রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

বৌদ্ধধর্ম ও বিজ্ঞান
অনলাইন ডেস্ক

ধর্ম মানুষের ও জগতের কল্যাণের জন্যে স্বআলোকিত মহামানবের চেতনা ও অভিজ্ঞতালব্ধ দর্শন ও অনুশীলনের অতুলনীয় পন্থা মাত্র। ধর্ম কোনো স্রষ্টা নামক অদৃশ্য ও কল্পিত অস্তিত্ব দ্বারা মানুষের উপর আরোপিত কোনো বিষয় নয়। যেহেতু ধর্মের সৃজন ও বিস্তারণের মূখ্য উদ্দেশ্য মানবতার কল্যাণ, ব্যক্তির নিজের ও জগতের, সেহেতু ধর্মের মূল ভিত্তি যতোটা না বিশ্বাস তার চেয়ে অধিক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনষ্কতা। সেই নিরিখে এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের এক ও অনন্য স্বআলোকিত বোধিসম্পন্ন পরম সত্তা মহাকরুণানিধি গৌতম বুদ্ধের আবিষ্কৃত ধর্মমত আসলে একটি বিজ্ঞানসম্মত পথ অনুশীলন ব্যতীত তথাকথিত কোনো অবিদ্যাসম্ভূত ধর্মাচরণ নয়। এটি একাধারে বিজ্ঞান ও দর্শনের এক অপূর্ব মেলবন্ধন যাদের উভয়েরই মূলভিত্তি যুক্তি ও জিজ্ঞাসা। এতে ভক্তি বা বিশ্বাসের চেয়ে বৈজ্ঞানিক সত্যের সার্থকতা খুঁজে পাওয়াই অধিকতর মৌলিক।

বুদ্ধের বুদ্ধত্ব লাভের প্রক্রিয়া হতেই আমরা বিজ্ঞানকে মূখ্য ভূমিকায় দেখতে পাই যেখানে মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন না করে বুদ্ধ মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছিলেন। বুদ্ধ নিজেকে বিভাজ্যবাদী হিসেবে ব্যাখ্যা করে অতি বিলাস ও অতিবৈরাগ্য পরিহার করেছিলেন। কায়-মন-বাক্য এই তিন দ্বার দিয়ে প্রমাদ সংঘটিত হয় বিধায় বুদ্ধ অপ্রমাদে জীবনযাপনের উপদেশ দিয়েছেন এবং খুব চমৎকার করে প্রতীত্য সমুৎপাদ নীতি প্রবর্তন ও ব্যাখ্যা করেন। ‘ইহা করিলে উহা হইবে’ এই অমোঘবাণী নিয়ে বুদ্ধ কর্মফলকেই জীবনের প্রবাহের ধারা হিসেবে ব্যক্ত করেছেন। এই কারণে বৌদ্ধ ধর্ম সর্বাংশে একটি অনাত্মবাদী ধর্ম। দেহের কোনো অংশে যেহেতু শক্তি ও পদার্থ বিনা অন্য কিছুর অস্তিত্ব সম্ভব নয় সেহেতু কোনো আত্মাই নেই-এই বৈজ্ঞানিক সত্য দিয়ে বুদ্ধ কর্মফলের প্রবহমানতা দিয়ে পুনর্জন্ম ব্যাখ্যা করেছেন।

অতিভোজন ব্যক্তির মেদ বাহুল্যের কারণ এবং এই মেদ বাহুল্য ব্যক্তির চিত্ত চাঞ্চল্য ঘটায়। বুদ্ধ এই বৈজ্ঞানিক সত্যকে অনুধাবন করেই বিকাল-ভোজন অনুমোদন করেননি। আজ যে অটোফেজির কথা বিজ্ঞান বলছে, বুদ্ধ তা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন দুই হাজার পাঁচশ ষাট বছরেরও আগে। তাই তিনি বিকেলে ভোজনকে কখনোই অনুমোদন করেননি। সকালের ভোজনলব্ধ শর্করা যাতে দেহে মেদের সৃষ্টি না করে এবং অতিরিক্ত মেদকলা যাতে অটোফেজির মাধ্যমে বিনষ্ট হয় সেই ব্যবস্থার জন্যে বিকাল-ভোজনে বিরতি একটা উৎকৃষ্ট বৈজ্ঞানিক পন্থা।

সপ্তাহের সাতদিন বিজ্ঞানের চোখে সমান। শনি বা মঙ্গলবারের মধ্যে যেমন কোনো কু বা খারাপ নেই তেমনি বৃহস্পতিবারের মধ্যেও কোনো সৌভাগ্য লুকিয়ে নেই। আবার জন্মদিন বলেই সেদিনকে উপেক্ষা করতে বিজ্ঞান বলেনি কখনো। ঠিক একথাই বুদ্ধ বলেছেন তাঁর লব্ধ প্রজ্ঞার আলোকে বোধিসত্ত্ব থাকাকালীন।

