মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া, স্ত্রীর আত্মহত্যা
  •   ভারতকে কড়া বার্তা শ্রম উপদেষ্টার
  •   আধুনিক নৌ টার্মিনাল প্রকল্প পরিদর্শনে চাঁদপুরে নৌপরিবহণ উপদেষ্টা
  •   ডাকাতিয়া নদী ও সিআইপি অভ্যন্তরস্থ খাল খননসহ ৫ দফা দাবিতে সংগ্রাম কমিটির সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০০

শোকরিয়া, এখনো বেঁচে আছি

মোঃ ইকবাল-বিন-বাশার
শোকরিয়া, এখনো বেঁচে আছি

চাঁদপুর কণ্ঠের বয়স ১৭ জুন ২০২৪ কাঁটায় কাঁটায় তিরিশ বছর পূর্ণ হবে। আর আমার বয়স এখন সত্তরে। আমি যখন চল্লিশের কোঠায়, তখন চাঁদপুর কণ্ঠ এক বর্ষণমুখর দিনে তার আত্মপ্রকাশ ঘটায়। দিনটি ছিলো ১৭ জুন ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩ আষাঢ় ১৪০১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার। তারপর চাঁদপুর কণ্ঠ সাপ্তাহিক হিসেবে সাড়ে চার বছর এবং বাকি সাড়ে পঁচিশটি বছর দৈনিক হিসেবে অবিরাম প্রকাশিত হয়ে চলছে। চাঁদপুর কণ্ঠকে নিয়ে সৃষ্টির প্রসব বেদনা যেমন আমার আছে, এতোটা পথ পাড়ি দেওয়ার কষ্ট ও আনন্দময় অনুভূতিও আছে। সব মিলিয়ে মহান স্রষ্টা পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে মাথা নত করে কৃতজ্ঞতা তথা শোকরিয়া প্রকাশের তাগিদও আছে। কেননা আমি এখনো বেঁচে আছি এবং চাঁদপুর কণ্ঠের তিরিশ বছরপূর্তি উদযাপনের বিরল সুযোগ পেয়েছি।

চাঁদপুর কণ্ঠের টাকায় আমি এতোটা দীর্ঘ সময়ে গাড়ি কিনতে পারিনি, বাড়ি করতে পারিনি, চাঁদপুর কণ্ঠের নিজস্ব অফিস নির্মাণ করতে পারিনি। তবে নিঃসন্দেহে গৌরববজনক ইতিহাস নির্মাণ করতে পেরেছি। স্বস্তি ও নিরন্তর সুখ আমার এইখানে যে, চাঁদপুর কণ্ঠকে জেলাবাসীর প্রথম দৈনিক মুখপত্রে পরিণত করতে পেরেছি এবং নানা প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নিরবচ্ছিন্ন প্রকাশনায় সমৃদ্ধ করতে পেরেছি, সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকের মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে পেরেছি। সেজন্যে সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহতা’লার- আলহামদুলিল্লাহ।

চাঁদপুর কণ্ঠের তিরিশ বছরের বিরামহীন পথচলায় অনেকে নানা কারণে অন্যান্য পত্রিকায় চলে গেছেন কিংবা সাংবাদিকতা ছেড়ে অন্য পেশায় যোগদান করেছেন। কিন্তু যে ক’জন তিরিশ বছর ধরে চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবারে অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় রয়ে গেছেন, তাঁদের সংখ্যা খুবই কম এবং তাঁরা হচ্ছেন : প্রফেসর বিলকিস আজিজ (আমার সুপ্রিয় সহধর্মিণী, সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও চাঁদপুর কণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক), কাজী শাহাদাত (চাঁদপুর কণ্ঠের সাপ্তাহিক সময়ের নির্বাহী সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং দৈনিকের পুরোটা সময় জুড়ে প্রধান সম্পাদক), মির্জা জাকির (সাপ্তাহিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাকালীন বার্তা সম্পাদক ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের বর্তমান নির্বাহী সম্পাদক)। খুঁটিসম এঁদের কারণে এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদে কর্মরতদের কল্যাণে চাঁদপুর কণ্ঠের প্রকাশনায় বিরাম বা বিরতি ঘটেনি।

