সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২২, ০০:০০

মাওঃ শামছুল হুদা : আদর্শ  শিক্ষকের জীবন ও কর্ম
অনলাইন ডেস্ক

বংলাদেশে কোরআন-হাদিসের খেদমত করে যাঁরা স্মরণীয় হয়ে আছেন, তাঁদের মধ্যে একজন মাওলানা শামছুল হুদা। যিনি ছাত্রজীবনে সফল ও শিক্ষকতা জীবনে অসামান্য অবদান রেখেছেন। অসংখ্য ছাত্র আজও তাঁর নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তাঁর সফল আলোকিত ছাত্রবৃন্দ দেশ-বিদেশের নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দ্বীন প্রচারের কাজে ব্যস্ত আছেন।

যুগশ্রেষ্ঠ আলেমে দ্বীন, ক্ষণজন্মা পুরুষ, তীক্ষ্নবুদ্ধিসম্পন্ন আলহাজ্ব মাওঃ শামছুল হুদা চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার ১০নং গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ডাটরা শিবপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১ সেপ্টেম্বর ১৯৫১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৃত ইদ্রিস তপদার। তিনি অত্যন্ত পরহেজগার, ধর্মভীরু, তরিকতপন্থী, পীর-মাশায়েখ ওলামাপ্রেমিক মানুষ। যিনি মক্তবে কোরআন শিক্ষা দিতেন। তাঁর মাতা মৃত জোবায়দা খাতুন ছিলেন আবেদা জাহেদা বিদূষী ধর্মপরায়ণ নারী। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনিই প্রথম সন্তান। পিতা-মাতা আদর করে তাঁর নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ শামছুল হুদা’, ‘শামছুল হুদা’।

পিতামাতা তাদের স্নেহধন্য মেধাবী এ সন্তানকে তৎকালীন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন এবং আপন জেঠা ক্বারী সোলাইমান সাহেবের তত্ত্বাবধানে ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি কাণ্ডে। অভিজ্ঞ ওস্তাদের নেক ছোহবতে থেকে তিনি মাত্র সাত বছর বয়সে কুরআন শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ক্বারী সোলাইমান সাহেব ছিলেন ভারতবর্ষের বিখ্যাত দেওবন্দ মাদ্রাসার ছাত্র। ডাটরা শিবপুর একমাত্র প্রাচীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুহাম্মদ শামছুল হুদা প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। যার বর্তমান নাম ডাটরা শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। (ধনী বাড়িতে অবস্থিত)।

মহান আল্লাহ যাকে দ্বীনের খাদেম হিসেবে মনোনীত করেছেন তাঁর কাছে সাধারণ শিক্ষা ভালো লাগার কথা নয়। পিতা-মাতার ইচ্ছা সন্তানকে আলেম বানাবেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন শাহরাস্তি উপজেলার রাগৈ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায়। এখানে ৭ম শ্রেণি শেষ করেন। পরে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে দেশের খ্যাতিমান মাদ্রাসা ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন মানুরী ইসলামিয়া ফাযিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে ৮ম শ্রেণির কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তখন দাখিল কেন্দ্রীয় পরীক্ষা না থাকায় ১৯৬৬ সালে আলিম পরীক্ষায় ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। একই মাদ্রাসা থেকে ১৯৬৮ সালে ফাযিল পরীক্ষায় ২য় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। কামিল শ্রেণিতে অধ্যয়নের জন্যে লক্ষ্মীপুর জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত রায়পুর উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রায়পুর আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে দুই বছর পড়াশোনা করে হাদীস বিভাগ থেকে ১৯৭০ সালে কামিল কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় ২য় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস মাওঃ আফলাতুন কায়সারের (রঃ)-এর তত্ত্বাবধানে হাদিস বিষয়ে অগাধ ইলম অর্জন করেন।

মাওঃ শামছুল হুদা নিজ গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর শ্বশুর ছিলেন জগৎবিখ্যাত আলেম, কোরআনের খাদেম। পূর্ব-পশ্চিম অনেক গ্রামে কোরআনের তা’লিম দিতেন। এমনকি মানুরী ইসলামিয়া ফাযিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন। যিনি একনামে ক্বারী সোলাইমান সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর একমাত্র কন্যার সাথে বিবাহ হয়। তিন ছেলে, তিন মেয়ে নিয়ে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে সুখী জীবন যাপন করছেন তিনি।

