মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

শোক ও সংকট উত্তরণের আগস্ট
অনলাইন ডেস্ক

হঠাৎ শোক মানুষকে স্তব্ধ করে দেয়। স্থবির করে দেয় তার বোধ-বুদ্ধির স্বাভাবিকতাকে। তেমনি ভাবেই বাঙালিকে ঘাতকের বেশে শোকস্তব্ধ করে দিয়েছিল ঊনিশশো পঁচাত্তরের দুর্বহ আগস্ট। আর দুহাজার বাইশের আগস্ট বাঙালিকে উজ্জীবিত করেছে পদ্মাসেতুর মহাকাব্যিক নির্মাণের মধ্য দিয়ে। আগস্ট সবসময় বাঙালিকে পরীক্ষায় অবতীর্ণ করে কঠিন সব প্রপঞ্চ তৈরি করে। ঊনিশশো পঁচাত্তরের আগস্ট যেমন জনককে সিঁড়ির শয্যায় রক্তাক্ত করে রেখেছিলো, তেমনি দুহাজার এক সালের আগস্ট এসে প্রাণ হরণের চেষ্টা করে হরণ করে নিয়ে গেছে জনক দুহিতার মূল্যবান শ্রবণ। তবু আগস্ট বাঙালিকে ঢোকাতে পারেনি ভয়ের খোলসে। আগস্ট যেমন পঁচাত্তরে সাজিয়েছিলো সামরিক মহড়ার নীলনকশা, তেমনি দুহাজার এক সালের আগস্টও সাজিয়েছিলো জজ মিয়া নাটক। কিন্তু সব নাটকের অবসান ঘটিয়ে জজ মিয়া নাটকে দশ ট্রাক অস্ত্রের থলের বেড়াল বের হয়ে আসাতে আগস্টের চূড়ান্ত সাফল্য নস্যাৎ হয়ে যায়। আগস্ট আসলে স্বাধীনতার স্থপতির ওপরে আঘাত হেনে বাঙালির স্বাধীনতাকেই ধূলিসাৎ করতে চায়। মার্কিনী তৎপরতার খবর উইকিলিকসে ফাঁস হয়ে গেলে এটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন শক্তির উত্থান তাদের সহ্য ক্ষমতাকে উসকে দিচ্ছে বার বার। তারা তাই যে কোনো মূল্যে ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন নতুন নেতৃত্ব মেনে নিতে পারছে না। কিন্তু ছয়ফুট দিঘল যে মানুষটি হিমালয়কে হার মানিয়ে নিজেকে বড় করে তোলে আকাশ সমান, তার ব্যক্তিত্বের সামনে ম্লান হয়ে আসে সকল ষড়যন্ত্রের নীল নকশা।

বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব এমন প্রখর ও স্নিগ্ধ ছিলো যে, ঊনিশশো তিয়াত্তরে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে তিয়াত্তর জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে সকল প্রটোকল ভেঙে, আয়োজক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান নয়, স্বয়ং মার্শাল টিটো এগিয়ে এসে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান, তাঁকে বুকে আগলে নিয়ে নিজের আকাঙ্ক্ষাকে প্রশমিত করেন। বঙ্গবন্ধু এক নবীন রাষ্ট্রের স্থপতি হলেও তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রখরতায় বাহাত্তরের আট জানুয়ারিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জেরার ফোর্ড নিজেই এগিয়ে এসে গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকেন বঙ্গবন্ধুর আরোহণের জন্যে। বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির প্রাজ্ঞতার কারণেই তিনি পাকিস্তানে না পৌঁছা অবধি জুলফিকার আলী ভুট্টো ওআইসি সম্মেলনের সূচনা করতে পারেননি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল এক নিছক রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন না, তিনি ছিলেন আগাগোড়া বাঙালি সংস্কৃতিতে মোড়ানো অনুপম ব্যক্তিত্ব। বায়ান্ন সালের অক্টোবরে চীনে গিয়ে তিনি নবপরিণীত চীনা শ্রমিক দম্পতিকে নিজের আংটি খুলে আশীর্বাদ জানিয়ে আসেন। পাশাপাশি বন্ধুপত্নী মিসেস মাহবুবের কাছে কড়া ঝালের চট্টগ্রামের রীতিতে ভাত-মাংস খাওয়ার আবদার করেন। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব একাধারে বাঘের মতো এবং তার সাথে শিশুর সারল্যে ভরা। এই ব্যক্তিত্বকেই সহ্য করতে পারেনি পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠী। এ কারণেই তাদের নীলনকশায় প্রণীত হয়েছে নির্মম আগস্ট। আগস্ট তাই বাঙালির কাছে মাস নয়, ষড়যন্ত্রের কাশিম বাজার নীলকুঠি’রই অন্য নাম। সংগ্রামঋদ্ধ বাঙালি সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে আজ আমেরিকাণ্ডকানাডার কাছেই হয়ে উঠেছে সেল্ফি ছবি তোলার কাঙ্ক্ষিত সেলিব্রিটি। সারাবিশ্ব আজ আগস্টের ছল-চাতুরি উড়িয়ে দিয়ে মহানাদে বলে উঠেছে, ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়