প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে নার্স এবং নার্সের মেয়েকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগসহ নার্সদের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নানা রকম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
গত ৩ আগস্ট বুধবার এক সিনিয়র নার্স ও আরেক সিনিয়র নাসের্র মেয়ে চাঁদপুরের সিভিল সার্জন বরাবর যৌন হয়রানি ও নার্সদের টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জনৈকা সিনিয়র নার্সের মেয়ের সাথে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ বেলায়েত হোসেনের পরিচয় হওয়ার পর তার ফোন নাম্বার চান। তিনি ফোন নাম্বার দিতে নারাজ হলে এক পর্যায়ে তিনি জোরপূর্বক মেয়েটির ফোন নাম্বার নেন। নাম্বার নেয়ার পর থেকে তিনি হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে ফোন দিয়ে অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলেন। তিনি অসংখ্যবার ভিডিও কল দিয়ে নগ্ন অবস্থায় অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন এবং মেয়েটিকে নগ্ন হতে বলেন। এমনকি ভিডিও সেক্স করতেও বলেন তিনি। মেয়েটি তার কথামত অশ্লীল কাজ করতে না চাইলে তিনি তার বাসায় যেতে বলেন। এই কর্মকর্তার স্ত্রী বাসায় না থাকলেই তিনি মেয়েটিকে বাসায় যেতে জোর করেন। তার কোনো কথায় রাজি না হওয়ায় এই কর্মকর্তা মেয়েটিকে হুমকি দিয়ে বলেন, যদি তুমি এ সকল কথা কারো কাছে বলো এবং আমার ডাকে সাড়া না দাও, আমার বাসায় না আসো, তাহলে তোমার মাকে অন্যত্র বদলি করে দেয়া হবে।
ডাঃ মোঃ বেলায়েত হোসেনের যৌন হয়রানিতে মেয়েটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি উক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করার জন্যে সিভিল সার্জনের প্রতি অনুরোধ জানান। এছাড়াও আরেক সিনিয়র নার্স সিভিল সার্জন বরাবর পৃথক অভিযোগ করেন। ২০১৬ সালে নিয়াগকৃত একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স তিনি। তিনি অভিযোগে বলেন, ফাইজার ভ্যাকসিন দেয়ার কারণে সরকার ৮ জন নার্সকে ২৪ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা প্রদান করেন। কিন্তু এই কর্মকর্তা ৪৮ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা অফিস খরচ বাবদ কেটে রাখেন। এছাড়া তিনি ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ কথা বলে বিব্রত করেন। অফিস অথবা ওয়ার্ডের কাজে বা তার অফিসে গেলে তার দৃষ্টিভঙ্গি ও আপত্তিকর কথাবার্তা শুনতে হয়। যার ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল নার্স তার অফিস রুমে যেতে ভয় পায়। কর্মকর্তার যৌন হয়রানির কারণে নার্সরা হাসপাতালে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারছেন না।
অভিযোগকারী মেয়েটি বলেন, তার ভয়ে আমি তার সকল প্রকার যৌন হয়রানি মুখ বুঁজে সহ্য করেছি। কিন্তু এখন এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, তিনি প্রতিদিন আমাকে তার বাসায় যেতে বলেন, বাসায় না গেলে তিনি ভিডিও কল দিয়ে তার জামাকাপড় খুলে আমাকে দেখান এবং আমার শরীরের জামাকাপড় খুলে তাকে দেখাতে বলেন। আমি তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সবাইকে জানাতে বাধ্য হয়েছি। এ বিষয়ে আমি গত বুধবার চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে লিখিত ও ভিডিও বক্তব্যসহ অভিযোগ দিয়ে এসেছি।
অভিযোগকারী নার্স বলেন, ডাঃ মোঃ বেলায়েত হোসেন আমার ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। যার ফলে আমার পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আমি ফেসবুকে কোনো পোস্ট দিলেই তিনি বাজে মন্তব্য করায় পোস্টগুলো ডিলেট করতে বাধ্য হই। তাছাড়া তিনি সরাসরি আমাকে দেখলেও অশ্লীল ভাষায় মন্তব্য করেন। তিনি আমাদের নার্সদের ভ্যাকসিন দেয়ার টাকা অফিস খরচ দেখিয়ে নিজে তা আত্মসাৎ করেছেন। এ সকল বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে আমি সিভিল সার্জন মহোদয়ের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে ডাঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ হয়েছে বলে আমি জানি না। কিছুক্ষণ আগে সিভিল সার্জন অফিস থেকে এসেছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে এ বিষয়ে কিছুই বলে নি। হাসপাতালে এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে আমি জড়িত নই।
চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ শাহাদাত হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার দপ্তরে হাইমচর থেকে দুটি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নেন সে বিষয়ে আমরা অপেক্ষায় আছি।