মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবীর ঐতিহ্য ‘আরুসাত-আল-মোলিদ’ : জন্মদিনের পুতুল
  •   'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য'
  •   চাঁদপুরের ২৪তম পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব
  •   ফরিদগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শোভাযাত্রা
  •   ওয়াইফাই সংযোগ দিতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০০

চাঁদপুর কণ্ঠের তিন দশকপূর্তি হোক সমৃদ্ধ মুক্তচিন্তার ও শাশ্বত ইচ্ছার প্রতিফলন

সামীম আহমেদ খান
চাঁদপুর কণ্ঠের তিন দশকপূর্তি হোক সমৃদ্ধ মুক্তচিন্তার ও শাশ্বত ইচ্ছার প্রতিফলন

কালের প্রেক্ষাপটে ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সমাজ অভিজ্ঞতা এবং সময়োচিত অভিজ্ঞানসহ বহুমাত্রিক লেখনির ধারা ও সমৃদ্ধ মননশীলতায় চাঁদপুরের সচেতন পাঠকদের দ্বারে চাঁদপুর কণ্ঠের তিন দশকপূর্তির সন্ধিক্ষণে কিছু একটা লেখার প্রচণ্ড তাগিদ অনুভব করছি। কিন্তু সময়ের ¯্রােতে নিজেকে উজাড় করে শিল্প ও কর্মের নন্দনতত্ত্বটুকু বের করে শব্দ এবং বাক্যের সুনিপুণ বিন্যাস সৃষ্টি করার মতো মেধার সঙ্কট দু হাতে সরাবার চেষ্টায় রত হয়ে চাঁদপুর কণ্ঠকে নিয়ে লিখবো বলে কলম ধরেছি।

ঋণ পরিশোধের দায়মুক্ততা নয়, সারল্যভরা মন থেকেই সৃজনশীল আনন্দ-অনুভূতির প্রকৃত স্বরলিপিগুলো তুলে ধরবার একটা নীরব ইচ্ছা মনে জাগ্রত হয়ে আছে। চাঁদপুর কণ্ঠকে সাফল্য ও সাধনার জগতে সমৃদ্ধির অনুপম প্রতিমূর্তি হিসেবে দেখে এসেছি এবং অবিরাম অবিরত দেখতেও চাই। কণ্ঠে ধারণ করতে চাই চাঁদপুর কণ্ঠের আলোয় উদ্ভাসিত সব অক্ষর, বাক্য, শব্দাবলি ও কথামালা। তাই নির্মলেন্দু গুণের একটি বিখ্যাত কবিতা চাঁদপুর কণ্ঠের শরীরে রাঙিয়ে দিলামণ্ড-

‘এইবার হাত দাও, টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব? পাচ্ছো না?

একটু দাঁড়াও আমি তৈরি হয়ে নিই।

এইবার হাত দাও, টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব?

...এই হলো আমার আঙ্গুল, এইবার স্পর্শ করো- ওটা নয়, ওটা কণ্ঠনালী, গরল বিশ্বাসী এক শিল্পীর মাটির ভাস্কর্য।

...হাত দাও, হ্যাঁ, ওটা বুক অইখানে হাত রাখো, ওটাই হৃদয়।’

মানুষের হৃদয়ের আবেদন অনুধাবনে প্রতিটি চরিত্রকেই নিজের শ্রেণিগত গণ্ডি অতিক্রমের জন্যে নিজের সাথেই সংগ্রামে লিপ্ত থাকতে হয়। সে সংগ্রামদীপ্ত জীবনের চারপাশে উঁচুমনের মানুষ যেমন পাওয়া ভার, তেমনি গঠনমূলক সৃষ্টির মাঝে নিজেকে আত্মনিয়োগ করাটাও কঠিন। মুক্তচিন্তার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির পথকে সুগম করার জন্যে যুগে যুগে মানুষের সংগ্রামের অন্ত ছিলো না। সংগ্রামে সগৌরবে মানুষ তার নিজস্বতাকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। নিজস্বতাকে রক্ষা করা আমাদের মৌলিক দায়িত্ব। সেই মৌলিকত্ব যদি সাবলীল ও স্বাভাবিক হয়, তবে ব্যক্তিগত আনন্দ-বেদনা, প্রাপ্তি-বঞ্চনা এক সুতোয় আশ্রয় নেয়।

