শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

কক্সবাজারে লেখকদের আনন্দভ্রমণ

মোখলেছুর রহমান ভূঁইয়া
কক্সবাজারে লেখকদের আনন্দভ্রমণ

ত্রিশ সেপ্টেম্বর সমুদ্রস্নান ও বিদায়ী পর্ব : গতকাল দিনে বৃষ্টিতে ভিজে এবং পূর্ণিমা যাপনে রাতের শেষাংশে বিছানায় যাওয়ায় ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাই। আজ সকাল প্রায় সাড়ে ন’টায় ঘুম থেকে উঠি। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি গ্রুপ মেসেঞ্জারে মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের ঘোষণা ‘মোখলেছ ভাই, ঘুম থেকে জাগুন, সেহরী খান, আজকের সেহেরী খাওয়ার শেষ সময় ১২টা ১ মিনিট পর্যন্ত’।

ঘুম থেকে উঠে আলসেমি রেশ না কাটতেই এমন মেসেজ দেখে একাকি মুচকি হাসিতে উলুক উলুক ভাব উদয় হলো। দিনটি ভালো যাবে মনে মনে ভাবছি আর ফ্রেশ হচ্ছি। নূরুল ইসলাম ফরহাদ অধীর ঘুমের ঘোরে। তার মোবাইলে রিংটোন একাধারে বাজছে। সিলিংফ্যানের সুইচ অফ করে আরামের ঘুমে বিঘ্নতায় সজাগ করে শুভ সকাল জানালাম। পাটোয়ারী ও সাঈফকেও উঠালাম। সবাই ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সারলাম।

আজ সাগরে কাঙ্ক্ষিত স্নান। বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন-শিল্প এলাকা কক্সবাজার। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগম। এখানকার প্রধান অর্থনীতিও পর্যটক-নির্ভর। একাধিক দর্শনীয় স্থান থাকলেও প্রধান আকর্ষণ হলো ‘সমুদ্র অবকাশ ও স্নান’। এবার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ফরিদ হাসান একত্রে যাওয়ার তাড়া করছে। দুই ভায়রা ভাইয়ের খুনসুটিতে নূরে আলম পাটোয়ারীর ধীরলয়গতিতে সুগন্ধা বিচে আমরা। দলছুট হওয়ায় জাহিদ নয়ন আমাদের সাথে জড়ো হয়।

সাগরে আনন্দ করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পতিত হয়। সাগর ভাটার সময় তলিয়ে নিয়ে যায়। দুর্ঘটনা বেশি হয়। লাল ও সবুজ পতাকা অনুসরণে, সবুজ পতাকায় তীক্ষè নজর রেখে জোয়ারের সময় স্নান করা নিরাপদ। সাগরে উজান। আমাদের শুরু হয়ে যায় সাগরকন্যার সাথে জড়াজড়ি। সাগর-জলে হাবুডুবু, ভেসে বেড়ানো, ঢেউয়ের তালে তালে আনন্দে ডুবে যাওয়া। সাগর-স্নানের আনন্দ-উল্লাসে ভ্রমণের ক্লান্তি অবসান হয়ে দেহ-মন চাঙা। এটাই ভ্রমণের মাহাত্ম্য।

জাহিদ নয়ন অন্য নেশায় সাগরকন্যাকে জানায়- গুডবায়। আমরা সাগর-জলের সাথে হৈ-হুল্লোড় করে লাবণী বিচে যাই কাজী সাইফের বিশেষ আগ্রহে। আসার সময়ে ফুটবল খেলায় মেতে উঠি অচেনা পর্যটকদের সাথে। বল পাসিংয়ের সময় মনে হচ্ছে অনেক বোঝাপড়া তাদের সাথে। ভ্রমণে এমনই হয়। অপরিচিতজনকেও মনে হয় আপন (ভ্রমণে অপরিচিতদের সাথে মেশা এবং একাধিক হকারের জটলা অবস্থায় কেনাকাটায় সাবধানতা অবলম্বন করলে অনাকাঙ্ক্ষিত উটকো ঝামেলা পোহাতে হয় না)।

