রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

কাজী নজরুল : মানবতা, ধর্ম, রাজনীতি ও বিপ্লবের এক সুষম মিশ্রণ
অনলাইন ডেস্ক

কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্পর্শকাতর মনের মানুষ ছিলেন। তাই মানুষের দুঃখ-কষ্টের ব্যাপারে নির্বিকার থাকতে পারতেন না। বৈষম্য মানতে পারতেন না। কোনো মানুষের ওপরই অত্যাচার, অবিচার, অসম্মান করা হলে সেটা মানতে পারতেন না। এসব ব্যাপারে নির্বিকার এবং উদাসীন থেকে শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টি করার কথা ভাবতে পারতেন না। সেজন্যে তাঁর সাহিত্যসাধনা তার কাছে কোনো বিলাসিতার বিষয় ছিলো না। শিল্পের জন্যে শিল্প সৃষ্টি করার বিলাসিতা তাঁর ছিলো না। সাম্য ও সহাবস্থানকামী মানুষ হিসেবে অত্যন্ত সংবেদনশীল মন এবং গঠনমূলক চিন্তা-ভাবনা নিয়ে আক্ষরিক অর্থেই সব মানুষের জন্যে বাসযোগ্য পৃথিবী সৃষ্টি করার জন্যে অর্থনৈতিক সাম্য ও সামাজিক সাম্য এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সমাজের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত, আইনগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহাবস্থানের সংস্থান সৃষ্টি করা হোক, এটাই তিনি চাইতেন।

কাজী নজরুল ছিলেন একজন খাঁটি রোমান্টিক কবি। রোমান্টিক যুগ বাংলা সাহিত্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে আর তা আসে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের হাত ধরে। রোমান্টিসিজম পরিবর্তন নিয়ে আসে মানসিকতায়, মননে, চিন্তায় ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবোধে। ব্যক্তি যেনো নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেন। পুরাতন ও ক্লিশে ধারণার বিপরীত স্রোতে দাঁড়িয়ে রোমান্টিকতা ব্যক্তি মননে দেয় স্বাধীনতা, নতুনত্বের আভাস। আবার অন্যদিকে সমতা, স্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাও রোমান্টিকদের মাঝে এক অপূর্ব প্রচেষ্টা হয়ে থাকে। এইদিক বিবেচনায় নজরুল আর বাকি সব রোমান্টিকদের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রগামী, তাঁর প্রদীপ্ত কবিতা, জ্বালাময়ী গান মানুষে মানুষে সমতার বারতা রেখে গেছে। আমরা এর প্রমাণ নজরুলের ‘বিষের বাঁশী’ ও ‘কামাল পাশা’তে দেখতে পারি। আর ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি বিশ্ব মানবতার মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম হাতিয়ার। কবি যে একই সাথে বিদ্রোহি আর প্রেমিক হৃদয়-পুরুষ তা বিদ্রোহী কবিতাতেই বলে যান। কারণ তার এক হাতে প্রেমের বাঁশরী আর এক হাতে থাকে রণ-তূর্য। এভাবেই নজরুল তার অসামান্য রোমান্টিক প্রতিভা দিয়ে বিদ্রোহের দীপ্ত শিখা জ্বালিয়ে চলেন কখনো কোমলভাবে আবার কখনো স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিয়ে।

রাষ্ট্র বা সমাজ প্রভৃতির আমূল ও অতি দ্রুত পরিবর্তন করার কাজটা বিপ্লবী কাজ। নজরুল সমাজহীন মুসলমান সমাজকে একটি সুসংঘবদ্ধ সমাজ হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। নজরুল বলেন, ‘আমাদের বাঙালি মুসলমানের সমাজ, নামাজ পড়ার সমাজ। যতো রকম পাপ আছে করে যাও, তার জবাবদিহি করতে হয় না এ সমাজে, কিন্তু নামাজ না পড়লে তার কৈফিয়ত তলব হয়। অথচ কোরানে ৯৯৯ জায়গায় জেহাদের কথা এবং ৩৩ জায়গায় সালাতের কথা বলা হয়েছে।’ মুসলমানদের সমাজে অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে, এটা চেয়েছিলেন। মুসলিম নারী স্বাধীন, শিক্ষিত ও ব্যক্তিত্ববান মানুষ হিসেবে মর্যাদা পাবেন, মুসলমানরা ইসলামের গৌরবোজ্জল ইতিহাস থেকে প্রেরণা পাবেন এবং শিক্ষা নেবেন এটা তিনি চেয়েছিলেন। এসবই বিপ্লবী মানসিকতার মানুষের চাওয়া।

