মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

বাসর রাত থেকেই নির্যাতনের শিকার পারভিন আক্তার
মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজল ॥

ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে নিজের সন্তান শিশু ফাহাদকে (২) নির্যাতন করেছেন বলে জানালেন মা পারভীন আক্তার। আর এই নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে শিশুটিকে উদ্ধার করে আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার রাতেই চট্টগ্রামের ছোটমণি নিবাসে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহরাস্তি থানার উপ-পরিদর্শক জনি কান্তি দে।

বৃহস্পতিবার জামিনে ছাড়া পেয়ে শুক্রবার দুপুরে পারভীন আক্তার বাড়িতে আসেন। এ সময় তিনি নির্দোষ ও পরিস্থিতির শিকার হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানান।

শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় গণমাধ্যমকর্মীরা সরজমিনে পারভীন আক্তারের বাড়ি চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের হাঁড়িয়া গ্রামের দুলাল মেম্বারের বাড়িতে গেলে দেখা যায় তিনি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামছেন। সাংবাদিকদের দেখে তিনি কেঁদে উঠেন এবং পুত্রকে তার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার আকুতি জানান। পুত্রকে কেনো নির্যাতন করেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, শ্বশুর বাড়ির নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। বাসর রাত থেকেই নির্যাতনের শিকার হন তিনি। আদালত কর্তৃক নির্দেশিত মাসিক ৮ হাজার টাকা দিয়েই শিশু পুত্রকে নিয়ে চলতেন তিনি। অনেক দিন ধরে খরচের টাকা না পেয়ে স্বামীকে ফোন দিলে তিনি পুত্রসহ তাকে মরে যেতে বলেন। তিনি আরো জানান, বিয়ের পর থেকে আমার স্বামীর বিভিন্ন মেয়েদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক এমনকি নিজের আপন বড় ভাইয়ের বৌয়ের সাথে আমি বেশ কয়েকবার অশ্লীল অবস্থায় দেখতে পাই। আমি ওই সকল ঘটনার প্রতিবাদ করলে সে ও তার পরিবারের লোকজন আমাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। এ নিয়ে বেশ ক’বার আমার এলাকার চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিস বৈঠকও হয়েছে। তাতেও তাদের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং আমাকে একবার খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে এবং তিনবার মারধর করে মেরে ফেলার চেষ্টা চালিয়েছে। ওইসব ঘটনার প্রমাণ হিসেবে আমার কাছে ছবি, অডিও এবং ভিডিও রয়েছে। আমি তাদের নির্যাতন সহ্য করে শুধুমাত্র শিশু পুত্রটির মুখের দিক তাকিয়ে বার বার সংসার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছি। সংসারের প্রয়োজনে স্বামী প্রবাসে যাওয়ার সময় পিতার পরিবারের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছি। এতো কিছুর পরও তারা আমাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। প্রতিনিয়ত আমাকে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। ঈদে তাদের বাড়িতে গেলে তারা আমাকে দেখে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি খাবারের জন্যে একমুঠো ভাত চেয়ে পাইনি। অনেকবার বলেও আমার ছেলেকে একটি রুটি দেয়নি তারা। বাবার বাড়িতে আমি একা অবস্থান করি। সেখানে দিনের পর দিন খরচের টাকা না পেয়ে অনাহারে ছিলাম। আমার কষ্ট দেখে পাশের ঘরের চাচা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দু’দফা চাল এনে দিয়েছেন। ক্ষুধার যন্ত্রণা কতো ভয়াবহ আমি সেটি প্রতিদিন উপলব্ধি করেছি। আমি ওই যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে রাগের বশবর্তী হয়ে আমার সন্তানকে মারধর করে ওই ভিডিও আমার স্বামীর কাছে পাঠাই। আমি ধারণা করেছি, সে ওই ভিডিও দেখে পরিবর্তন হবে, অথচ উল্টো নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে ভিডিওটি বিভিন্ন জনের মাধ্যমে ছড়িয়ে আমাকে সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে দোষী বানিয়েছে। তাদের নির্যাতনে আমার গর্ভের ৮ মাসের একটি কন্যা সন্তান মারা গেছে। আমি তাদের সঠিক বিচার দাবি করছি।

পারভীনের ভাই মোঃ শাহ পরান জানান, বিয়ের পর থেকে আমার বোনটি ওই পরিবারের নির্যাতন ছাড়া কিছুই পায়নি। আমরা আমাদের সাধ্য মতো সহযোগিতা করেও নির্যাতনের হাত থেকে বোনকে রক্ষা করতে পারিনি। আমার বোন সংসার করতে চেয়েছে। তাই তাদের শত নির্যাতনের পরও সংসার ছেড়ে আসার কথা চিন্তা করেনি। অথচ আজকে তাদের অমানুষিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে শিশু বাচ্চাটিকে মারধরের ভিডিওকে কেন্দ্র করে আমার বোনকে তারা নিঃশেষ করে দেয়ার অপচেষ্টা করছে। আমরা ঘটনার সঠিক তদন্ত পূর্বক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে বিচার দাবি করছি।

মেয়েটির চাচা সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ দুলাল হোসেন জানান, শ্বশুর বাড়ির অমানুষিক নির্যাতন ও অনাহারে থেকে মেয়েটি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। পুলিশ বাচ্চাটিকে উদ্ধার না করলে হয়তো সে বাচ্চাটিকে মেরে নিজে আত্মহত্যা করতো।

চিতোষী পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান জোবায়েদ কবির বাহাদুর জানান, পারভীন বিয়ের পর হতে স্বামীর পরিবারের হাতে বার বার নির্যাতিত হয়েছে। আমি কয়েক বার তাদের সালিস বৈঠকে গিয়েছি। ওই পরিবারের অত্যাচারের মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় মেয়েটি তার শিশু পুত্রকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখানে অর্ধহারে-অনাহারে রয়েছে শুনে আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দু’দফা চালের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

উল্লেখ্য, শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের নূরুল আমিনের কন্যা পারভীন আক্তারের (২৩) সাথে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার আশিয়াদারি গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে প্রবাসী মহিনউদ্দিনের ৩ বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ফাহাদ (২) নামের একটি শিশুসন্তান রয়েছে। বিয়ের এক বছর পর থেকে তাদের দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এ নিয়ে স্ত্রী পারভীন আক্তার বাবার বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। চাঁদপুর লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের মাধ্যমে ভরণ-পোষণ বাবদ প্রতি মাসে স্বামীর কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা প্রাপ্তির সিদ্ধান্ত হয়।

প্রবাসী স্বামী মহিনউদ্দিন ঠিকমতো ওই টাকা না দিতে পারায় সম্প্রতি পারভীন তাদের দুই বছরের শিশুসন্তানকে নির্যাতন করে তার ভিডিও ধারণ করে স্বামীকে পাঠান। শিশুটির বাবা ওই ভিডিও দেখে সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মনোহরগঞ্জ এলাকার বিভিন্নজনকে অনুরোধ করেন।

এরই মধ্যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দৃষ্টিতে আসে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই শিশুটিকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী শিশুটিকে পরিচর্যা ও ভরণ-পোষনের জন্যে চট্টগ্রামের রৌফাবাদ ছোটমণি নিবাসে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়