প্রিন্ট মিডিয়ার দিক থেকে চাঁদপুর তার নিজস্বতা তৈরি করে একটি আঞ্চলিক বলয় নির্মাণ করেছে ইতোমধ্যে। এ নির্মিত আঞ্চলিক বলয়ে চাঁদপুরের প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকাগুলো স্ব স্ব অবস্থান সৃষ্টি করেছে। সে প্রেক্ষাপটে এবং পাঠকপ্রিয়তার দিক থেকে চাঁদপুর কণ্ঠের অবস্থান একটি সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছে, যা সমসাময়িক অবয়বের অনেক ঊর্ধ্বে।

পাঠকের নিজস্বতাকে ভর করে তার আপন ভুবন সৃষ্টির মাধ্যমেই তৈরি হয় একটি পত্রিকার পছন্দণ্ডঅপছন্দের স্বরলিপি। সেদিক থেকে সমৃদ্ধ স্বরলিপির গীতাঞ্জলি বহন করছে চাঁদপুর কণ্ঠ। রবীঠাকুর যেন আমাকেই বললেন, ‘তুমি একবার বিশ্বের মাঝখানে এসে সমস্ত আপনকে বুঝে নাও। এই ঘর গড়া ফাঁকির মধ্যে কেবলমাত্র ঘরকন্যাটুকু করে যাওয়ার জন্য তুমি হওনি আমিও হইনি। সত্যের মধ্যে আমাদের পরিচয় যদি পাকা হয় তবেই আমাদের ভালোবাসা সার্থক হবে’।

তাই পাঠকের একান্ত নজরটুকু কেড়ে নিতে হলে পত্রিকা পরিবারের মানুষগুলোকে হতে হবে মুক্তচিন্তা ও মুক্তমনের মানুষ। সেদিক থেকে চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবার তথা কাজী শাহাদাত ভাই একধাপ এগিয়ে আছেন বলেই আমার বিশ্বাস। কারণ পাঠকশূন্যতায় লালিত অহংবোধ বাস্তব সত্যের ধাক্কায় ম্লান হয়ে যেতে বাধ্য।

তাই রবীন্দ্রনাথের নিখিলেশের কথায়, আমি যেন আমারই উচ্চারণ শুনতে পাই- ‘আমি বিশ্বাস হারাবো না আমি অপেক্ষা করবো’।

শিল্প-সাহিত্য এবং সংস্কৃতির শতাব্দী প্রাচীন পূর্ণতার ঐতিহ্য বহন করছে চাঁদপুর জেলা। এক অর্থে সংস্কৃতির এক চারণভূমি চাঁদপুর। মেধা ও প্রজ্ঞার সমন্বয় ঘটিয়ে চাঁদপুরের সচেতন পাঠক ও সৃজনশীল মিডিয়া স্বাক্ষর রেখেছে বিভিন্ন পর্যায়ে। ভৌগোলিক পরিচিতিকে করেছে আপন মহিমায় ভাস্বর। এখানকার কিয়দংশ দৈনিক পত্রিকার সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল বলয় স্ব স্ব আভিজাত্য এবং শুভ্রতা নিয়ে সামাজিক বলয় সৃষ্টি করেছে। সমাজের এ অবস্থানকে সুসংহত করতে প্রয়োজন মুক্তচিন্তা এবং সৃষ্টিশীল কর্ম। সময়ের দাবিতে যার উপজীব্য মাধ্যম চাঁদপুরের সর্বাধিক প্রচারিত প্রথম দৈনিক হিসেবে চাঁদপুরবাসীর মহামিলনের অঙ্কুরিত স্বপ্নকে বুকে ধারণ করেই চাঁদপুর কণ্ঠের আত্মপ্রকাশ থেকে তিন দশকপূর্তির জয়গান সত্যিই এক শ্রেষ্ঠতম উপহার।

সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুস্থ মূল্যবোধে বিশ্বাসী চাঁদপুরের একটি সুশীল সমাজ চাঁদপুর কণ্ঠের আত্মপ্রকাশ থেকে তিন দশক পর্যন্ত সময়কালকে দায়িত্বশীল, ইতিবাচক ও আলোকিত সমাজগঠনে একটি সমৃদ্ধ উপহার হিসেবে দেখছে।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে উপঢৌকন প্রদানের কিছু নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি চোখে পড়ে। যেমন : ১৭৬৫ সালের ১২ আগস্ট রবার্ট ক্লাইভ যখন দ্বিতীয় বারের মতো বাংলার গভর্নর হয়ে আসেন, তিনি এসেই স¤্রাট দ্বিতীয় শাহআলম ও অযোধ্যার নবাবকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী উপঢৌকন প্রদান করেন। ইতিহাসে এর একটি ইতিবাচক দিক রয়েছে। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মূর্ত প্রতীক ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ ১৮৮৬ সালের ২৮ অক্টোবর আমেরিকাকে উপঢৌকন হিসেবে প্রদান করে ফ্রান্স। মার্কিনিরা নিউ ইয়র্কে ১৯২৪ সালের ১৫ অক্টোবর লিবার্টি আইল্যান্ডকে তাদের জাতীয় স্থাপনা হিসেবে বিশ্বকে পরিচয় করে দেয়। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সরকারি নির্দেশে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মাঝে রাখী বন্ধন উপঢৌকন দেন। যা উভয় সম্প্রদায়ের ঐক্যের প্রতীক ছিলো। ১৯৯৭ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা) শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতার স্মারক শিখা প্রজ্জ্বলন করেন। প্রজ্জ্বলন শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রজ্জ্বলিত মশাল মুক্তিযোদ্ধাদের উপঢৌকন প্রদান করেন। যা ‘শিখা চিরন্তন’ নামে পরিচিত। তাই চাঁদপুরবাসীর নিকট চাঁদপুর কণ্ঠের তিন দশকপূর্তি যেন এ ধরনের উপঢৌকন হিসেবে হবে সমাদৃত।

আত্মস্বতন্ত্রবোধ রক্ষার যে প্রেরণা কার্যকর করা হয়েছিলো চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকপ্রিয়তার রুচিবোধ ও সৃজনশীলতার মান বৃদ্ধির প্রয়াসকে একটি সাংস্কৃতিক এবং অন্যতম বাচিক শিল্পের জাগরণ ঘটানোর পথ তৈরি করার জন্যে, তা হলো প্রথম পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা। মেধাভিত্তিক মননশীল শিল্পকর্ম জীবনের ফিতা দিয়ে মাপা যায় না। সেটা একটা ক্ষুদ্র আলোকবর্তিকা হলেও একসময় আলোর ঝর্ণারাশি হয়ে ফুটে উঠে। মনে পড়ে ১১ এপ্রিল, ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০০৯-এর প্রথম পর্বের উদ্বোধনীতে শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছি। অনুভূতির রেণুগুলো উত্তপ্ত হতে শুরু করলো। অন্যতম দুজন বিচারক ছিলেন প্রকৌশলী মোঃ দেলোয়ার হোসেন (আল্লাহপাক তাঁকে বেহেশত নসিব করুন) এবং শ্রদ্ধাভাজন জীবন কানাই চক্রবর্তী (দ্রুত সুস্থতা লাভের জন্যে আশীর্বাদ করছি)।

মুক্তবুদ্ধির চর্চা কখনও ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয় না। এটি সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবয়বের মধ্য দিয়ে একটি জাগরণ সৃষ্টি করে। সে জাগরণ বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, আশা-আনন্দের প্রতিফলন, শব্দণ্ডবাক্যের যথাযথ উচ্চারণ, পরিভাষার যথার্থ ব্যবহার, উপভাষার ভিন্নমত পরিহার, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির মেলবন্ধন সৃষ্টির দার্শনিক মতবাদ তৈরির ইতিবাচক প্রেক্ষাপট উন্মোচন ও বাচিক শিল্পের নান্দনিক শিল্পসম্মত সার্থক রূপায়ন সৃষ্টির অন্যতম বাহন বিতর্ক। ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের শ্রদ্ধাভাজন কাজী শাহাদাত ভাই এ বিতর্ক নামক নক্ষত্রটিকে দীর্ঘসময় বৈচিত্র্য ও প্রাচুর্যে উদীয়মান রেখেছেন।

