প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৮:৪৪
চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও সিভিল সার্জনের সাথে সনাক-এসিজির সভা
সুচিকিৎসা প্রাপ্তিতে সেবাগ্রহীতাদের সচেতন হতে হবে : তত্ত্বাবধায়ক
জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর : সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ সাহাদাৎ হোসেন
চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-চাঁদপুর ও অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ (এসিজি)-এর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ২৭ নভেম্বর সোমবার সকাল ১০টায় চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বেলা ১১টায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সভাকক্ষে জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ও সনাকের অ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব সভায় সভাপতিত্ব করেন সনাক চাঁদপুরের সভাপতি ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সনাকের সাবেক সভাপতি রোটাঃ কাজী শাহাদাত।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে অনুষ্ঠিত সভায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমান প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে এ জেলাসহ পাশর্^বর্তী জেলাগুলোর মানুষজন চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। শয্যার দ্বিগুণ রোগী হওয়ায় অনেক সময় ফ্লোরে সেবা দিতে হয়। সারাদেশের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালেরও একই অবস্থা। আমাদের হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ বেশি থাকে। শিশু রোগীদের সেবায় আইসিইউর ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, হাসপাতালে সেবার মান বৃদ্ধিতে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস ইউনিট, ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনসহ সমৃদ্ধ প্যাথলজি বিভাগ রয়েছে। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রী ও চাঁদপুর পৌরসভার মেয়রের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হাসপাতালে বহু উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে।
এসিজির অ্যাডভোকেসি সভায় উত্থাপিত সমস্যাবলির আলোকে ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের সামগ্রিক সেবার মান ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রোগীদের সচেতনতার অভাবে আয়া-ক্লিনাররা বিপাকে পড়েন, যত্রতত্র রোগীরা বর্জ্য ফেলে পরিচ্ছন্নতা বিনষ্ট করেন। এজন্যে সচেতনতার প্রয়োজন আছে। এছাড়া খাবারের মান বৃদ্ধি ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দালাল নিয়ন্ত্রণে হাসপাতালে ১২ জন আনসার সদস্য নিয়োগ দেয়া হবে। সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচার করা হয়। সুচিকিৎসা প্রাপ্তিতে সেবাগ্রহীতাদের সচেতন হতে হবে।
সনাক সভাপতি ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া বলেন, হাসপাতালের সাবেক আবাসিক মেডিকেল অফিসার প্রয়াত ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা রুবেল করোনা মহামারির সময় রোগীদের আন্তরিকতার সাথে নিরলসভাবে সেবা দিয়েছেন। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে হাসপাতালে কিছু করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। একই সাথে কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনকালে হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ আনোয়ারুল আজিম ইন্তেকাল করেন, তার স্মৃতিরক্ষার্থে এবং হাসপাতালের প্রয়াত জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলামের স্মৃতি রক্ষার্থে কিছু করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমানের নেতৃত্বে সেবার মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কিছু অসাধু চিকিৎসক হাসপাতালে ডিউটি চলাকালে হাসপাতাল সংলগ্ন ক্লিনিকসহ অন্যত্র রোগী দেখেন। এজন্যে চিকিৎসকদের ডিউটির সময় যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে। হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানের অপ্রয়োজনীয়তা নিয়েও তিনি কথা বলেন। কারণ এখানে ন্যায্যমূল্যে ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিনের। এছাড়া জনবল সঙ্কট দূর করতে ম্যাটসের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্ন হিসেবে নিয়োগ দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এরপর বেলা ১১টায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সভাকক্ষে সিভিল সার্জনের সাথে সনাকের অ্যাডভোকেসি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ সাহাদাৎ হোসেন। সভার শুরুতে হানারচর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র নিয়ে কমিউনিটি অ্যাকশন মিটিংয়ে মাধ্যমে উক্ত এলাকার জনগোষ্ঠী থেকে পাওয়া সমস্যাগুলো তুলেন ধরেন সনাক সভাপতি ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া।
প্রতিউত্তরে সিভিল সার্জন বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। আমাদের ইউনিয়ন সাব-সেন্টারগুলোতে নতুন করে জনবল নিয়োগের সম্ভাবনা কম। তবে হানারচর ইউনিয়ন সাব-সেন্টারটির উন্নয়নে তথা বর্তমান জনবলকে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্টের মাধ্যমে আরো কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন, প্রতি ছয় হাজার জনগোষ্ঠীর জন্যে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। আমাদের ৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রতিনিয়ত এক্স-রে সহ অন্যান্য সেবা প্রদান করা হয়। প্রত্যেকটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই নরমাল ডেলিভারি সেবা প্রদান করা হয় এবং ওষুধের কোনো ঘাটতি নেই। ডায়াবেটিস, কিডনী, প্রেসার চিকিৎসাসেবা প্রদানে আলাদা চিকিৎসক রয়েছেন।
সভাগুলোতে বিগত সভার কার্যবিবরণী পাঠ করেন টিআইবির এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মোঃ মাসুদ রানা। বক্তব্য রাখেন সনাক সদস্য এবিএম নজরুল আমিন, মোঃ আসিফ উল ইসলাম, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ জাহিদুল ইসলাম, এসিজির সহ-সমন্বয়ক আশিক বিন রহিমসহ অন্যরা।
উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডাঃ শাখাওয়াত হোসেন, পরিসংখ্যানবিদ তাহমিনা রহমান, হিসাব রক্ষক ইলিয়াছ মোল্লা এবং হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার শামীমা আফরোজা, সিনিয়র স্টাফ নার্স ফাতেমা খাতুন, হিসাব রক্ষক মোঃ ওয়ালী উল্লাহ, স্বাস্থ্য শিক্ষাবিদ মোঃ আমিনুল ইসলাম, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা নুরুদ্দিন মোঃ জাহাঙ্গীর, প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মোঃ ফারুকুল ইসলাম, ক্যাশিয়ার মোঃ দিদারুল ইসলাম, লিলেন কিপার সুমন চন্দ্র দাস, জুনিয়র মেকানিক মোঃ মাহবুবুর রহমানসহ হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। এ সময় এসিজি ও ইয়েস গ্রুপের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।