সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

লেপ্টে যাচ্ছে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক

৪ লেন করার দাবি

লেপ্টে যাচ্ছে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের বিটুমিন আর পাথরের ঢালাই সড়কের বাইরে অর্থাৎ শোল্ডারে (সড়ক বিভাগের ভাষায় ‘কাঁধে’) গিয়ে মানবদেহের ফোঁড়ার মতো ফুলে থাকতে দেখা গেছে। এই অবস্থা সড়কের প্রায় পুরো অর্ধেক জুড়ে। লেপ্টে যাওয়া (সড়ক বিভাগের ভাষায় ‘হাম’) অংশ দিয়ে গাড়ি চলাচল বিপজ্জনক বিধায় সড়কের এই অংশে চালকরা দুইলেনের বদলে একলেনে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। সড়কের লেপ্টে যাওয়াকে কাজের মান খারাপ হয়েছে কিংবা সহ্যক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি যানবাহন চলাচলকে দায়ী করছেন অনেকেই। অতিরিক্ত গাড়ি চলাচলের কারণে প্রতিদিন সড়কের কোনো না কোনো অংশে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে চলছে। মূলত এ জন্যেই সড়কটি এখন চার লেন করার দাবি উঠেছে সর্ব মহল থেকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, সড়কের ফিজিবিলিটি দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।

সরজমিনের দেখা যায় চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের চাঁদপুর অংশের বেহাল দশা। দীর্ঘদিন মেরামত না হওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে গর্ত, আবার কোথাও কোথাও পিচ ও কংক্রিট ঢালাই লেপ্টে গিয়ে স্তূপ হয়ে গেছে। বিশেষ করে হাজীগঞ্জের এনায়েতপুর থেকে শুরু করে শাহরাস্তি উপজেলার ওয়ারুক, কালিয়াপাড়া, জগৎপুর বাজার হয়ে কুমিল্লা অংশ মুদাফরগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত সড়কের একপাশ ধরে গাড়ি চলাচল করতে হচ্ছে। সড়কের এই অংশ কয়েক গজ পর পর লেপ্টে গিয়ে বিটুমিন আর পাথরের ঢালাই মূল সড়ক বাদ দিয়ে সড়কের শোল্ডারে জমে স্তূপ হয়ে রয়েছে। সড়কের এই অংশ এমনভাবে লেপ্টে রয়েছে, যার মধ্যে দৈবাৎ কোনো গাড়ি উঠে গেলে তা উল্টে যাবেই।

আরো দেখা যায়, গত কয়েক বছর আগের চেয়ে বর্তমান সময়ে এই সড়কে বেড়েছে গাড়ি চলাচলের চাপ। সড়কটিতে বর্তমানে পদ্মা, বোগদাদ, রিল্যাক্স, একতা, সততা, সিএনজি চালিত স্কুটার, বালুবাহী ট্রাক, মালবাহী ট্রাক, তেলের ট্রাক (ভাউচার)সহ নিয়মিত ৫ সহ¯্রাধিক পরিবহন চলাচল করছে। তাই নিয়মিতই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৪৭ এবং ১৯৬৪-৬৫ সালে এলএ কেস-১ ও কেস-২-এর মাধ্যমে কুমিল্লা-লালমাই-লক্ষ্মীপুর-বেগমগঞ্জ সড়কের ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এ সড়কের কুমিল্লা থেকে লালমাই অংশ ফোরলেন ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। লালমাই থেকে চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী পর্যন্ত এ সড়কের সংযোগ রয়েছে। প্রায় ১৫২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কটি গণপরিবহন ও হালকা-ভারী যানবাহন চলাচলের জন্যে তুলনামূলক সরু, অতিরিক্ত পরিবহনের চাপ ও সড়কের ভঙ্গুর অবস্থার কারণে দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, যানজটের কারণে চাঁদপুর থেকে কুমিল্লা যেতে এক ঘন্টার স্থলে প্রায় ৩ঘন্টা লাগছে।

সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী কয়েকজন চালক জানান, সড়কে গাড়ি বেড়েছে, কোনোভাবেই এখন আর গাড়ির গতি ৬০ কিলোমিটারের বেশি তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া আমরা যারা বড় পরিবহনে চাকুরি করছি, আমাদেরকে সময় মেনে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। সড়ক লেপ্টে এমন হাল হয়েছে, যা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার এমন সব অদক্ষ চালক সড়কে গাড়ি চালাচ্ছে, তাদেরকে সামাল দিয়ে গাড়ি চালানো আমাদের জন্যে দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

ওয়ারুক বাজার এলাকার সফিক, কালিয়াপাড়া এলাকার রুহুল আমিন জানান, মাত্র কয়েক বছর হলো সড়কের দুপাশ বাড়ানো হয়েছে, আর সড়কে কাজ করা হয়েছে। এতো সকালে সড়ক এভাবে লেপ্টে যাওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। কাজের মান ভালো হলে এমন তো হবার কথা নয়। এছাড়াও হাজীগঞ্জ থেকে ১০ চাকার বড় বড় বালুবাহী প্রায় অর্ধশত ট্রাক এখান দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ভারী বালুবহনকারী ট্রাক চলাচল রোধ করা না গেলে এই সড়ক কোনোভাবেই ভালো রাখা যাবে না।

‘নিরাপদ সড়ক চাই’ চাঁদপুর জেলা সভাপতি এমএ লতিফ জানান, যে কোনো সড়ক চার লেন করতে হলে প্রস্থ ৯০ফুট প্রয়োজন হয়। এ সড়কের যেখানে ন্যূনতম একোয়ার (অধিগ্রহণ) করা আছে ১২০ফুট, সর্বোচ্চ ১৬০ ফুটও রয়েছে। এমন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত সড়কটি ফোরলেন করার দাবি জানালেন নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের এই নেতাসহ অন্য নেতারা।

হাজীগঞ্জ সড়ক উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কালিয়াপাড়া শাখা) মোঃ রমিজ উদ্দিন মুঠোফোনে চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, সড়কের লেপ্টে যাওয়া অংশ মেরামতের জন্যে আমরা ইতিমধ্যে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। সেই প্রস্তাবনা অনুমোদন হলেই টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হবে।

চাঁদপুর সড়ক বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মোশারফ হোসেন জানান, সড়কের দু-একটি জায়গায় বিশেষ করে যেখানে সড়ক ঘিরে বাজার রয়েছে সেখানে যানজট তৈরি হয়। যদিও সেখানে সড়কটি ফোর লেন করা। কিন্তু গাড়ির চাপ ও বাজার ঘিরে মানুষের ভিড় বিড়ম্বনার কারণ। তারপরেও সরকারের দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন প্রকল্পে এ সড়কটি অন্তর্ভুক্ত করতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়