চাঁদপুর কণ্ঠের তিন দশকপূর্তিতে অনুভূতির অন্বেষণে স্মৃতির পাতায় যে রোমন্থন তা আমার লেখনিকে দায়বদ্ধ করে রাখে। কলমের চোখ আজ বারবার অতীত লেখনিকে আঁকড়ে ধরতে চায়। ১৯৯২-এর ১৬ ডিসেম্বর ‘সময় আলোকিত হোক লেখনির পূর্ণিমায়’ এ স্লোগানকে ধারণ করে চাঁদপুরে গঠিত হলো কবি ও লেখক সংগঠন ‘কাব্যলোক’। সাহিত্যাঙ্গনে নবজাগরণ সৃষ্টির রূপকার কাজী শাহাদাত ভাই কাব্যলোকের সভাপতি এবং আমি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলাম।

‘কাব্যলোক’ নামে প্রথম অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয় ১৯৯২-এর ১৬ ডিসেম্বর (সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে সংগঠনের জন্ম)। দ্বিতীয় প্রকাশনা ১৯৯৩-এর ২১ ফেব্রুয়ারি বর্ধিত কলেবরে প্রকাশিত হয়, কাব্যলোকের তৃতীয় প্রকাশনা ১৯৯৩-এর ২০ সেপ্টেম্বর, ৪র্থ প্রকাশনা ১১ জুলাই, ১৯৯৫ এবং ৫ম প্রকাশনা ১৯৯৭-এর ১ নভেম্বর প্রকাশিত হয়। প্রতিটি প্রকাশনার সম্পাদনা পরিষদের সভাপতি কাজী শাহাদাত ভাই এবং সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলাম আমি।

কাব্যলোক প্রতিষ্ঠার দু বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৪-এর মধ্য জুন থেকে সাহিত্যের এক ও অভিন্ন মুখপত্র হিসেবে চাঁদপুর কণ্ঠ কাব্যলোকের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড তুলে ধরে। নিঃসঙ্কোচচিত্তে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, চাঁদপুরের ভৌগোলিক সীমানায় যেসব নবীন ও প্রবীণ সৃজনশীল ও মননশীল শিল্পকর্মে এবং লেখনির মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেছেন তা একান্তই চাঁদপুর কণ্ঠের সৃষ্টি তথা শ্রদ্ধেয় কাজী শাহাদাত ভাইয়ের সমৃদ্ধ মানসিকতার ফসল। পাঠকের জ্ঞান ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করা, মৌলিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা, মুক্তচিন্তার পরিধি ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, ছোট গণ্ডিতে নিজেকে আবদ্ধ না রাখার অঙ্গীকার, সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতার পথ সৃষ্টি করা, সময়োপযোগী জ্ঞান চর্চাকে উৎসাহিত করা সর্বোপরি সৃজনশীল অগ্রযাত্রায় সাফল্যের নতুন মাত্রা যোগ করা প্রভূত নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গির উদার প্রেক্ষাপট উন্মোচন করেছে দুটি বিভাগ, তা হলো চাঁদপুর কণ্ঠের সহস্রাধিক সংখ্যার ‘পাঠকফোরাম’ ও স্বপ্ন গোলাপ ‘সাহিত্য পাতা’। ত্রুটিপূর্ণ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে চাঁদপুর কণ্ঠের জনপ্রত্যাশার দিকটি অত্যন্ত সচেতনভাবে ফুটিয়ে তোলেন পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত। সাংবাদিকতা ও সাহিত্যে নিজের অবস্থানকে সুসংহত করে চাঁদপুর থেকে সর্বপ্রথম ব্র্যাক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেলেন কাজী শাহাদাত ভাই।

চাঁদপুরের প্রথম দৈনিক হিসেবে ‘দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা, মুক্তচিন্তা এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার দ্বার উন্মোচন করেছে। প্রসঙ্গত, ৪ কলামে পত্রিকাটির বাঁপাশে লীড নিউজ : ‘মন্ত্রী পরিষদের প্রজ্ঞাপন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষিত : জেলার অধিকাংশ মাদ্রাসা ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ছবি টানানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া ও অ্যাসেম্বলী করা হয় না, (চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট : ২৮ জুন ২০০৯ খ্রিঃ, ১৪ আষাঢ় ১৪১৬ বঙ্গাব্দ)। প্রসঙ্গ-২ : ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা : ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান’ (চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট : ১৬ আগস্ট ২০১০ খ্রিস্টাব্দ, ০২ ভাদ্র ১৪১৭ বঙ্গাব্দ)।

