রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

নির্মূলের পথে পোলিও মায়েলাইটিস্

ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
নির্মূলের পথে পোলিও মায়েলাইটিস্

পৃথিবী রোগের আধার। হাজার রকমের জীবাণুর সংক্রমণে আক্রান্ত পৃথিবী। এর মধ্যে কয়েকটাকে মানুষ পৃথিবী থেকে নির্মূল করতে পেরেছে এবং আরও কয়েকটি নির্মূল হওয়ার পথে। নির্মূল হওয়ার শেষ পর্যায়ে যে রোগটি আজও মানুষের মাথাব্যথার কারণ, তার নাম পোলিও। পূর্ণাঙ্গভাবে বললে পোলিও মায়েলাইটিস।

পোলিও রোগের জীবাণু

পোলিও রোগের জীবাণু হলো এক ধরনের ভাইরাস, যা এন্টারোভাইরাস ধরনের। একে পোলিও ভাইরাস নামে অভিহিত করা হয়। এরা মানুষের অন্ত্রে কলোনি বা উপনিবেশ তৈরি করে বংশবিস্তার করে। আক্রান্ত ব্যক্তির মলে এ ভাইরাস নির্গত হয় এবং মলের মাধ্যমেই এর সংক্রমণ ঘটে। আক্রান্ত ব্যক্তির নির্গত মল পানি ও খাদ্যে মিশে মুখ গহ্বরের মাধ্যমে সুস্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করে। এর ফলে পোলিওর বিস্তার ঘটে। সাধারণত ৫ বছরের কম বয়সি শিশুরাই এ রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। প্রতি ২০০ জন আক্রান্ত রোগীর মধ্যে একজন প্যারালাইসিসে ভোগে। গড়ে ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ রোগী শ্বাসতন্ত্রের মাংসপেশির প্যারালাইসিসজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করে।

উপসর্গ ও লক্ষণ

কোন লক্ষণ থাকে না শতকরা ৭২ শতাংশ ক্ষেত্রে। হাল্কা অসুস্থতা থাকে শতকরা ২৪ শতাংশ ক্ষেত্রে।

প্যারালাইসিসহীন মেনিনজাইটিস শতকরা ১ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ঘটে। প্যারালাইটিক পোলিও হয় শতকরা ০.১ শতাংশ থেকে ০.৫ শতাংশ ক্ষেত্রে। স্পাইনাল পোলিও হয় শতকরা ৭৯ শতাংশ ভাগ। বাল্বোস্পাইনাল পোলিও হয় শতকরা ১৯ শতাংশ। সাধারণ ক্ষেত্রে জ্বর, গলাব্যথা, বমি ও বমিভাব, পেটে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা মাঝেমধ্যে ডায়রিয়া হতে পারে। ভাইরাস যখন স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করে, তখন মাথাব্যথা, পিঠ ব্যথা, অবসন্নতা তৈরি হয়। পোলিও একটি উচ্চমাত্রার সংক্রামক রোগ, যা আক্রান্ত মানবদেহের অন্ত্রস্থ জীবাণুযুক্ত মলের নির্গমন ও সেই মলদ্বারা দূষিত পানি বা আহার্য গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ দেহে সংক্রামিত হয়।

প্রাদুর্ভাবসম্পন্ন এলাকায় ওয়াইল্ড পোলিও ভাইরাস সব জনগোষ্ঠীকে সংক্রামিত করার সামর্থ্য রাখে। গ্রীষ্ম ও শরতে পোলিওর প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং শীতে তুলনামূলক কম হয়। এই জীবাণুর সুপ্তকাল ৬ থেকে ২০ দিন যা গড়ে ৩ থেকে ৩৫ দিন পর্যন্ত হয়। প্রথম সংক্রমণের পর হতে মলে দীর্ঘদিন ধরে পোলিও ভাইরাস নির্গমন হয়।

উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৭ দিন আগে এবং উপসর্গ দেখা দেওয়ার ১০ দিন পরে থেকে পোলিও জীবাণুর সংক্রমণ সক্ষমতা অধিক থাকে। তবে যতদিন পর্যন্ত লালা ও মলে জীবাণু নির্গত হয়, ততদিন পর্যন্ত সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