এ কথা আমাকে অকপটে স্বীকার করতেই হবে যে, সর্বশেষ বিগত এক দশকে যারা নানা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও চাঁদপুর কণ্ঠকে ছেড়ে যাননি, তাদের ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তায় চাঁদপুর কণ্ঠ তিরিশ বছরপূর্তির মাইলফলক অতিক্রম করতে যাচ্ছে। এরা হচ্ছেন : এএইচএম আহসান উল্লাহ (বার্তা সম্পাদক), বিমল চৌধুরী (চীফ রিপোর্টার), সেলিম রেজা (ম্যানেজার), মিজানুর রহমান (সাবেক যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও বর্তমান সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার), গোলাম মোস্তফা (সাবেক চীফ ফটোগ্রাফার ও বর্তমান সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার), চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম (চীফ ফটোগ্রাফার), সোহাঈদ খান জিয়া (সার্কুলেশন ম্যানেজার), মোহাম্মদ আব্দুর রহমান গাজী (সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার), মুহাম্মদ ফরিদ হাসান (সহ-সম্পাদক) এবং বিভিন্ন উপজেলার ব্যুরো ইনচার্জসহ অন্য প্রতিনিধিবৃন্দ।

চাঁদপুর কণ্ঠের পরে প্রকাশিত কিছু দৈনিকের সম্পাদক ও প্রকাশক ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং কোনো কোনো দৈনিক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে, আবার কোনো কোনোটি অনিয়মিত প্রকাশনার মধ্য দিয়ে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত আছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে চাঁদপুর কণ্ঠসহ অন্য সকল পত্রিকাই কম-বেশি ধকল খেয়েছে এবং ক্রমবর্ধমান অনলাইন পত্রিকা/পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম [ফেসবুক, এক্স ডটকম (সাবেক টুইটার), ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি]-এর দাপটে অস্তিত্ব সঙ্কটে পতিত হয়েছে। এমন কঠিন বাস্তবতায় চাঁদপুর কণ্ঠ এখনো বেঁচে আছে এবং আমিও বেঁচে আছি- এটা কম কিসের!

শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়েই চাঁদপুর কণ্ঠের ন্যায় মুদ্রিত সংবাদপত্রগুলোর দুর্দিন চলছে, যেটি ক্রমশ চরম পর্যায়েই চলে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় চাঁদপুর কণ্ঠ অনলাইন সংস্করণ (www.chandpurkantha24.com)-এ মনোযোগী হওয়াটা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এই দাবি পূরণে আমি অবশ্যই আন্তরিক, তবে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশী।

মানুষ মরণশীল। আমিও তার ঊর্ধ্বে নই। চাঁদপুর কণ্ঠ মুদ্রিত কিংবা অনলাইন সংস্করণ যেভাবেই বেঁচে থাকুক, হয়তো পর্যায়ক্রমে তিন যুগপূর্তি/চার দশকপূর্তি/পঞ্চাশ বছরপূর্তিতে সুবর্ণজয়ন্তী ইত্যাদি উদযাপিত হবে, আমি তখন নাও থাকতে পারি- এসব নিয়ে দুর্ভাবনায় ভুগি না। আমার মাথায় কেবল একটাই আনন্দ-ভাবনা এবং সেটি হচ্ছে, চাঁদপুর কণ্ঠের বিরামহীন তিরিশ বছরের মাইলফলক আমি দেখতে পেলাম এবং এর আনুষ্ঠানিক উদযাপনের পরিকল্পনাতে নিজেকে শামিল করতে পারলাম।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ; তিন মেয়াদের সাবেক সভাপতি : চাঁদপুর প্রেসক্লাব ও চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতি; সাবেক সভাপতি : চাঁদপুর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়