কাশবনের হেলানো দোলানে আলিঙ্গনে আমার প্রিয় বিদ্যাপীঠ চাঁদপুর সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগীয় প্রধান খোরশেদ স্যার আমাদের প্রিয় কবি খুরশেদুল ইসলাম। ১৯৮৬ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব এসএম শামসুল আলমের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছিলো সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর। কবি খুরশেদুল ইসলাম ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক। কাজী শাহাদাত ভাই ছিলেন প্রধান সম্পাদক এবং আমি ছিলাম প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। খোরশেদ স্যারের প্রিয়তমা স্ত্রীকে সম্বোধন করে ‘সেতারা হেলাল নামে তোমাকে ডেকেছি’ নামক কাব্যগ্রন্থের পাঠ পর্যালোচনা লিখতে বললেন আমাকে শাহাদাত ভাই। চাঁদপুর কণ্ঠের ঈদুল ফিতর সাময়িকীতে স্যারের কাব্যগ্রন্থ নিয়ে লিখা আমার আলোচনাটি দুলাইনের শিরোনাম এবং সাত কলামে প্রকাশিত হলো। শিরোনাম : ‘উদয় ও অস্তাচলে ভালোবাসার অন্তঃক্ষরণ এবং কবি খুরশেদুল ইসলামের দৃষ্টিহীন দিগন্তজোড়া পথ’ (দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : ২৪ নভেম্বর ২০০৩ খ্রিঃ, পৃষ্ঠা-৬)। আমি বিস্মিত, আলোড়িত, পুলকিত এবং আন্দোলিত হলাম আমার লিখাটি পড়ে। কাজী শাহাদাত ভাইয়ের শুভ্র মনের আপন মহিমায় আমি মুগ্ধ হলাম। তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধায় নিজেকে সমর্পণ করলাম।

ভালোবাসার অন্তঃক্ষরণ, ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা, ভালোবাসার আশঙ্কা, ভালোবাসার চিন্তা-অনুভূতি, ভালোবাসার পথরুঢ়তা, ভালোবাসার কঠোরতা, ভালোবাসার প্রতিবন্ধকতা, ভালোবাসার একাকিত্ব, ভালোবাসার নিঃসঙ্গতা, ভালোবাসার অন্তর্শক্তি-উত্তরাধিকারী, অতীত ও বর্তমান এবং জীবন্ময় আনন্দের বহুমাত্রিক ও যৌক্তিক ধারাপাতে কলকাতার কবি অরুণ মিত্রের কবিতার ক’টি লাইন মনে পড়ে গেলো-

‘পৃথিবীর সমুদ্র গহ্বরে বাতিঘরের দীপ্তির মতো

প্রকৃতির বেদীমূলে কোনো অজানা হাতের জ্বালানো

শাশ্বত উৎসর্গ শিখার মতো।

নিদ্রিত মানুষকে সে আকর্ষণ করলো আলোকের দিকে।

মনে হচ্ছে কবি অরুণ মিত্র চাঁদপুর কণ্ঠকেই তথা কাজী শাহাদাত ভাইকে ইঙ্গিত করে উপমায় আচ্ছন্ন করেছেন।

চাঁদপুর কণ্ঠের তিন দশকপূর্তিতে প্রার্থনা অবিরত ‘দীর্ঘায়ু হোন শাহাদাত ভাই’। আপনার স্পন্দিত, অপ্রতিরোধ্য ও সমৃদ্ধ সক্ষমতায় দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিটি পৃষ্ঠা এবং আমার প্রিয় পাতাগুলো শক্তিতে রূপান্তরিত হবে। সময়ের ধমনীতে প্রবহমান স্বচ্ছ প্রাণবিন্দুগুলো নতুন অবয়বে তার শোভা ছড়াবে--আমরা সরলা জননীকে নিয়ে লিখবো কবিতা; বিশ্বাস-আনন্দ, সাহস-সারল্য, সমতাণ্ডসম্পদ, সত্য প্রকাশের অবিচল আস্থায় দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের উত্তাপ হবে প্রজ্জ্বলিত সূর্যের মতো।

চাঁদপুর কণ্ঠের তিন দশকপূর্তিতে আমার লেখনি-সহযোদ্ধা, উত্তাল নদীর ডানামেলা গাংচিল পাঠক, বন্ধু ও পূজনীয় হারিয়েছি যাঁদের, অতলশ্রদ্ধা এবং প্রার্থনার মেঘ মেখে দিলাম তাঁদের।

লেখক : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, চাঁদপুর জেলা শাখা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়