প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৩, ০০:০০
মানুষের জন্যে বিশ্রামের এক অনিবার্য ব্যবস্থা হলো নিদ্রা। নিদ্রাবিহীন সুস্থতা বজায় রাখা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। ঘুমে নাক ডাকা মানে শব্দায়মান নিদ্রা যা কখনো কখনো ভয়ানক এবং জীবন শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটা সকল বয়সে এবং নারী-পুরুষ সকলের জন্যে একটা উল্লেখযোগ্য সমস্যা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় নয় কোটি পূর্ণবয়স্ক মানুষ নাক ডাকা ঘুমে আক্রান্ত এবং প্রায় তিন কোটি সত্তর লক্ষ মানুষ নাক ডাকা ঘুমে নিয়মিত ভোগে। ঘুমে নাক ডাকা রাতের ঘুমেও হতে পারে আবার দিনব্যাপী থেকে থেকেও হতে পারে। পুরুষ এবং স্থুলদেহীরা নাক ডাকা ঘুমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বা ঝুঁকি বেশি। নাক ডাকা ঘুম নারী-পুরুষ সবার জন্যে সমস্যা হলেও নারী কখনো নাক ডাকা ঘুমের অভিযোগে আক্রান্ত নয়।
বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নাক ডাকা ঘুমের প্রকোপ বাড়ে এবং এর দ্বারা নিজের ঘুম যেমন ছিঁড়ে যায় বা ভেঙে যায় তেমনি নিদ্রাসঙ্গীর ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটে মারাত্মক। এর কারণে জাগরণে সতেজতা থাকে না বরং দিবানিদ্রালুতার পরিমাণ বাড়ে ও কর্মদক্ষতা হ্রাস পায়। দেহমন ক্লান্ত হয়ে যায়। বলা হয়, যারা উচ্চনাদে নাক ডাকে তাদের অধিকাংশের হৃদরোগের আশঙ্কা তৈরি হয় এবং অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া বা বাধাজনিত নিদ্রাকালীন শ্বাসকষ্টে তারা ভোগেন।
নাক ডাকা ঘুম কেন হয়?
ঘুমালে গলার পেশি শিথিল হয়, জিহ্বা পেছনের দিকে হেলে থাকে, শ্বাসনালী সংকীর্ণ এবং থপথপে হয়ে যায়। ফলে যখন নিদ্রাকালীন ব্যক্তি শ্বাস নেয় তখন গলার দেয়ালগুলো কাঁপতে থাকে বিশেষ করে প্রশ্বাস বায়ু গ্রহণকালীন তা বেশি হয়। এই কম্পনই নাক ডাকার শব্দ তৈরি করে। যতো সংকীর্ণ হয়ে আসে শ্বাসনালী ততো নাক ডাকার শব্দ ভয়াবহ হতে থাকে। কখনো কখনো গলার দেয়ালগুলো এতোবেশি কল্যাপ্সড হয়ে যায় যে শ্বাসনালীর পথ রুদ্ধ হয়ে যায় সম্পূর্ণ মাত্রায় এবং এতে নিদ্রাকালীন শ্বাসকষ্ট বা সস্নিপ অ্যাপনিয়া তৈরি হয়। তাই নিদ্রাকালীন শ্বাসকষ্টের এই জরুরি অবস্থায় মেডিকেল মনোযোগ দরকার হয়।
নাক ডাকা ঘুমের কারণসমূহ
* বয়সের কারণে গলার মাংশপেশি খুব বেশি শিথিল হয়ে যায় যা নিদ্রাকালীন নাক ডাকার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