শারীরিক পরিশ্রমে অনীহা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি, পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি কারণে সংক্রমণ ত্বরান্বিত হয়। গর্ভস্থ ভ্রূণে মায়ের রক্তের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে। তবে মায়ের পোলিও টিকা গ্রহণ বা পোলিও সংক্রমণ গর্ভস্থ ভ্রূণকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না।

রোগ নিরূপণ

প্যারালাইটিক পোলিও ক্লিনিক্যালি নিরূপণ করা সহজ। বিশেষত, যারা হঠাৎ করে হাত বা পায়ের ঢলঢলে প্যারালাইসিসে ভুগছে এবং হাত বা পায়ের মাংসপেশির টেন্ডনগুলোর প্রতিক্রিয়া হ্রাস পায় বা থাকে না।

ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় রোগ নিরূপণে আক্রান্ত বা সন্দেহজনক রোগীর মল বা গলার সোয়াব নেওয়া হয়। রোগীর রক্তে পোলিও ভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি পাওয়া যেতে পারে।

সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড বিশ্লেষণে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত প্রোটিন পাওয়া যেতে পারে। এই ফ্লুইডে খুব বিরলভাবে পোলিও ভাইরাস পাওয়া যায়।

ইতিহাস

এ রোগ প্রথম ১৭৮৯ সালে ইংরেজ চিকিৎসক মিকায়েল আন্ডারউড কর্তৃক শনাক্ত হয়। ১৯০৯ সালে অস্ট্রিয়ার ইমিউনোলজিস্ট কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার প্রথম পোলিও ভাইরাস চিহ্নিত করেন। প্রথম ইনজেকশনযোগ্য পোলিও ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন জোনাস এডওয়ার্ড সক। এরপর মুখে খাওয়ার বিশ্বমানের পোলিও ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী আলবার্ট স্যাবিন। পোলিও নির্মূলে দুই ধরনের টিকার প্রচলন আছে। এই দুই রকম টিকাই রক্তে ইমিউনিটি বা রোহ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় করে তোলে। এর মাধ্যমে জন থেকে জনে ওয়াইল্ড পোলিও ভাইরাসের সংক্রমণকে প্রতিরোধ করা যায়। এতে হার্ড (Herd Immunity) ইমিউনিটি তৈরি হয়।

প্রথম ধরনের ভ্যাকসিন হলো লাইভ অ্যাটেনিউয়েটেড ভ্যাকসিন যা জীবাণুকে দুর্বল করে তৈরি করা হয়। এটি ভাইরোলজিস্ট হিলারি কপ্রোভস্কি আবিষ্কার করেছেন। দ্বিতীয় রকমের ভ্যাকসিন হলো সক (Salk) ভ্যাকসিন, যা পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানী জোনাস এডওয়ার্ড সক তৈরি করেছেন। পরবর্তী সময়ে আলবার্ট স্যাবিন ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন।

প্রতি বছর ২৪ অক্টোবর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্ব পোলিও দিবস পালন করে। ১৯৮৮ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে এ দিবস পালিত হয়, যখন সারা বিশ্বে পোলিও মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। বিশ্বের অনেকগুলো দেশে পোলিও নির্মূল হলেও বর্তমানে পাকিস্তান, আফগানিস্তানে ওয়াইল্ড পোলিও রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। পোলিও নির্মূলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাশাপাশি রোটারী ইন্টারন্যাশনালও কাজ করছে। ‘End Polio’ বর্তমানে সারা বিশ্বের একটিই স্লোগান। ২০২১ সালের পোলিও দিবসে রোটারি ইন্টারন্যাশনালের থিম হলো One day, One focus : End Polio. দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল পোলিও নির্মূলে কাজ করছে এবং প্রায় ২.১ বিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থ ব্যয় করেছে। ১৯৭৯ সালে ফিলিপাইনের শিশুদের সর্বপ্রথম পোলিও ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রজেক্ট নিয়ে রোটারী ইন্টারন্যাশনাল এগিয়ে আসে। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৯৯.৯ শতাংশ পোলিও নির্মূল হয়ে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়