রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৩ মে ২০২২, ০০:০০

অর্থনীতি সমিতির ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট পেশ

অর্থনীতি সমিতির ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট পেশ
এএইচএম আহসান উল্লাহ ॥

আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের জন্যে ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট পেশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। যা চলমান সরকারি বাজেটের তুলনায় ৩.৪ গুণ বেশি। বাজেটে মোট ৩৩৮টি সুপারিশ করা হয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ উৎস রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। যা চলমান সরকারি বাজেটের তুলনায় ৪.৭৬ গুণ বেশি। যেখানে প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দেয়ার পাশাপাশি কালো টাকা উদ্ধার ও পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে বাজেট ঘাটতি পূরণের কথা বলা হয়েছে। বিকল্প বাজেটে বৈদেশিক ঋণ ও ব্যাংক ঋণকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

গতকাল ২২ মে রোববার অর্থনীতি সমিতির অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২২-২৩: একটি জনগণতান্ত্রিক বাজেট প্রস্তাব’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ আইনুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীর উপস্থিতি ছাড়াও ভার্চুয়ালি যুক্ত হন ৫শ’ জন। এর মধ্যে চাঁদপুরের ছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ, হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদ আহম্মেদ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌসসহ আরো বিশিষ্টজনরা।

এই বাজেট প্রস্তাবনায় উল্লেখযোগ্য দুটি দিক হচ্ছে : গণপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং গবেষণা মন্ত্রণালয় নামে নতুন দুটি মন্ত্রণালয় গঠন করা। আরেকটা বিষয় হচ্ছে- সকল কিছুর কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা নয়, বিভাগীয় শহরগুলোতেও স্থানান্তর করা। এমনকি বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ও বিভাগীয় শহরে নেয়া যেতে পারে। যেমন- ময়মনসিংহে কৃষি ও ভূমি মন্ত্রণালয়সহ আরো কিছু মন্ত্রণালয়, বরিশালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ আরো কিছু মন্ত্রণালয়।

ড. আবুল বারাকাত বলেন, প্রস্তাবিত জনগণতান্ত্রিক ২০ লাখ ৫০ হাজার ২৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করছি। যা বর্তমান বাজেটের তুলনায় ৩.৪ গুণ বেশি। যেখানে ৩৩৮টি সুপারিশ রয়েছে। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে সমাজ থেকে চার ধরনের বৈষম্য যথা- আয় বৈষম্য, সম্পদ বৈষম্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বৈষম্য ক্রমাগত হ্রাস করে নির্মূলের দিকে যাওয়া। এ লক্ষ্যে আয় ও ব্যয় খাতে মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। দ্বিতীয়ত বাজেটে অর্থায়নের প্রান্তিক, দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্য মধ্যবিত্তের ওপর কর দাসত্ব আরোপ করা যাবে না। এরপর রয়েছে সামাজিক সুরক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের সুপারিশ।

মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। শর্ত হলো কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। সরকার মূল্যস্ফীতির যে হিসাব দিচ্ছে তা বাস্তবসম্মত নয়। দ্বিতীয়ত খাদ্য মূল্যস্ফীতি কোনো অবস্থাতে বাড়ানো যাবে না।

সরকারের চলমান মেগাপ্রকল্প প্রসঙ্গে বারাকাত বলেন, মেগা প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের ঋণ নিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট যে যখন থেকে আমরা অন্তত ৪-৫টি মেগাপ্রকল্পের সুদ পরিশোধ শুরু করব, তখন থেকেই ঋণের ক্ষেত্রে সরাসরি রেড জোনে চলে যাব। যা আনুমানিক হিসেবে ২০২৭-২০২৮ সালে শুরু হওয়ার কথা। আর ২০৩২ সালে যখন ১২টি মেগা প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের দিকে যাব, তখন বিপদ আরো প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৈশ্বিক মহামন্দা, বৈশ্বিক মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব ভবিষ্যতে আমাদের বৈদেশিক ঋণের রেড ঝুঁকিতে ফেলবে কি না তা নিয়ে কঠিন চিন্তার প্রয়োজন রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের মেগা প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণ যখন শোধ করা শুরু হবে তখন আমরা সরাসরি রেড ঝুঁকিতে চলে যাবো। সংকট সমাধানে আর কোনো মেগা প্রজেক্ট নেয়া যাবে না, কোনো প্রজেক্টের মেয়াদ বাড়ানো যাবে না।

আবুল বারাকাত বলেন, আমরা প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দিতে বলেছি। কারণ পরোক্ষ করের কারণে মানুষে মানুষে বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। আমরা প্রস্তাব করছি দরিদ্র অতি দরিদ্রদের আগামী কয়েক বছরে নেটের বাইরে রাখার।

রাজস্ব আয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের বাজেটের আকার, যা বর্তমান বাজারের ৩.৪ গুণ বেশি। বিকল্প বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। যা প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটের ৯২ শতাংশের বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয়ের ৭৭ শতাংশ আসবে প্রত্যক্ষ কর থেকে, বাকিটা পরোক্ষ কর। যেখানে প্রত্যক্ষ কর থেকে আসে মাত্র ৪৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ৭ শতাংশ, যা সরকারের চলতি বাজেটে ঘাটতি তুলনায় অনেক কম। বাজেট ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক ঋণ কিংবা দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণের প্রয়োজন নেই। সমস্যাটা অর্থনৈতিক হলেও সমাধান তার রাজনৈতিক। বাজেট ঘাটতি পূরণে তিনি কালো টাকা ও বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরতের প্রতি জোর দেন।

সমিতির সভাপতি বলেন, আমাদের আরেকটি বড় কষ্ট হলো সবকিছু এককেন্দ্রিক ও ঢাকামুখী, যা উন্নয়ন সহায়ক নয়। তাই আমাদের প্রস্তাবে কোন্ মন্ত্রণালয় কোন্ বিভাগে যাবে এটি রয়েছে।

বারাকাত বলেন, আমাদের বাজেটে মোট বরাদ্দে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে। এখানে মোট বরাদ্দ বাজেটের ২১ শতাংশ। দ্বিতীয় অগ্রাধিকার খাত হচ্ছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত, তৃতীয় হচ্ছে কৃষি। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ সব ধরনের বৈষম্য বেড়েছে। এসব পাল্টাতে হবে, ঝুঁকি হ্রাস করতে হবে। সেজন্য আমরা গবেষণা ও বিজ্ঞান চর্চা অধিক গুরুত্ব দিয়েছি। গবেষণা উন্নয়নের গুরুত্ব বিবেচনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমরা নতুন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব করছি। যার নাম গবেষণা উদ্ভাবন বিচ্ছুরণ ও উন্নয়ন। এই মন্ত্রণালয়ের জন্য আগামী পাঁচ বছরে ৫ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলছি। আরেকটি মন্ত্রণালয়ের কথা আমরা বলেছি সেটা হলো গণপরিবহন মন্ত্রণালয়।

বিকল্প বাজেট সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও কনফারেন্সে দেশের ৬৪টি জেলা, ১০৭টি উপজেলা এবং ২১টি ইউনিয়ন থেকে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্য এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছেন।

চলতি অর্থবছরে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেটের আকার বা মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৭.৫ শতাংশ। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয় ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়