শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

তৃপ্তি সাহা : মায়ের মতো কেউ

নিঝুম খান
তৃপ্তি সাহা : মায়ের মতো কেউ

১.

আজ থেকে প্রায় সাত-আট বছর আগে, আমি তখন চাঁদপুর সরকারি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। তৃপ্তি ম্যামকে তখনই প্রথমবারের মতো দেখি। আমাদের একটি অনানুষ্ঠানিক পরীক্ষায় তিনি হল পরিদর্শকের দায়িত্বে ছিলেন। যতদূর মনে পড়ে, আমি বারবার লেখা ফেলে ওনাকে দেখছিলাম। মনে হচ্ছিলো তিনি আর পাঁচজন পরিদর্শকের মতো শিক্ষার্থীদের সাথে ব্যবহার করছিলেন না। ওনার কথাবার্তা, আচরণ ছিলো অন্যরকম। অনেকটা আপনজনের মতো। কারো বাড়তি লেখার কাগজ কিংবা কোনো দিকনির্দেশনার প্রয়োজন হলে আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসছিলেন। সম্ভবত এর আগে কোনো পরীক্ষায় এ ধরনের অভিজ্ঞতা না হওয়ায় বেশি অবাক হয়েছিলাম।

২.

রেড ক্রিসেন্টের সদস্য থাকাকালীন খালেদ ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়। তিনি তখন রাষ্ট্রবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের ছাত্র। প্রচুর বই পড়েন। দেখা হলেই সাহিত্য, রাষ্ট্র ও দর্শন বিষয়ক আলাপ জমতো। ওনার সঙ্গে আলাপের বিভিন্ন প্রসঙ্গে তিনি অসিত স্যার (বর্তমান প্রিন্সিপাল অসিত বরণ দাশ) ও তৃপ্তি ম্যামের কথা বলতেন। আমি খালেদ ভাইয়ের মুখে ওনাদের কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতাম।

৩.

২০১৯ সাল। একদিন খালেদ ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে কলেজ লাইব্রেরির দিকে যাই। তৃপ্তি ম্যাম তখন কলেজ লাইব্রেরির দায়িত্বে। খালেদ ভাই আমার সাথে ম্যামের পরিচয় করালেন। বললেন যে আমি কবিতা লিখি। সেদিনই ওনার সাথে প্রথমবারের মতো কথা হয়। সাহিত্যের প্রতি ওনার আগ্রহ আমায় মুগ্ধ করে। তবে আমি সবচেয়ে বেশি বিস্মিত হই তখনই, যখন দেখি তিনি খালেদ ভাইকে পড়তে দেয়া বইটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আমি বুঝতে পারছিলাম যে তিনি নিশ্চিত হতে চাইছেন শিক্ষার্থীরা বইগুলো পড়ছে কি-না।

৪.

এরপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওনার সাথে দেখা হতো। আমার মতো একজন আপাদমস্তক অবজ্ঞার পাত্রকে তিনি সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। কবিতা নিয়ে জিজ্ঞেস করতেন। ভালো লাগার কথা জানাতেন। আমি শুধু আশ্চর্য হতাম।

তিনি একটা কথা প্রায়শই বলতেন, ‘আমি তো তোদের শিক্ষক নই, এজন্য শিক্ষকের দাবি করতে পারি না। তবে তোরা আমার সন্তানের মতো। তোদের কাছে মায়ের দাবি করতে পারি।’

৫.

আমার সবচেয়ে বড় আফসোস এই যে কলেজে ওনার সান্নিধ্য বেশিদিন পাইনি। করোনার পর তিনি চাকরির সুবাদে ঢাকায় চলে যান। তবে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠানে অনিয়মিত দেখা হতো। দেশ ছেড়ে চলে আসার বিষয়েও ওনাকে একদিন জানিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, সবসময় মনের কথা শুনবি। মন ভালো রাখতে যা করার প্রয়োজন তা-ই করবি। তবে লেখালেখিটা ছাড়িস না। তোর কবিতা আমার বড্ড ভালো লাগে। এটাকে জিইয়ে রাখিস।

৬.

আমার জীবনের এইটুকু সময় পর্যন্ত যতজন সুন্দর মনের মানুষের দেখা পেয়েছি, তৃপ্তি ম্যাম নিঃসন্দেহে তাঁদের মধ্যে অন্যতম। আগামীকাল ২৫ জানুয়ারি ওনার জন্মদিন। জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। জেনেছি তিনি শীঘ্রই চাকরি থেকে অবসরে যাবেন। অবসর-পরবর্তী জীবন সুখময় হোক, স্রষ্টার কাছে এই প্রার্থনা করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়