* গলার টনসিল বৃদ্ধি পেলে, বাচ্চাদের অ্যাডেনয়েড হলে ও তা বৃদ্ধি পেলে, নাকে পলিপ হলে, নাকের বিভেদকারী দেয়ালের হাড় ডানে বা বামে বেঁকে গেলে বাতাস প্রবাহে বাধা পায় ও নাক ডাকার ঘটনা ঘটে।
* নাকে-গলায় অ্যালার্জি ও জীবাণু সংক্রমণ হলে এবং সেই কারণে শ্বাসনালীর প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন হলে নাক ডাকার সমস্যা উদ্ভূত হয়।
* নিদ্রাকালীন ভঙ্গি যেমন : ঘাড় গুঁজে থাকা, পিঠে ভর দিয়ে শোয়া ইত্যাদির কারণেও নাক ডাকা ঘুম হয়।
* সন্ধ্যায় অ্যালকোহল সেবনে রাত্রের ঘুমে গলার মাংসপেশি অধিক শিথিল হয়ে আসে এবং নাক ডাকার ঘটনা ঘটে।
* সন্ধ্যায় মাংসপেশি শিথিলকরণের ঔষধ সেবনে রাতে নাক ডাকার ঘটনা ঘটতে পারে।
* যারা স্থূল দেহের অধিকারি এবং যাদের গলার চতুর্দিকে চর্বিসমৃদ্ধ কোষ-কলা অধিক তারা নাক ডাকা ঘুমে আক্রান্ত হতে পারেন।
নাক ডাকা ঘুমের উপসর্গ
* ঘুমে শব্দ হওয়া, নিঃশ্বাস নেয়াকালীন কেঁপে ওঠা ইত্যাদি উপসর্গ বলে দেয়, ব্যক্তি নিদ্রাকালীন সস্নিপ অ্যাপনিয়াতে ভুগছেন।
* অতিরিক্ত দিবানিদ্রার প্রবণতা
* সকালের মাথাব্যথা
* সামপ্রতিক মেদস্থূলতা বা দৈহিক স্থূলতা
* সকালে নিদ্রা জাগরণের পরও পর্যাপ্ত বিশ্রাম হয়নি বলে মনে হওয়া
* রাতে থতমত খেয়ে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া
* মনোযোগ ও একাগ্রতার স্তর নিম্নমুখী হওয়া
* স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া
* নিদ্রাকালীন নিঃশ্বাসে বিরাম বা বিরতি লক্ষ্য করা ইত্যাদি।
নাক ডাকা ঘুমের চিকিৎসা
* নাক ডাকা ঘুমে আক্রান্তকারীকে তার নাক ডাকা সম্পর্কে অবহিত করুন ও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
* প্রয়োজনে নিদ্রা-বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা নিন যিনি ঘুমের বিশ্লেষণ করে সমাধান দিতে পারেন।
* জীবনাচরণের পরিবর্তন ঘটান। নাক ডাকা নিদ্রাকে উসকে দেয় এমন খাদ্য, পানীয়, আচরণ পরিত্যাগ করুন
* অ্যালার্জির চিকিৎসা নিন
* ঘুমের কায়দা ও পজিশন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিন
* নাকের বিভেদকারী দেয়াল শৈল্য চিকিৎসার মাধ্যমে সোজা করিয়ে নিন
* নাসিকাণ্ডছিদ্র প্রশস্থকারী ডিভাইস ব্যবহার
* অনবরত নাসিকাণ্ডছিদ্রে ধনাত্মক বায়ুচাপ বজায় রাখার প্রকৌশল ব্যবহার
* অতিরিক্ত দৈহিক ওজন কমিয়ে আনতে হবে
* ঘুমের বড়ি না খাওয়া এবং অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় ঔষধ, মন প্রশান্তকারী ঔষধ ঘুমের পূর্বে সেবন করা পরিহার করতে হবে
* রাতে ঘুমুতে যাওয়ার দুই ঘণ্টা আগে আহার সম্পন্ন করুন
* চিৎ হয়ে না শুয়ে কাত হয়ে শোয়ার অভ্যেস করুন।
কৃতজ্ঞতা : ভিক্টর হফস্টেইন, এমডি