নজরুল সাহিত্য-সঙ্গীতের মাধ্যমে বাংলার মানুষরা ইসলামের এত ঘনিষ্ঠ হতে পেরেছে। তাই নজরুল শুধু কবি, সাহিত্যিক সঙ্গীত ও প্রাবন্ধিকই নন, তিনি একজন ওলামাও। সঠিক পথে ইসলামকে মানুষের মনকে উদ্বেলিত করা, সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করা, মানবতার অবদান-মানবতা শব্দটিতো ইসলামই জগতে এনেছে। নিপীড়িত, নিষ্পেষিতের দমন তো ইসলামই শিখিয়েছে।

নজরুল কোরআন পড়েছেন। আত্মস্ত করেছেন এবং বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীত ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন, শিখিয়েছেন। কুরআন মুখস্থ করা মুসলমান আছে চারিদিকে, কিন্তু তাদের অনেকেরই বাংলা অর্থ জানা নেই এবং এই জানা না থাকায় ‘বিভ্রান্তি’ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বদিকে। নজরুল সাহিত্য-সঙ্গীতে প্রবেশ করলে ইসলাম ধর্মকে অতি নিকটে পাওয়া যাবে। ইসলাম ধর্মকে জানা যাবে। নবী (সাঃ) জীবন জানা যাবে নজরুলের গানে হামদ-নাত-এ। ঐতিহাসিক সবকিছু। কুরআন-হাদীস সম্পর্কে সত্য-উপলব্ধি এবং আত্মস্থ করে এ অঞ্চলের মুসলমানদের অন্ধত্ব করতে যে পরিশ্রম করেছেন তার তুলনা কোথায়?

মানুষে মানুষে ভাই ভাই, এতো ইসলামেরই শিক্ষা। নজরুলের মাধ্যমে এসব উঠে এসেছে। নজরুল উদ্বুদ্ধ করেছেন এ অঞ্চলের মানুষদেরকে খাঁটি পথের সন্ধানে।

নজরুল বলেন, ‘মুসলমান সমাজ আমাকে আঘাতের পর আঘাত দিয়েছে নির্মমভাবে। তবু আমি দুঃখ করিনি বা নিরাশ হইনি। তার কারণ, বাংলার অশিক্ষিত মুসলমানরা গোঁড়া এবং শিক্ষিত মুসলমানরা ঈর্ষাপরায়ণ।’

নজরুল কারো সমালোচনা থেকে শুরু করে গালি-গালাজকে সামান্যতম ভয় পেতেন না। সাহসের সাথে মোকাবিলা করতেন। জবাব দিতেন হিম্মতের সাথে, সেখানেও সাহিত্য ফুটে উঠতো।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম রাজনীতি সচেতন কবি ছিলেন। তাঁর বিপ্লবী কাজের অনেক কিছুই পলেটিক্স করার লক্ষ্যে করেননি। আবার পলেটিক্স করাটাও আদৌ তাঁর লক্ষ্যও ছিলো না। গঠনমূলক চিন্তা-ভাবনা সম্পন্ন অত্যন্ত সংবেদনশীল মনের মানুষ ছিলেন তিনি। মানুষের অধিকার বঞ্চিত হয়ে থাকাটা, অবদমিত হয়ে থাকাটা এবং নির্যাতিত, অধঃপতিত এবং অসম্মানিত হয়ে থাকাটা তিনি স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মেনে নিতে পারতেন না। তাই এ অবস্থার অতিদ্রুত আমূল পরিবর্তন ঘটনোর বিপ্লবী কাজ তিনি করতে চেয়ে ছিলেন। নজরুল তাঁর কর্মেও জন্যে মানুষের মননে চির অম্লান হয়ে রইবেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়