প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
চার দশক পূর্বে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প চাঁদপুর সেচ প্রকল্প বাঁধ তৈরি করে সরকার। উদ্দেশ্য বন্যামুক্ত এলাকায় ফসলি জমিতে বছরে একাধিক ফসল উৎপাদন করে খাদ্য ঘাটতি দূর করা। কিন্তু গত চার দশকেও সেই খাদ্য ঘাটতি দূর হয়নি। বরং বছরের পর বছর খাদ্য ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। অন্যদিকে ক্রমশঃ হ্রাস পাচ্ছে ফসলি জমি। চরের এক ফসলি জমিগুলো ক্রমেই মাছ চাষের আওতায় চলে যাচ্ছে। প্রকৃত কৃষকরা ধানের আবাদ করতে চাইলেও জমির মালিক ও চর পরিচালনা কমিটির কৌশলের কাছে তারা পেরে উঠছে না। ফলে একের পর এক চর থেকে ধানের আবাদ বন্ধ হচ্ছে। ইতোমধ্যেই কৃষকরা ধান চাষে সহযোগিতা চেয়ে ইউএনও বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।
সম্প্রতি পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের চরগুদাড়া ও গজারিয়া চরে মাছ চাষ ও ধান চাষ নিয়ে কৃষক ও চর পরিচালনা কমিটির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। বিষয়টি পৌর মেয়রের দৃষ্টি গোচর হলে খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে তিনি প্রথমে ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে এবং পরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন।
সে আলোকে ৩০ অক্টোবর রোববার দুপুরে পৌর এলাকার সকল চর পরিচলনাকারী কমিটির সাথে মতবিনিময় করেন উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমুন নেছার সভাপতিত্বে সভায় পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের পাটওয়ারী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জিএস তছলিম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজুদা বেগম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিক জামিল মাহমুদ, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আক্তার রুমা, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডঃ নামজুন নাহার অনি বক্তব্য রাখেন। সভায় চরগুলোতে বছরের ৪ মাস ধানের আবাদ ও বাকি ৮ মাস মাছের চাষ করার সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে চর পরিচালনা কমিটির অনেকেই লাভ বেশি হওয়ায় সারাবছর মাছ চাষের বিষয়ে আগ্রহী বলে জানা গেছে। চর পরিচালনা কমিটি জমির মালিকদের ধান চাষের পরিবর্তে মাছ চাষে বেশি লাভের হিসেব দেখিয়ে একের এক পর্যায়ক্রমে মাছ চাষের আওতায় নিয়ে যাচ্ছে। এতে মাছের উৎপাদন বাড়ার সাথে সাথে নির্দিষ্ট কিছু মানুষ লাভবান হলেও বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকরা। হ্রাস পাচ্ছে ধানের আবাদ।
সর্বশেষ চর নিয়ে জটিলতা নিরসনে এবং কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে চরে ধান চাষে আগ্রহী কৃষকরা রোববার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। তাদের দাবি, বছরে অন্তত একবার ধান চাষ করলে কৃষকরা উপকৃত হয়। বেশি ফসল উৎপাদনে এক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ এগিয়ে আসতে হবে।
এ ব্যাপারে কৃষকদের পক্ষে শাহ আলম মিয়াজী বলেন, চরের এক ফসলি জমিতে ধান চাষ করার পর বাকি সময়ে মাছ চাষে কারো আপত্তি নেই। কিন্তু সারা বছর মাছ চাষ করলে কৃষকরা বাঁচবে কিভাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নূরে আলম ভুট্টো জানান, শুধু পৌর এলাকায় বিভিন্ন চরে এক ফসলি জমির পরিমাণ ৮৫০ হেক্টর। এখানে ধান চাষ করলেও অন্তত ১ হাজার মেট্রিক টনের বেশি ধান আবাদ সম্ভব।
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী বলেন, প্রধানমন্ত্রী খাদ্যঘাটতি মোকাবেলায় ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কিছু চর পরিচালনা কমিটি কৌশলে কৃষকদের ধান চাষ থেকে বঞ্চিত করছেন। তাই আমি কৃষি অফিসারকে চিঠি দিয়েছি। সেই মোতাবেক বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসসিলুম নেছা বলেন, যে জমিতে ধান চাষের উপযোগিতা রয়েছে, সেখানে ধান চাষ হবে। আর যেখানে ধান চাষ মোটেও উপযোগী নয়, সেখানে মাছ চাষ হবে। আমরা চাই বছরের ৪ মাস ধান ও বাকি ৮মাস মাছ চাষ হোক।