প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২১:০৯
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে চাঁদপুরে স্মরণসভা
ছাত্র-জনতার সমন্বিত গণঅভ্যুত্থানে দেশের জনগণ নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে : জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (৩০ নভেম্বর) সকাল ১০টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা হয়। চাঁদপুর জেলা প্রশাসন আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, পিপিএম।
|আরো খবর
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইমরান হোসেনের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরে আলম দীন, আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. একেএম মাহাবুবুর রহমান, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত প্রমুখ।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার পক্ষে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান বিন্দু, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাজাহিদ শিহাব, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব ভূঁইয়া, বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান শেখ, রিকশা চালক কালু হালদার ও চাকরিজীবী তরিকুল ইসলাম।
নিহতদের স্বজনদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শহিদ আবুল হোসেন মিজির স্ত্রী, শহিদ আব্দুল আল কবিরের স্ত্রী ও শহিদ রেহান খানের মামা প্রমুখ।
সভার শুরুতে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ঘটনার ভিডিওচিত্র তুলে ধরা হয় এবং আহত ও শহিদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে একমিনিট নীরবতা পালন। অনুষ্ঠান শেষে বিশেষ দোয়া হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন চাঁদপুর কালেক্টর জামে মসজিদের ইমাম মাওঃ মোশারফ হোসেন।
স্মরণসভায় প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার সমন্বিত গণঅভ্যুত্থানে দেশের জনগণ এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে। জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ এখন সবার দায়িত্ব। গণঅভ্যুত্থানে নতুন একটি অধ্যায় সূচনা হয়েছে। আমরা চাই আধুনিক ও বৈষম্যহীন সমাজ।
তিনি আরও বলেন, শহিদ ও আহতদের বীরত্বগাঁথা নিয়ে গল্প করলাম এটাতেই আমাদের দায়িত্ব শেষ নয়। তাদের এখন কী প্রয়োজন, সেটার দিকে আমেোদর নজর দিতে হবে। এসব বিষয়গুলো আমাদের সবসময় গুরুত্ব দিতে হবে। যারা আহত হয়েছেন, যেখানেই হোক না কেনো তার সর্বোচ্চ সেবা দিতে চেষ্টা করতে হবে। আমাদের এখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকলে যেখানে চিকিৎসা হবে সেখানে যোগাযোগ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। গরিব হলে তার যাতায়াত ও অর্থের ব্যবস্থাও করে দিতে হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমতো এসব পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত আমি নিজে যতোজন শহিদের বাড়িতে গিয়েছে তাদেরকে আর্থিক ও বিভিন্ন সহযোগিতা করেছি। যারা আহত আছেন তাদের সাথে আমার সরাসরি কথা হয়। তাদের যে বিষয়ে সমস্যা সেগুলো আমি নিজেই সমাধানের চেষ্টা করি। ওই বিষয়টি অন্য কাউকে রেফার করি না। সুতরাং আপনারা যারা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বে আছেন আপনারাও সেভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন, দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন এবং যে মায়েরা সন্তান হারিয়েছেন সবারই আত্মত্যাগ সফল হোক। সবাইকে নিয়ে আমরা যেনো সুন্দর বাংলাদেশ, সুন্দর সমাজ ও সুন্দর বিশ্ব গড়তে পারি।
পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব বক্তব্যে বলেন, শহিদ ও আহতদের প্রত্যেকটি ঘটনাই একটা করে ইতিহাস। তাদের এসব ঘটনা পর্যালোচনা করলে ইতিহাস রচনা হবে। কারণ তার নিজের ও পরিবারের কথা চিন্তা না করে দেশের কথা এবং একটি নতুন বাংলাদেশের কথা চিন্তা করেছেন। তারা জুলাই থেকে যে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে আমাদেরকে সেই উদ্দেশ্য বুকে ধারণ করতে হবে। তাদের এই আত্মত্যাগই হবে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা।
স্মরণসভায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আহত ও শহিদ পরিবারের সদস্য ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।