মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবীর ঐতিহ্য ‘আরুসাত-আল-মোলিদ’ : জন্মদিনের পুতুল
  •   'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য'
  •   চাঁদপুরের ২৪তম পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব
  •   ফরিদগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শোভাযাত্রা
  •   ওয়াইফাই সংযোগ দিতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০০

আমার লেখক হবার গল্প

হাসান আলী
আমার লেখক হবার গল্প

শিল্প সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ থাকায় কলেজ জীবনে চাঁদপুরের সাহিত্যপ্রেমীদের সাথে আমার পরিচয় ঘটে। কলেজ বার্ষিকীতে আমার প্রথম লেখা ছাপা হয় ১৯৮০ সালে। ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখার অপার আনন্দ আজও আবেগাপ্লুত করে। চাঁদপুরে কয়েকটি সাহিত্য সংগঠন তখন বেশ সক্রিয় ছিল। এর মধ্যে নির্ঝর সাহিত্য চক্র ছিল বেশ আলোচিত। সে সময় মাসিক নির্ঝর সাহিত্য পত্রিকা উদীয়মান লেখকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। নির্ঝর সাহিত্য চক্রের উদ্যোগে চাঁদপুর টাউন হলে একটা সাহিত্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো। যেখানে এসেছিলেন ঢাকা থেকে কবি আল মুজাহদী, আবদার রশিদসহ বেশ ক’জন কবি সাহিত্যিক। এসব অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে কাজ করতে গিয়ে কাজী শাহাদাতের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেশার সুযোগ আসে। ঘনিষ্ঠতা থাকার পরও আমার কোনো লেখা তাঁর সম্পাদনায় কোনো কাগজে প্রকাশিত হয়নি।

পেশাদার বিপ্লবী হবার আকাঙ্ক্ষা বিসর্জন দিয়ে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠা পাবার মোহে ১৯৯০ সালে চাঁদপুর ছেড়ে আসলাম। চাঁদপুরে আমার দশ বছরের অবস্থান নিঃসন্দেহে দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ এবং রোমাঞ্চকর ছিলো। পরবর্তীকালে দেশের বিভিন্ন জেলায় এনজিওতে দশ বছর চাকরি শেষে ঢাকায় থিতু হবার সুযোগ আসে। একই সাথে চাঁদপুর আসার সুযোগ বেড়ে গেলো।

চাঁদপুর আসলে চাঁদপুর কণ্ঠের অফিসে আড্ডা দিতে আসতাম। বেশির ভাগ সময়ই কাজী শাহাদাতের টেবিল ঘিরে নানান রকমের গল্প গুজব, হাসি ঠাট্টা, স্মৃতিচারণ ছিল খুবই উপভোগ্য। আড্ডায় অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ আমাকে স্মৃতিচারণমূলক লেখা চাঁদপুর কণ্ঠে পাঠানোর পরামর্শ দিলো। আমি আনন্দে এবং অতি উৎসাহে সম্মতি পাবার আশায় কাজী শাহাদাতের মুখের দিকে তাকালাম। তিনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, লেখা পাঠান, পছন্দ হলে ছাপাবো আর পছন্দ না হলে সম্পাদকের টেবিল মুছে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিবো। সবার অট্টহাসিতে আমার মুখখানি চুপসে গেল। বিদায় নিয়ে চলে আসার সময় কাজী শাহাদাত আমাকে লেখা পাঠাতে বললেন। মাসখানেক পরে একটা লেখা কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠালাম।

কয়েকদিন পর আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী ফোনে জানালেন চাঁদপুর কণ্ঠে আমার একটা লেখা পড়েছেন। আনন্দে আমার মনটা নেচে উঠলো।

তারপর চারটি লেখা একত্র করে চাঁদপুর কণ্ঠের ঠিকানায় পাঠালাম। প্রতি সপ্তাহে আমার লেখা চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হতে লাগলো। শুরু হলো নামের বিভ্রান্তি! চাঁদপুর কণ্ঠে হাসান আলী নামে পুরাণবাজার কলেজের একজন অধ্যাপক কলাম লিখতেন। কেউ কেউ ভাবছিলেন হয়তো এগুলো তাঁরই লেখা। অচিরেই পাঠক দুই লেখকের লেখার পার্থক্য ধরে ফেলেছেন। প্রথম তিন-চার বছর আমার লেখা সম্পাদনা করে বিরক্ত হতেন কাজী সাহেব। লেখার মান উন্নয়নে বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন। তবে তিনি সবসময় বলতেন, আপনার লেখা সংক্ষিপ্ত, বস্তুনিষ্ঠ, মেদহীন এবং সহজবোধ্য। আমি এটুকু প্রশংসায় আকাশে ভেসে বেড়াতাম। আমার কিছু লেখা ফেসবুকে জনপ্রিয় হলে জাতীয় দৈনিকে আমি কয়েকটি লেখা ছাপানোর জন্যে পাঠাই। আমার লেখা ইত্তেফাক, যুগান্তর, সমকাল, সংবাদ, আমাদের সময় সহ বেশ ক’টি পত্রিকায় প্রকাশিত হলে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ আমার যেসব লেখা চার পাঁচ বছর আগে ছেপেছে সেসব লেখা ঢাকার কয়েকটি দৈনিক আগ্রহ নিয়ে নিয়ে প্রকাশ করেছে। চাঁদপুর কণ্ঠ শুধু আমার লেখা দিয়ে পুরো পাতা প্রকাশ করে আমাকে সম্মানিত করেছে। বাংলাদেশে ইত্তেফাক যেমন একটি প্রতিষ্ঠান তেমনি চাঁদপুরে চাঁদপুর কণ্ঠ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। চাঁদপুর কণ্ঠে লিখে সাংবাদিকতায় হাতে খড়ি হয়েছে অনেকের। কবি সাহিত্যিক সংগঠক হিসেবে গড়ে উঠেছেন এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়। বিতর্ককে জনপ্রিয়তা দিতে চাঁদপুর কণ্ঠের উদ্যোগ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজী শাহাদাত চাঁদপুরের শিল্প সাহিত্য, সাংবাদিকতায় নিরলসভাবে কাজ করছেন। তিনি অনেকের শ্রদ্ধাভাজন আবার কারো কারো বিরাগভাজন। তবে তিনি আমার প্রিয়জন।

পরিবারের বাইরে যে ক’জন মানুষের সাথে নানা বিষয়ে আমার কথা হয়, কাজী শাহাদাত তাঁদের অন্যতম। তাঁর সাথে আমার মানসিক নৈকট্য উল্লেখ করার মতো। আমার প্রায় চার শতাধিক লেখা তিনি সম্পাদনা করেছেন, ফলে তিনিই আমার সেরা পাঠক। কাজী শাহাদাত মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন একজন উঁচু মানের মানুষ। ১৯৮০ সাল থেকে তাঁর সাথে আমার পরিচয়, কিন্তু কখনো সম্পর্ক টানাপোড়েনে যায়নি। আমার আজকের সামাজিক পরিচিতি নির্মাণে তিনি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালন করেছেন।

চাঁদপুর কণ্ঠে আমার লেখা নিয়মিত প্রকাশ না হলে আমার লেখক হিসেবে গড়ে ওঠা সম্ভব হতো কিনা সন্দেহ।

চাঁদপুর কণ্ঠের তিরিশ বছর পূর্তি- এটি বিরল সৌভাগ্যের বিষয়। আমি এই সৌভাগ্যের একজন অংশীদার।

লেখক : প্রবীণ বিষয়ে লেখক, গবেষক ও সংগঠক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়