প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
মা হওয়া জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, সেটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে নিরাপদে মা হওয়া নিয়ে অনেক কিছু বলার আছে। অনেক সময় মনে করা হয়, গর্ভকালীন নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চেকআপ করালেই যেনো দায়িত্ব শেষ। নিরাপদ মাতৃত্ব বলতে সন্তান জন্ম হওয়ার আগে ও পরে সার্বিক যত্ন, পরামর্শ ও সুযোগ-সুবিধাকে বোঝায়। নিরাপদ মাতৃত্ব প্রত্যেক মায়ের অধিকার। সব মা এ সুযোগ পান না। দরিদ্র পরিবারের মায়েরা নন, ধনী-গরিবনির্বিশেষে যেনো কোনো ধরনের চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
হবু মা যদি তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যার কথা বলেন বা অভিযোগ করেন, তাহলে তৎক্ষণাৎ তা গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে।
ছোট ছোট কিছু বিষয় আমরা এড়িয়ে যাই। যা পরবর্তী সময়ে সমস্যা তৈরি করতে পারে। দীর্ঘদিন থেকে হয়তো দুই পা ফুলে গেছে। বাসার সবাই মনে করছেন যে গর্ভাবস্থায় পা ফুলতেই পারে। দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু পা ফুলে যাওয়ার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, শরীর থেকে প্রোটিন বের হয়ে যাওয়া, কিডনির অসুখ (কোনো কোনো ক্ষেত্রে) বা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে। আবার অধিকাংশ মায়ের রক্তে এই সময়ে চিনির মাত্রা বেড়ে যায়। অনেকের ধারণা, গর্ভাবস্থায় রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়াটা তেমন ভয়ের কিছুই নয়। তাই অবহেলা করে চিকিৎকের পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজনবোধ করেন না। কিন্তু এমন ধারণা ভীষণ হুমকিস্বরূপ।
গর্ভাবস্থায় পা ফুলে যাওয়া, রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়া (গর্ভধারণের আগে ও পরে), প্রস্রাবে সংক্রমণ, অতিরিক্ত বমি হওয়া, গলগণ্ডের সমস্যা, থ্যালাসেমিয়া নামে রক্তের অসুখ, জন্ডিস-এ অসুখগুলো কখনোই অবহেলার নয়। এছাড়া ওষুধের মাত্রা ও পরিমাণ গর্ভধারণের আগে ও পরে একেক রকম লাগে। গর্ভধারণের আগে মুখে খাবার অনেকের ডায়াবেটিসের ওষুধ লাগে। আবার একই মায়ের গর্ভধারণের পরে ইনসুলিন লাগতে পারে। যা চিকিৎসক ছাড়া অন্যরা বুঝতে পারবেন না। নিজের অজান্তেই একজন মানুষের শরীরে নানা রকম রোগের জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে। আর গর্ভাবস্থার আগে ও পরে একজন নারীর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে একটি শিশুর জীবন। তাই প্রয়োজন ধনী-দরিদ্র প্রত্যেক মায়ের জন্যে নিরাপদ মাতৃত্ব। গর্ভধারণের আগে ও পরে বাড়তি যত্ন প্রয়োজন।
লেখক : চিকিৎসক।
* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখা পাঠানোর
ই-মেইল : [email protected]