ফুটবল খেলায় ছন্দপতন ঘটিয়ে সমুদ্র ঢেউয়ের ছন্দে-আনন্দে মিশে যাই। ঢেউয়ের তালে তালে সাগরের নোনা জলে ভেসে বেড়াই। দীর্ঘ সময় মেতে আছি। খানিক বসা হলো, অনিন্দ্য সুন্দর সাগরের মোলায়েম বালুকাময় গালিচায়।

কলা খেয়ে সতেজ হলাম। কাজী সাইফের পকেটে পঞ্চাশ টাকার নোটটি দীর্ঘ সময় পানিতে ভিজেও ছিলো ব্যবহারযোগ্য। বাংলাদেশের টাকা তৈরির মান সাগর জলে ফুটে উঠলো। আমি নিজ হাতে কলার খোসাগুলো ঝুড়িতে রেখে আসি। খোসা নিয়ে এভাবে যেতে অনেকে পজিটিভ দৃষ্টিতে দেখছে। সাগরের সৌন্দর্য রক্ষা সবার কর্তব্য। কলা খেয়ে সতেজতা ও ইচ্ছেশক্তি সঞ্চয় হওয়ায় আবার নেমে পড়লাম সাগরে। ইজিচেয়ারে হেলেন দিয়ে সমুদ্র অবকাশ যাপন, বিচ বাইকিং ও ঘোড়ায় ভ্রমণে সৈকতের মোহনীয়তায় মুগ্ধ হবেন। ওয়াটার বাইকিং সাধারণের জন্যে দুঃসাহসিক জলযান ভ্রমণ। অদম্য ইচ্ছায় গভীর জলে এগোতে থাকি। ভলান্টিয়ার বাঁশির হুঁইসেল এবং লাল রং দেখিয়ে নিরাপত্তা এড়িয়ায় নিয়ে আসে। এই হুঁইসেল শিক্ষা দেয় ইচ্ছে করলেই সব পথে অগ্রসর হওয়া যায় না। নিজের নিরাপত্তা বজায় রেখে এগোতে হবে। নচেৎ পস্তাতে হবে নিজেকেই। এভাবেই সাগর-জলে আমরা চারজন। নূরে আলম পাটোয়ারী অসস্তি বোধ করায় চলে আসে। সময়ের সাথে সাথে আপনজন একে একে চলে যায়/যাবে এই রীতিনীতি। আমরা তিনজন আরো নিবিড়ভাবে মগ্ন হয়ে যাই জলরাশিতে।

জীবনের জয়-পরাজয় আনন্দ বেদনা জানান দেয় এই সাগর। সাগরের তেড়ে আসা বিশাল ঢেউয়ের তর্জন-গর্জন জানান দেয় প্রকৃতির শিক্ষা। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের উত্থান-পতন। উত্তাল সাগরে যতো বড় ঢেউ আসুক। একসময় মিশে যাবে। যত বড় বিপদ সমস্যা আসুক। একসময় কেটে যাবে বিপদের ঘনঘটা। জীবনতরীর হাল ছাড়তে বারণ করছে ঢেউয়ের পর ঢেউ। আবার খুশিতে বেপরোয়া জীবনসমূহ বিপদের আশঙ্কা। জীবনের বাঁকে বাঁকে যতো ঢেউ আসুক। কিছু ঢেউ আলিঙ্গন করতে। অন্যসব এড়িয়ে যেতে। ঢেউয়ের সাথে দোল খাচ্ছি। ঢেউয়ের মাঝখানে মাথা জাগিয়ে জানান দিচ্ছি, শত বাধা অতিক্রম করেই মাথা উঁচু করে থাকতে হয় দণ্ডায়মান। সাগরের জল নোনা হলেও অনুভূতি অসাধারণ মিষ্টি। (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

মোখলেছুর রহমান ভূঁইয়া : আশিকাটি, বাবুরহাট, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়