বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২২, ০০:০০

নওগাঁও ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ যাকারিয়া আল-মাদানীর বিদায় সংবর্ধনা
রেদওয়ান আহমেদ জাকির ॥

মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নওগাঁও রাশেদিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন আবু ইয়াহইয়া মোহাম্মাদ যাকারিয়া চৌধুরীকে গতকাল ১৯ মার্চ সকালে মাদ্রাসা মাঠে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মোঃ শাহজালাল হোসেনের সভাপ্রধানে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্য রাখেন বিদায়ী অধ্যক্ষ আবু ইয়াহইয়া মোহাম্মাদ যাকারিয়া চৌধুরী। তিনি ১৯৯২ সালে এই মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৯ সালে তিনি এ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি অত্র মাদ্রাসা হতে অবসরগ্রহণ করেন।

সুন্নিয়তের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক অধ্যক্ষ আল্লামা যাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানী ১৯৫৮ সালের ১ মার্চ হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বিশ্ব মুফতী আল্লামা শাহ ইসহাক (রহঃ) সাদ্রা দরবার শরীফের পীর এবং মাতা সারা খাতুন (রঃ) গৃহিণী।

বিশ্ব মুফতী আল্লামা শাহ ইসহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘সাদ্রা হামিদিয়া ফাযিল মাদ্রাসায়’ আল্লামা যাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানীর একাডেমিক শিক্ষা শুরু হয়। অত্র মাদ্রাসা থেকে তিনি যথাক্রমে ১৯৭২ সালে দাখিল, ১৯৭৪ সালে আলিম ও ১৯৭৬ সালে কৃতিত্বের সাথে ফাযিল সম্পন্ন করেন। এছাড়াও তিনি তাঁর পিতার নিকট হাদীস ও ফিকাহ কিতাবের দরস্ গ্রহণের পাশাপাশি বাল্যকালেই ফার্সি ও উর্দূ ভাষা আয়ত্ব করেন।

১৯৭৮ সালে তিনি এশিয়াখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমাদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া থেকে কামিল হাদিস (ফার্স্ট ক্লাস), এরপর ওয়াজেদিয়া কামিল মাদ্রাসা চট্টগ্রাম থেকে কামিল ফিকহ (ফার্স্ট ক্লাস) ও ১৯৮০ সালে মাদ্রাসা-এ আলিয়া ঢাকা থেকে কামিল তাফসির (ফার্স্ট ক্লাস)-এর পাশাপাশি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাফল্যের সাথে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

১৯৮১ সালে তিনি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ও শ্রেষ্ঠতম বিশ্ববিদ্যালয় ‘জামিয়া ইসলামিয়া মাদিনাতুল মুনাওয়ারা’-এর স্কলারশিপে দেশের সেরা ১০ জনের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ বছর গভীর সাধনার মাধ্যমে ‘কুল্লিয়াতুল লুগাতিল আরাবিয়্যা’ বিভাগে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে ‘লিসান্স ইন এরাবিক’ সম্পন্ন করেন।

তিনি বদরপুর দরবার শরীফের আ’লা হযরত পীর কেবলা ইমামে আহলে সুন্নাত, আল্লামা শাহ সাইয়্যেদ আব্দুর রব চিশতী (রহঃ)-এঁর একমাত্র কন্যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বৈবাহিক জীবনে তিনি ৫ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র ড. খাজা বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী, দ্বিতীয় পুত্র মুফতী হাম্মাদ বোখারী বিন মাদানী, প্রথম কন্যা নাঈমা চৌধুরী (ইন্তেকাল ১৯৯৪খ্রিঃ), তৃতীয় পুত্র মাওলানা আহমাদ রেযা চৌধুরী, দ্বিতীয় কন্যা সাইমা বিনতে মাদানী (ইন্তেকাল ২০২১খ্রিঃ), চতুর্থ পুত্র ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী বিন মাদানী ও পঞ্চম পুত্র ঈসা রুহুল্লাহ (ইন্তেকাল ২০০৮খ্রিঃ)।

১৯৮৭ সালে তিনি ফরাজিকান্দি আলিয়া (কামিল) মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯১ সালে তিনি স্বেচ্ছায় উক্ত মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দিয়ে চলে আসেন। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে নওগাঁও রাশেদিয়া ফাযিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৯ সালে তিনি উক্ত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন এবং সেই থেকে ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি অবসরগ্রহণ করেন।

অধ্যক্ষ আল্লামা যাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানী ১৯৮৭ সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি বিভিন্ন মসজিদে অবৈতনিকভাবে খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

অধ্যক্ষ আল্লামা জাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানী ১৯৯৫ সালে মতলব উপজেলার নওগাঁও নামক গ্রামে ‘বায়তুল আমান জামে মসজিদ’ নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি বিশ্ব হানাফী ফতোয়া বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৪ সালে ইছহাকিয়া হেলাল কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৯৫ সালে আহলুস সুন্নাহ সাইমা মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় ৬ বার এবং ২০০৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৯ বারসহ মোট ১৫ বার পবিত্র হজ¦ পালন করেন। তাঁর পূর্বপুরুষগণ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ইয়ামেন থেকে সন্ধীপে আসেন। সেখান থেকে পরবর্তীকালে নোয়াখালীর বশিকপুরে আসেন। সেখান থেকে তাঁর প্র-পিতামহ শাহসুফি আনতে মাহমুদ (রহঃ) চাঁদপুর সদরের বাখরপুরে দ্বীন প্রচারের সুবিধার্থে বসতি স্থাপন করেন। তাঁর দাদা শাহসুফি ফাজীলুদ্দীন (রহঃ) হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা নামক গ্রামে বসতি স্থাপন করেন এবং পিতা বিশ্ব মুফতী আল্লামা ইসহাক (রহঃ) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে সফর করেন ও অসংখ্য বেদ্বীনকে দ্বীনের সুশীতল ছায়াতলে আচ্ছাদিত করেন। ১৯৩১ সালে দ্বীনের খেদমতে তাঁর পিতা বিশ্ব মুফতি আল্লামা ইসহাক (রহঃ) ‘সাদ্রা হামিদিয়া ফাযিল মাদ্রাসা’ প্রতিষ্ঠা করেন। যেখান থেকে অগণিত মুহাক্কিক আলেম বের হয়ে দ্বীন ইসলামের খিদমত করেন।

তিনি যে সকল বুযুর্গানে দ্বীন খিলাফত প্রদান করেন তাঁরা হলেন বিশ্ব মুফতী আল্লামা শাহ ইসহাক (রহঃ), প্রতিষ্ঠাতা ঐতিহাসিক সাদ্রা দরবার শরীফ। আওলাদে রাসূল, সাইয়্যেদ আলভী আল মালেকী (রহঃ) যিনি মক্কা শরীফে পবিত্র খানায়ে কাবায় দীর্ঘ ৩০ বছর হাদিস শরীফের দরস্ প্রদান করেছেন। এছাড়াও শাইখ হাম্মাদ (রহঃ), শাইখ আহমাদ বিন আহমাদ সাঈদ আল-মুজাদ্দেদী (রহঃ), মাদিনাতুল মুনাওয়ারা এবং আল্লামা শাহ্ সাইয়্যেদ আব্দুর রব চিশতী (রহঃ) বদরপুর দরবার শরীফ, পটুয়াখালী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়