শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫  |   ৩৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৮

এসএমএম আলমের মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা

অনলাইন ডেস্ক
এসএমএম আলমের মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা

চাঁদপুরের কৃতী সন্তান, জাতীয় পার্টি (জাফর)-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএমএম আলম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না... রাজেউন)। ঢাকাস্থ একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস করেন। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ বহু আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৪ বছর। জানা যায়, এসএমএম আলম বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই ২০২৫) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকাস্থ নিজ বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক পরিবারের সদস্যরা তাঁকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এসএমএম আলম কয়েক বছর পূর্বে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ছোট ছেলের কাছে চলে যান। সেখানে ওপেন হার্ট সার্জারী শেষে ২/৩ বছর অস্ট্রেলিয়া অবস্থান করেন। কয়েক মাস পূর্বে তিনি স্ত্রীসহ পুনরায় দেশে ফিরে আসেন। শুক্রবার (১১জুলাই) বাদ জুমা জানাজা শেষে চাঁদপুরের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

এসএমএম আলম ছাত্রজীবন থেকে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ছাত্র রাজনীতিতে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে ভাসানী অনুসারী হিসেবে ভাসানী ন্যাপের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আশির দশকে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ জাতীয় পার্টি গঠন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে জাতীয় পার্টিতে যোগদানের আহ্বান জানালে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যোগদান করেন। রাজনৈতিক দলের একজন নেতা হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সুবক্তা। এজন্যে তিনি সকল মহলে বেশ পরিচিত ছিলেন। এসএমএম আলম জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। এরশাদ জীবিত থাকাবস্থায় জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতাদের সাথে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ জাতীয় পার্টি (জাফর) নামে আলাদা রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এই দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেন।

চাঁদপুর জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতিতে খুব ভালো করেছেন এমন লোকের সংখ্যা ভুরিভুরি নয়। রাজধানী ঢাকা সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও গাজীপুরসহ আশেপাশের এলাকা থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনেকের তরতর করে এগিয়ে যাওয়াটা যতোটা সহজ, চাঁদপুরসহ অন্যান্য এলাকা থেকে এগিয়ে যাওয়াটা ততোটা সহজ নয়। এসএমএম আলম চাঁদপুরে তাঁর ছাত্রজীবনে রাজনীতির শক্ত ভিত তৈরি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে অনেক বড়ো বড়ো রাজনৈতিক নেতার সাহচর্য-সান্নিধ্য পেয়েছেন এবং দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রপ্ত করেছেন। সে সুবাদে তিনি রাজনীতিতে চাঁদপুরের স্বল্পসংখ্যক সুপ্রতিষ্ঠিত মানুষদের একজন হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। অথচ দুর্ভাগ্য প্রতিনিয়ত তাড়া করে ফিরছিলো তাঁকে। একটা দুর্ভাগ্য হলো, তিনি চাঁদপুর সদরের বাসিন্দা ছিলেন, যেখান থেকে সংসদ নির্বাচনে তাঁর দলীয় মনোনয়ন পাওয়াটা সংগত ছিলো। কিন্তু রাজনীতির জটিল মারপ্যাঁচে আনকোরা কম যোগ্য লোক বারবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন, তিনি সেই মনোনয়ন পাননি, আর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিদ্রোহী প্রার্থীও হননি। তাঁর আরো দুর্ভাগ্য, তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় উপযুক্ত বড়ো ছেলেটিকে অকালে হারিয়েছেন, আরো হারিয়েছেন তাঁর ছোট ভাই প্রতিভাবান সাংবাদিক, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলমকে। এভাবে অনেক শোক ও কষ্ট নিয়ে এবং রাজনৈতিকভাবে বঞ্চিত হয়ে, কম-বেশি অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি রাজনীতিতে তুলনামূলকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন। তবে দলছুট হননি, আদর্শ বিচ্যুত হননি। আমরা এসএমএম আলমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়