প্রস্তুত রাখার আহ্বান জানাই ।

চাঁদপুর কণ্ঠ : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-গ্যাস সঙ্কট, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ আরো কিছু কারণে বিএনপির যে ধারাবাহিক আন্দোলন, তাতে আপনারা কতোটুকু উদ্বিগ্ন?

মোঃ হুমায়ুন কবির খান : আমরা যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি, আমরা বিএনপির এই আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন কোনোটাই না। কারণ আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে রাজপথে। আওয়ামী লীগ রাজপথে যেমনি আন্দোলন করতে জানে, তেমনি পরিচালনা করতেও জানে। অতএব, বিএনপির এই আন্দোলনের জবাব সময় মতো আওয়ামী লীগ দিবে এবং গণতান্ত্রিক পন্থায় রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে মোকাবিলা করবে ইনশাআল্লাহ।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, বিএনপি যে আন্দোলন করছে, তাদের আন্দোলনের যে ইস্যু, এগুলো নিয়ে আমাদের দেশের জনগণ সচেতন। তারা জানে সারাবিশ্বে কী অবস্থা চলছে। তাই তাদের আন্দোলনে জনগণের সাড়া নেই। তাদের আন্দোলন নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা নেই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : এ আন্দোলন সাংগঠনিকভাবে কিংবা অন্য কী উপায়ে মোকাবেলা করা যায় বলে আপনি মনে করেন?

মোঃ হুমায়ুন কবির খান : রাজনীতি হলো জনগণের জন্যে। আমরা রাজনীতি করছি জনস্বার্থে। আর বিএনপি রাজনীতি করছে দেশকে ধ্বংস করতে। বিএনপির রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে, আন্দোলন করারও অধিকার রয়েছে। কিন্তু সেটি হতে হবে অবশ্যই গণতান্ত্রিক পন্থায়। কিন্তু আন্দোলনের নামে রাজপথে যারা আগুন সন্ত্রাস করে, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে তাদের আন্দোলন তো কখনোই সফল হবে না। কারণ জনগণের সমর্থন যাদের আন্দোলনে নেই বা যাদের প্রতি জনসমর্থন নেই, তাদের স্থান হবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে।

আমি মনে করি, বিএনপির আন্দোলন আমরা মোকাবেলা করার পূর্বে জনগণ মোকাবেলা করেছে। আর আমরা যদি রাজপথে নামি তাহলে ওদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। অতএব বিএনপির এই হাঁকডাকের রাজপথে কঠোরভাবে জবাব দেয়া হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি কি এমন মানসিক আস্থা পোষণ করেন যে, বিদ্যমান সমস্যা বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক সঙ্কট, সম্ভাব্য বৈশ্বিক মন্দা তথা নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ স্বীয় জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে পারবে?

মোঃ হুমায়ুন কবির খান : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি, আমাদের নেত্রী, জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ, অভিজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলে সকল প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েও সারাবিশ্বের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশ অনেক সুন্দরভাবে এগিয়ে চলছে। সকল সমস্যা ও সংকট মোকাবেলা করে দেশের জনগণকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সচেতন জনগণ দেশকে এগিয়ে নিতে বিরোধী দলকে নয়, সরকারকে সহযোগিতা করছে।

অতএব, আমার দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস, এদেশের জনগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে আবারো নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থ বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হবে। আওয়ামী লীগ টানা ৪র্থবারের মতো সরকার গঠন করবে ইনশাআল্লাহ।

চাঁদপুর কণ্ঠ : উপরোক্ত প্রশ্নমালার বাইরে আপনার অন্য কোনো বক্তব্য থাকলে উপস্থাপন করতে পারেন।

মোঃ হুমায়ুন কবির খান : আমার বক্তব্য হচ্ছে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রতি-আপনারা নিজেদের স্বার্থের দিকে নজর না দিয়ে দলের দিকে নজর দেন। আপনাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে কে কার লোক, কাকে নেতৃত্ব দিলে আমার আজ্ঞাবহ হবে এমনটি না ভেবে দলের স্বার্থে যোগ্য ব্যক্তিকে নেতৃত্ব দিন। দলকে সুসংগঠিত করেন। মনে রাখবেন দল তৃণমূল থেকে শক্তিশালী থাকলে আপনি নেতার শ্রদ্ধা পাবেন। দল শক্তিশালী থাকলে আপনার নেতৃত্ব থাকবে, অন্যথায় কারো মূল্যায়ন হবে না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেও আজ দলের দুঃসময়ের নেতা-কর্মীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। হাইব্রিডদের ভিড়ে ত্যাগীরা অসহায়। অতএব, দলের প্রতিটি ইউনিটকে শক্তিশালী করুন, ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করুন। দল এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

উল্লেখ্য, মোঃ হুমায়ুন কবির খান স্কুলে পড়াবস্থায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি ছাত্রজীবনে মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ছাত্র রাজনীতি শেষে চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের ১নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এর পর পর দুবার চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়