আলহাজ্ব মাওঃ শামছুল হুদার মতো মহান দ্বীনের সেবকের কর্মজীবনের রয়েছে বর্ণিল ইতিহাস। কামিল কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফলাফলের পূর্বে রায়পুর উপজেলার কোলঘেঁষে রামগঞ্জ উপজেলার নাগের দিঘির পাড় দাখিল মাদ্রাসায় কিছুদিন খণ্ডকালীন আরবি শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে কামিল কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর পরই যে মাদ্রাসা থেকে তিনি ফাযিল পাস করেন অর্থাৎ ফরিদগঞ্জ মানুরী ইসলামিয়া ফাযিল ডিগ্রি মাদরাসায় আরবি প্রভাষক পদে যোগদান করেন। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে চাকরির লোভনীয় সুযোগ বর্জন করে মানুরী ইসলামিয়া ফাযিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় অধ্যাপনার মতো মহান পেশা, দ্বীনের খেদমত বেছে নেন মাওঃ শামছুল হুদা। যার ফলে শত শত দ্বীনের খাদেম তৈরির সাধনায় ১৯৭০ সাল হতে আরবি প্রভাষক পদে কর্মজীবন শুরু করেন। ১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ‘সহকারী অধ্যাপক’ হিসেবে কর্মজীবনের ইতি টানেন। কর্ম সাধনার ফসল হিসেবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কোরআন হাদীসের খাদেম বহু মাওলানা, খতিব, ইমাম ছড়িয়ে আছেন। এছাড়াও গ্রামে-গঞ্জে বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কার্যক্রমে অবদান রয়েছে। এখনো সমাজের ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন।

প্রায় ৪১ বছরের ইলমে হাদিসের অধ্যাপনা শেষ করার পর মহান রবের ঘর বাইতুল্লাহ তাওয়াফের জন্যে প্রাণ উতলা হয়ে যায় মাওঃ শামছুল হুদার। তাই আর বিলম্ব না করে ২০১২ সালে পবিত্র হজব্রত পালনের জন্যে মক্কা মদিনায় সফর করেন তিনি। হজে¦র কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পাদন করে সুস্থভাবে নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন।

১৯৭৭ সাল থেকে নিজ গ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ, বর্তমান গাজীবাড়ি জামে মসজিদ (চকিদার বাড়ির মসজিদ)-এর খতিব-ইমামের গুরুদায়িত্ব আজ পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন মাওঃ শামছুল হুদা। যে কথা না বললেই নয়, বর্তমান শারীরিক অবস্থায় বার্ধক্যজনিত কণ্ঠস্বরের অভাবে মহান দায়িত্ব আর চালানো সম্ভব হচ্ছে না তাঁর।

রাসুল (সাঃ)-এর সুন্নতের পূর্ণ পাবন্দ সহজ-সরল জীবন যাপনকারী আলহাজ্ব মাওলানা শামছুল হুদা ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। ক্লাসে বা রাস্তা-ঘাটে তাঁর আগে কেউ সালাম দিতে পারতেন না। ছাত্রদেরকে রাত-দিন সর্বদা পড়াতেন। তিনি সদালাপী, মিষ্টভাষী, নির্মল চরিত্রের অধিকারী। জাগতিক সম্পদের প্রতি তাঁর কোনো মোহ ছিলো না। সামাজিকভাবে তিনি সবার নিকট পরম শ্রদ্ধেয় ও বরণীয় ব্যক্তি হিসেবে সমাদৃত।

এ মহামনিষীর সংস্পর্শে এসে যাঁরা জীবনে প্রখ্যাত জ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন তাদের তালিকা দীর্ঘ। তন্মধ্যে ক’জন হলেন : ড. এ.কে.এম. মাহবুবুর রহমান (অধ্যক্ষ, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসা), ড. আবদুল্লাহ আল মারূফ (অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), মোঃ মেহেদী হাসান (প্রভাষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), মোঃ কামাল উদ্দিন (সিনিয়র অফিসার, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক) ও মাওঃ মোঃ আমিন উদ্দিন (অধ্যক্ষ, মানুরী ইসলামিয়া ফাযিল ডিগ্রি মাদ্রাসা)সহ অনেক ছাত্র রয়েছেন।

আলহাজ্ব মাওঃ শামছুল হুদা সাহেব এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে আছেন। দুর্বলতা ঘিরে ফেলেছে। মহান আল্লাহ এ বীরকে হায়াতে তাইয়্যেবা ও খাতেমা বিল খায়ের নসিব দান করেন। কায়মনোবাক্যে দয়ালু ও মেহেরবান আল্লাহ তা’য়ালার আলীশান দরবারে এ প্রার্থনা করি। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে মুসলিম উম্মার নিকট দোয়ার আরজি পেশ করছি।

মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম : প্রভাষক, বাংলা, বিঘা আহমদিয়া ফাযিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়