বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

ঈদেও চিকিৎসকরা কর্মব্যস্ত

ডাঃ মোঃ হারুন-অর-রশিদ
ঈদেও চিকিৎসকরা কর্মব্যস্ত

শৈশব মানেই অন্যরকম এক রঙিন জীবন। শৈশবের কথা মনে পড়লে এখনও স্মৃতির জগতে হারিয়ে যাই। শৈশবে ফেলে আসা সেই আনন্দের দিনগুলো মাঝে মাঝে খুব মনে পড়ে। আর এখন নিজেকে খুব একা মনে হয়। শৈশবের সেই কাটানো দিনগুলো ছিলো সবচেয়ে সহজ-সরল এবং অনেক আনন্দের। শৈশবের দিনগুলো যদি আবার ফিরে পাওয়া যেতো, তাহলে সবাই শৈশব জীবনে যেতে চাইতো।

শৈশবের ঈদ ছিলো অন্যরকম। ঈদ মানেই নতুন কাপড়, নতুন জুতা- আরো কত কী! ঈদের একমাস আগে থেকেই ঈদের সময়ে আতশবাজি কেনার জন্যে স্কুলের টিফিনের টাকা জমানো শুরু করতাম। ঈদের দুদিন আগেই জমানো টাকা দিয়ে আতশবাজি কিনে ঘরে লুকিয়ে রাখতাম, যেনো কেউ বুঝতে না পারে। ঈদের আগের দিন আসরের নামাজের পর থেকেই ঈদের চাঁদ দেখার জন্যে প্রস্তুতি নিতে থাকতাম। বাড়ি থেকে বের হয়ে খোলা মাঠে গিয়ে পশ্চিম আকাশে তাকিয়ে গোধূলীলগ্নের জন্যে অপেক্ষা করতাম, কার আগে কে পশ্চিম আকাশে ঈদের চাঁদ দেখতে পায়! তারপর ঈদের চাঁদ দেখার সাথে সাথেই চলতো আতশবাজির প্রতিযোগিতা, সবাই হৈ-হুল্লোড় করে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতাম। পাশাপাশি অপেক্ষা করতাম কখন রেডিওতে এবং টিভিতে বেজে উঠবে- ‘ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। সেসব স্মৃতি এখনও আমায় তাড়িয়ে বেড়ায়।

ঈদের দিন মানে কিছুদিনের অফুরন্ত অবসর ও পরিবার-আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কাটানো একান্ত সময়। কিন্তু সবার কপালে আমজনতার এই ঈদের আনন্দ/অবসর জোটে না। বিশেষ করে আমরা যারা মাঠপর্যায়ে প্রথমসারিতে কাজ করি। ঈদের দিনেও আমাদের কর্মব্যস্ত সময় কাটে। ব্যস্ততা আমায় দেয় না ছুটি।

দিনটা ঈদের আনন্দ উপভোগের হলেও আমরা হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক-নার্স এবং আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, গণমাধ্যমকর্মীদের ঈদের দিন কাটে কর্মব্যস্ততায়। রোগের যেমন কোনো সময়-অসময় নেই, তাই রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক-নার্সদেরও কোনো ছুটি বা অবসর নেই।

পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি তরুণ চিকিৎসকদের অন্যতম ব্যস্ততায় জায়গা হচ্ছে : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হওয়ার জন্যে উচ্চতর পড়াশোনায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা। আমার জীবনের তেমনি এক ব্যস্ততার স্মৃতি আজও মনে পড়ে। সময়টা ছিলো আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগের ঈদের দিনের। ঈদুল ফিতরের দিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে যথারীতি প্রস্তুতি নিলাম ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়ার জন্যে। ইতিমধ্যে মা বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন তৈরি করে রেখেছেন একটু মিষ্টিমুখ করে ঈদের নামাজ পড়তে ঈদগায়ে গেলাম। নামাজ পড়ে এসে ব্যাগ গোছানো দেখে বাবা-মা জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাবো? বললাম, প্রতিদিনের মতো আজও লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করতে যাবো। শুনে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। আর বললেন, আজ ঈদের দিন, বাসায় থাক, বিশ্রাম নে, আজ না গেলে হয় না? বললাম, না। মা- আমার রিডিং পার্টনাররা আসবে, আমাকেও যেতে হবে। ইতিমধ্যে আমার তিনজন রিডিং পার্টনারের সাথে কথা বলে তাদেরকে আসার জন্যে প্রস্তুত করলাম। আমরা শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করতাম। কিন্তু ঈদের দিন হওয়ায় লাইব্রেরি বন্ধ ছিলো। আমাদের একজন পার্টনারে কর্মস্থল ছিলো বারডেম হাসপাতালে, তাকে বললাম, আমরা তার রুমে বসেই আজ পড়াশোনা করবো। কারণ এক মুহূর্তও নষ্ট করা যাবে না। যেই কথা সেই কাজ। বাসা থেকে একটি বক্সে করে দুপুরের খাবার নিয়ে খিলগাঁওয়ের বাসা থেকে শাহবাগের বারডেম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলাম। রাত ১১টা পর্যন্ত চার পার্টনার একসাথে পড়াশোনা করে রাত ১২টার দিকে বাসায় এলাম। এটা শুধু একদিনের যুদ্ধ ছিলো না, এটা ছিলো কয়েক বছর ধরে প্রতিদিনের যুদ্ধ। তিনদিন পরই ছিল আমার এফসিপিএস (সার্জারি) ফাইনাল পরীক্ষা। যথাসময়ে যথারীতি লিখিত, প্র্যাকটিক্যাল (এসপি), ক্লিনিক্যাল ও ভাইভা পরীক্ষা দিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে সেবার এফসিপিএস পরীক্ষার সকল ধাপ উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্তভাবে এফসিপিএস পাস করে সার্জারি বিশেজ্ঞ হই। আমরা চারদিকে সবাই শুধু একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখি, একজন প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসককে কিন্তু একজন প্রতিষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হওয়ার পেছনে যে পরিশ্রম, যে কষ্ট, যে ত্যাগ, তার পরিবারের কত ত্যাগ, তা একমাত্র সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও তার পরিবারবর্গ ও কাছের মানুষেরাই বুঝে, অন্যরা সেটা কল্পনাও করতে পারে না।

এবারের ঈদ গরমের মধ্যে উদযাপিত হবে। ঈদে সুস্থ থাকতে আমার কিছু পরামর্শ হলো : অতিরিক্ত গরমে বেশি বেশি পানি খাবেন, বেশি ভাজাপোড়া খাবার খাবেন না। পরিমিত খাবেন, অতিরিক্ত আহার করবেন না। সকলের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিবেন। বাইরে বের হয়ে সতর্কতার সাথে চলাফেরা করবেন। নিজে ড্রাইভ করলে বেপরোয়া গাড়ি চালাবেন না। শরীর ও মন সবসময় প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করবেন।

ডাঃ মোঃ হারুন-অর-রশিদ : সহযোগী অধ্যাপক (সার্জারী); ভাইস প্রিন্সিপাল, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়