বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৪, ০০:০০

সাক্ষাৎকার : ডাঃ আওলাদুজ্জামান সৌরভ

রোগীর মুখের হাসিই চিকিৎসকের প্রেরণা

আলআমিন হোসাইন ॥
রোগীর মুখের হাসিই চিকিৎসকের প্রেরণা

ডাঃ আওলাদুজ্জামান সৌরভ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত। এর আগে তিনি চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা করেন। তাঁর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা হাজীগঞ্জ উপজেলার মকিমাবাদ গ্রামে। তিনি বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করে চিকিৎসার মতো মহান পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার নানা দিক নিয়ে সম্প্রতি তিনি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে কথা বলেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?

ডাঃ আওলাদুজ্জামান সৌরভ : আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ রহমতে ভালো আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে কোথায়?

ডাঃ আওলাদুজ্জামান সৌরভ : হাজীগঞ্জ উপজেলার মকিমাবাদে আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে। গ্রামের আলো-ছায়ায় আমার বেড়ে ওঠা।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

ডাঃ আওলাদুজ্জামান সৌরভ : হাজীগঞ্জ আমিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক, হাজীগঞ্জ মডেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করি। ২০১৪ সালে ৩৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকুরিতে যোগ দিই। ২০২০ সালে অর্থোপেডিক পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক/শিক্ষক হওয়ার ভাবনাটি সূচনা হলো কীভাবে?

ডাঃ আওলাদুজ্জামান সৌরভ : প্রত্যেক বাবা-মা চান তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ উন্নত-সমৃদ্ধ হোক। আমার বাবা-মাও তাই চাইতেন। তাদের স্বপ্ন ছিলো আমি চিকিৎসক হবো। পরিবারে আমার ফুফাতো বোনও চিকিৎসক। সব মিলিয়ে তাদের অনুপ্রেরণায় আমি এমবিবিএসে ভর্তি হই। আর ভাগ্যক্রমে আমি শিক্ষক হই। মূলত আমি অর্থোপেডিকের চিকিৎসক। অর্থোপেডিকেই আমার পোস্টিং হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে অ্যানাটমি বিভাগের দায়িত্ব দেন। কেননা অ্যানাটমি এবং অর্থোপেডিক কাছাকাছি বিষয়। এভাবে প্রায় চার বছর অ্যানাটমি বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে দায়িত্ব পালন করি। বর্তমানে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে অর্থোপেডিকের জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক/শিক্ষক হিসেবে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলুন।

ডাঃ আওলাদুজ্জামান সৌরভ : ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে মেডিসিন বিভাগে যোগ দিই। প্রথমদিনের অভিজ্ঞতা দারুণ ছিলো। কিছুটা ভয় মনে কাজ করেছিলো। কিন্তু সেবা প্রদানের মাধ্যমে রোগী যখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে তখন সব ভয় দূর হয়ে যায়।

শিক্ষক হিসেবেও প্রথমদিন মনে ভয় কাজ করেছিলো। শুধু ভাবছিলাম, সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারবো কিনা। কেননা শিক্ষক হতে আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়। কিন্তু যখন শিক্ষার্থীরা মনোযোগ সহকারে ক্লাসে পাঠগ্রহণ করে তখন মনে তৃপ্তি পাই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে যোগদান করেছেন কবে?

ডাঃ আওলাদুজ্জামান সৌরভ : ২০১৯ সালে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে যোগদান করি। ২০২৪ সালে এপ্রিল মাসে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে যোগ দিই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের সার্বিক দিক নিয়ে কিছু বলুন।

ডাঃ আওলাদুজ্জামান সৌরভ : চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ খুবই সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। একটি মেডিকেল কলেজ পরিচালনায় যে পরিমাণ অবকাঠামো, আবাসনসহ আনুষঙ্গিক সুবিধার প্রয়োজন, তা এখানে নেই। কিন্তু পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থী এখানে ভর্তি হচ্ছে। বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসছে, তাদের থাকার সুব্যবস্থা প্রয়োজন। তারা বাইরে বাসা ভাড়া করে থাকে। এক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট রয়েছে। শিক্ষকদের বসার আলাদা জায়গা নেই। এখানে ১১টি ডিপার্টমেন্ট রয়েছে, কিন্তু আলাদা কোনো শ্রেণিকক্ষ নেই। বই-প্রশ্ন রাখার জায়গা নেই। এক্ষেত্রে সরকারের আরো আন্তরিক হওয়া দরকার। ৬ বছর হলো কলেজটি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কলেজটি প্রতিষ্ঠায় ভূমি অধিগ্রহণ হয়েছে কি? কিন্তু আমরা আদৌ জানি না, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ কবে আলোর মুখ দেখবে। একই সময়ে প্রতিষ্ঠা হওয়া অন্যান্য মেডিকেল কলেজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বর্তমানে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের সাথে যৌথভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষার্থীদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

