রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:১১

টক অফ দ্যা হাজীগঞ্জ দারোগা মাহফুজ

কামরুজ্জামান টুটুল
টক অফ দ্যা হাজীগঞ্জ  দারোগা মাহফুজ

গত কয়েক দিন ধরে টক অফ দ্যা হাজীগঞ্জে পরিণত হযেছে দারোগা (উপ- পরিদর্শক) মাহফুজুর রহমান। হাজীগঞ্জ থানায় সেবা নিতে আসা এক নাগরিক থেকে গুণে গুণে ঘুষের টাকা নেবার ভিডিও চারদিকে চাউর হলে তিনি টক অফ দ্যা হাজীগঞ্জে পরিণত হন। অবশ্য ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ তাকে প্রত্যাহার করে চাঁদপুর পুলিশ লাইন্স-এ সংযুক্ত করা হয়েছে।

মাহফুজুর রহমান ঘুষের টাকা গুণে পকেটে নেওয়ার অভিযোগ নিশ্চিত হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাতে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব নিশ্চিত করেছেন।

ভিডিওতে দেখা যায়, হাজীগঞ্জ থানার এসআই মাহফুজুর রহমান স্থানীয় একটি দোকানের চেয়ারে খোশ মেজাজে বসে আছেন। এ সময় তিনি বলছেন, ‘১০ হাজার টাকা কইছি।’ সামনে বসে থাকা এক ব্যক্তি বলছেন, ‘সবুরে মেওয়া ফলে।’ পুলিশ কর্মকর্তা তার দিকে মনোযোগ দিয়ে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলেন, ‘এক টাকাও কম হইত ন।’ সামনে বসে থাকা ব্যক্তি বলেন, ‘বস, একটু বসেন। ’ এসআই তখন মুচকি হাসেন। মুখে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলেন, ‘কাম শেষ, এখন টিয়া।’ এ সময় আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘মাহফুজ ভাই, আসলে যে মুরুব্বি, সে বেকার মানুষ তো জানেন।’

এ সময় এসআই মাহফুজ হেসে হেসে বলেন, ‘বেকার না আকার।’ তখন দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘যাই হোক তার ছেলেমেয়ে বাদ, তিনি বেকার মানুষ। তিনি আগে ড্রেজার ব্যবসা-টেবসা করতেন। অনেকের কাছে টাকা পাওনা ছিলো। এর আগে যাই দিছি দেখছেননি। তারে একজন দিয়ে গেছে, তার আবার ওষুধ কিনা লাগে, এরপর এই ঝামেলা লাগি গেছে।’ এ সময় মাহফুজ বলেন, ‘দেন দেন।’ তখন প্রথম ব্যক্তি বলছেন, ‘গরিব মাইনসের লাগি একটু দিলটা নরম করেন।’

এরপর মাহফুজ আরেক ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে দ্বিতীয় ব্যক্তির দিকে হাত এগিয়ে দিলে ওই ব্যক্তি মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে মাহফুজের হাতে দেন। ওই ব্যক্তি টাকা দিতে দিতে বলেন, ‘আমি না পারতে এ পর্যন্ত আসলাম। বিশ্বাস করেন। আমি আরেক দিন এসে ডিটেইলস বলব, তখন বুঝবেন। না হলে আমি আপনার কাছে আসতাম না। যদি অফিশিয়ালি সলিউশন করতে পারতাম।’

এ সময় প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘টাকা গইন্নেন না, গইন্নেন না।’ তখন মাহফুজ বলেন, ‘টাকা গুণে নেওয়া সুন্নত।’ প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘রুম অন্ধকার, আল্লাহ কইছে মাইনসেরে দেহাই কিল্লাই।’ এ সময় মাহফুজ মুচকি হাসতে হাসতে টাকা গুণছেন কয়েকবার। দ্বিতীয় ব্যক্তি বলছেন, ‘চা খাবেন?’ মাহফুজ জবাব দেন, ‘পরে খাব’। এই বলে টাকা হাতের মুঠোয় নিয়ে বের হয়ে যান।

কয়েকদিন আগে হাজীগঞ্জ বাজারের একটি দোকানের সিসিটিভির ফুটেজে এমন চিত্র ধরা পড়ে। এদিকে ঘুষ খাওয়ার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে বলেন, এটি তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র। তবে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমানের সামনে ফুটেজ উপস্থাপন করা হলে তিনি চুপসে যান।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব জানান, ভিডিও ফুটেজ দেখে এরই মধ্যে উপ-পরিদর্শক মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাকে হাজীগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহার করে চাঁদপুর পুলিশ লাইন্স -এ সংযুক্ত করা হয়েছে। তা ছাড়া বিভাগীয় ব্যবস্থা হিসেবে জ্যেষ্ঠ একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত শুরু করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ফরিদগঞ্জ থানা থেকে হাজীগঞ্জ থানায় বদলি করা হয় উপ-পরিদর্শক মাহফুজুর রহমানকে। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। কিছু দিন আগে তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)তে বদলি করা হলেও অদৃশ্য কারণে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানা ছাড়েননি তিনি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়