গৃহীর পঞ্চশীল কিংবা শ্রমণের দশশীল বা বৌদ্ধ ভিক্ষুর দুইশ বিশ শীল পালনীয় হয়ে উঠার মূলে আছে বিজ্ঞানসম্মত চিন্তা আর তার বাস্তবায়নে। আজকের চিকিৎসাবিজ্ঞানে কোমড় ব্যথা উপশমে শক্ত বিছানায় শোয়ার ব্যবস্থা দেয়া হচ্ছে। অথচ বুদ্ধ আজ থেকে আড়াই হাজারেরও অধিক বছর আগে উচ্চ শয্যা বা মহাশয্যায় না শোয়ার শিক্ষা প্রদান করেছিলেন। বুদ্ধের শিক্ষায় কোনো পূজা নেই, কেবল শরণের কথা বলা হয়েছে। আজকাল বুদ্ধের মনোরম মূর্তি তৈরি করে মহাসমারোহে তার পূজার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অথচ বুদ্ধ বলেছেন, আত্মদীপ হয়ে বিচরণ করতে। তিনি আত্মশরণকে অনন্য শরণ হিসেবে দেশনা করেছেন। নিজেকেই নিজের নাথ হয়ে নিজের ত্রাণে এগিয়ে আসতে বলেছেন। মানুষকে ত্রাণকারী ভিন্ন কোনো সত্তা নাই যতোক্ষণ না মানুষ নিজেই নিজের ত্রাণে এগিয়ে না আসে।

বুদ্ধ যে দানের কথা বলেছেন তা কোনো বুদ্ধমূর্তির সামনে দানের কথা বলেননি। বুদ্ধ আর্ত ও পীড়িত এবং দরিদ্র মানুষকে দানের কথা বলেছেন। দান বলতে প্রভূত অন্ন ও খাদ্যদ্রব্য, ফল-ফলাদি বুদ্ধমূর্তির সামনে দিয়ে বিনষ্ট করার কথা দেশনা করা হয়নি। এই দান হলো মানবকল্যাণে দান।

ধ্যান বা বিপাসনা হলো মনকে নিয়ন্ত্রণের এক বিজ্ঞানসম্মত উপায়। ধ্যান হলো মনকে কেন্দ্রীভূত করে একটা বিন্দুতে নিয়ে আসা যাতে একাগ্র মন হতে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও পথনির্দেশ পাওয়া যায়। ধ্যান মানেই অস্থিরতাকে স্থৈর্য দিয়ে জয় করা। ধ্যানে দেহের ও মনের উভয়ের ব্যায়াম হয়। বুদ্ধ মনকে অতিমাত্রায় বেগবান বলে উল্লেখ করেছেন। বাস্তবিক মনের বেগ আলোর বেগের চেয়ে অধিক এবং মন সর্বস্তরে সহজে অনুপ্রবেশশীল। মন হলো অতি উচ্চস্থান হতে পতনশীল জলপ্রপাতের বিপুল জলরাশির সামনে অস্থির চারাগাছের ন্যায়। বুদ্ধ কর্তৃক মনের যে সংজ্ঞা আমরা পাই তাতেই বৌদ্ধধর্মের বিজ্ঞান-অন্বিষ্টতা সহজবোধ্য হয়ে উঠে।

বৌদ্ধধর্মেই জগত এর মধ্যে ইউনিভার্সের দর্শন মিলেছে। এই পৃথিবী ছাপিয়ে যে ব্রহ্মা-, তাকে ছাপিয়ে জগত। তাই নির্বাণ হলো মর্ত্যলোক, স্বর্গলোক ও ব্রহ্মা- পেরিয়ে এক অবাঙ্মানসগোচর অবস্থা। বুদ্ধই ঋদ্ধিবলের মাধ্যমে আজকের টেলিপ্যাথিকে ব্যবহার করে গেছেন অনেক আগেই।

বৌদ্ধধর্মের পরতে পরতে বিজ্ঞান। বিজ্ঞানই বুদ্ধের বোধিপ্রাপ্তির মূল ভিত্তি। অন্ধ ভক্তি-বিশ্বাস কিংবা অদেখা কারু উপর সমর্পণ নয়, এসো, দেখো, গ্রহণযোগ্য হলে গ্রহণ করো, অন্যথায় বর্জন করো-এই চিরায়ত আহ্বান দিয়েই বৌদ্ধধর্ম আজ জগৎ ত্রাণে পথ চলেছে কোটি কোটি উপাসকের চর্চায় ও অনুশীলনে।

* সুচিন্তা বিভাগে লিখুন আপনিও...

প্রিয় পাঠক, সুচিন্তা বিভাগে লিখুন আপনিও। সমসাময়িক বিষয়াবলি নিয়ে লেখা পাঠান আমাদের ঠিকানায়।

লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়