ডাঃ আওলাদুজ্জামান সৌরভ : শিক্ষার্থীদের কাছে সবসময়ই প্রত্যাশা বেশি থাকে। কারণ আমাদের বৃদ্ধ বয়সে তারাই আমাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করবে। সে আলোকে তাদেরকে যোগ্য চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে পড়তে যাচ্ছে, এই প্রবণতা বন্ধ হওয়া দরকার। দেশেই আমাদের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে। তাহলেই দেশের সামগ্রিক উন্নতি হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : একজন মানবিক চিকিৎসক হওয়ার জন্যে শিক্ষার্থীদের জন্যে আপনার পরামর্শগুলো কী?

ডাঃ আওলাদুজ্জামান সৌরভ : চিকিৎসা পেশাটি একটি মানবিক পেশা। চিকিৎসকদের মানবিক হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। কিছু কিছু অমানবিক চিকিৎসকের দায় সবাই নিতে পারে না। অনেকে চিকিৎসা পেশাকে ব্যবসা হিসেবে মনে করেন, এ ধরনের মানসিকতা পরিহার করা জরুরি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসাজীবন/শিক্ষকতাজীবনের একটি সুখের এবং একটি দুঃখের স্মৃতির কথা বলুন।

ডাঃ আওলাদুজ্জামান সৌরভ : একজন রোগী যখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে তখন চিকিৎসক হিসেবে মনে তৃপ্তি পাই। আবার অনেক সময় চেষ্টা করেও রোগীকে বাঁচানো যায় না, যা দুঃখের স্মৃতি। একজন চিকিৎসক কখনই তার রোগীর অকল্যাণ কামনা করেন না। কেননা রোগীর মুখের হাসিই চিকিৎসকের প্রেরণা। আর শিক্ষকতাজীবনের সুখের স্মৃতি হলো যখন শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে চিকিৎসক হিসেবে আত্মনিয়োগ করে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলে প্রথম যে তিনটি কাজ করতেন?

ডাঃ আওলাদুজ্জামান সৌরভ : আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রথমেই ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ বাস্তবায়ন করতাম। আমাদের মনে রাখতে হবে, একজন চিকিৎসক চাইলেও অনেক সময় রোগীকে বাঁচাতে পারেন না। সবকিছুর মালিক মহান আল্লাহতা’য়ালা। তিনি যখন যা ভালো মনে করেন তা-ই হয়। এ বিষয়টি এখনো আমাদের রোগীর স্বজনেরা বুঝেন না। তাই বিভিন্ন সময় চিকিৎসকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে, যা খুবই দুঃখজনক। বর্তমান প্রেক্ষাপটে চিকিৎসক এবং রোগীর সুরক্ষায় ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ বাস্তবায়ন খুবই জরুরি বলে মনে করি। যে বিষয়টি নিয়ে বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় আন্তরিকভাবে কাজ করছেন।

দ্বিতীয়টি হলো : ক্যাডার বৈষম্য দূর করতাম। কেননা চিকিৎসা ক্যাডারের সাথে অন্যান্য ক্যাডারের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে, তা নিরসন করা অতীব প্রয়োজন। চিকিৎসকদের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা এবং পদোন্নতি দেয়া না হলে তিনি কীভাবে সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করবেন?

তৃতীয়টি হলো : চিকিৎসা ব্যবস্থায় লোক দেখানো কাজ বন্ধ করতাম। মানুষ লোক দেখানো কাজ পছন্দ করে। এতে করে কিন্তু চিকিৎসক এবং চিকিৎসা পেশার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গাটি নড়বড়ে হয়ে যায়। যা সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলে।

এছাড়া প্রতিটি জেলায় একটি সমৃদ্ধ সিসিইউ ইউনিট স্থাপন করতাম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেখে কার্ডিয়াক সার্ভিসকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। কেননা একজন মানুষ যখন হার্ট অ্যাটাক করেন তখন তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্ডিয়াক সেবা প্রদান করতে হয়। পাশাপাশি আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে আরো সমৃদ্ধ করতাম।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অবসরে কী করেন

ডাঃ আওলাদুজ্জামান সৌরভ : মানবসেবা করি। বই পড়ি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়