মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবীর ঐতিহ্য ‘আরুসাত-আল-মোলিদ’ : জন্মদিনের পুতুল
  •   'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য'
  •   চাঁদপুরের ২৪তম পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব
  •   ফরিদগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শোভাযাত্রা
  •   ওয়াইফাই সংযোগ দিতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০০

রিপোর্টার ছিলাম, ভালোই ছিলাম

বিএম হান্নান
রিপোর্টার ছিলাম, ভালোই ছিলাম

চাঁদপুরে সাংবাদিকতার একটি সুবর্ণ যুগে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। প্রতিদিন চার-পাঁচটি সচিত্র সংবাদ দৈনিক পত্রিকায় আমার নাম দিয়ে ছাপা হতো। এমনও সময় গেছে সপ্তাহের ছয় দিনই আমার নিউজ লিড করা হতো, অর্থাৎ প্রধান শিরোনাম হতো। কিন্তু সৃষ্টি সুখের উল্লাসে রিপোর্টার থেকে সম্পাদনার টেবিলে পৌঁছানোর কারণে অবিরাম পথচলায় ব্যত্যয় ঘটে। ইচ্ছা করলেও তখন তা আর হয়ে উঠেনি।

বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে যেখানে সত্য-মিথ্যার বেসাতি চলে হরদম, সেখানে নিজেকে অনেকটাই আড়ালে রাখার চেষ্টা করছি। এ অভিমান শুধু নিজের সাথে নিজের, নাকি অন্য কোথাও---।

বলছিলাম সাংবাদিকতার সুবর্ণ যুগের কথা। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত চাঁদপুরের মেঘনা নদী ও ঢাকার বুড়িগঙ্গায় অন্তত পাঁচটি ভয়াবহ লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে। এতে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ২০০৩ সালে চাঁদপুর মোলহেড এলাকায় ৮০০ যাত্রী নিয়ে এমভি নাসরিন ডুবে গেলেও লঞ্চের হদিস মিলেনি আজও এছাড়া চাঁদপুরের মেঘনায় এমভি রাজহংস, লাইটিং সান, এমভি সালাউদ্দিন ও বুড়িগঙ্গা নদীতে এমভি মহারাজ ডুবির ঘটনায় লঞ্চগুলো উত্তোলন করা সম্ভব হয়। লঞ্চগুলোর সাথে উঠে আসে শত শত যাত্রীর মরদেহ। এসব মর্মান্তিক লঞ্চ দুর্ঘটনার সচিত্র সংবাদগুলো প্রতিদিনই অনেক কষ্ট করে সংগ্রহ করতাম এবং চাঁদপুর কণ্ঠে গুরুত্ব দিয়ে তা প্রকাশ হতো। বিশেষ করে লঞ্চডুবির সাইড স্টোরিগুলো পাঠক গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করতেন। লেখাগুলো পাঠকের কাছে হৃদয়গ্রাহী করে পরিবেশনার ক্ষেত্রে শ্রদ্ধেয় শাহাদাত ভাই তাঁর সবটুকু ঢেলে দিতেন। এজন্যে তাঁর কাছে আমার অসীম ঋণ।

লেখালেখিতে আমার হাতেখড়ি হয়েছিল আশির দশকের শেষ দিকে। শিল্প সংস্কৃতি চর্চায় আমার ওস্তাদ দেবদাস খোকনের হাত ধরে। এরপর আর থেমে যেতে হয়নি। নব্বই দশকে সাপ্তাহিক সুগন্ধায় আমার লেখা নিয়মিত প্রকাশ হতো। অবশ্য সংবাদ লেখার গাঁথুনি তৈরিতে আমার আরেক গুরু ছিলেন সিনিয়র বন্ধু আবুল কালাম আজাদ। প্রচণ্ড মেধাবী আবুল কালাম আজাদকে আমার মনে হতো একটি জীবন্ত ডিকশনারি।

লেখালেখির সুবাদে প্রায়শই সংগঠনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি, স্বরচিত কবিতা কিংবা শিক্ষা সফরের লেখা নিয়ে ছুটে যেতাম সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোর সম্পাদকদের কাছে। আর এভাবেই সখ্যতা গড়ে উঠে তৎকালীন সাপ্তাহিক চাঁদপুর কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কাজী শাহাদাত ভাইয়ের সাথে।

১৯৯৯ সালের কোনো একদিন। চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠে শায়িত আমার সহপাঠী, ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে নিহত জিয়াউর রহমান রাজুর কবরের পাশে দুটি খালি ওষুধের বোতল পড়েছিল। বিষয়টি দৃষ্টিকটু হওয়ায় আমি শাহাদাত ভাইকে তাৎক্ষণিক অবহিত করলাম। তিনি বললেন তুমি নিউজটি লিখে দাও। পরদিন তিনি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশ করলেন। একই সাথে তিনি বললেন, আমাদের সাথে তোমার কাজ করতে হবে। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক আমার পাড়ার বড় ভাই অ্যাডঃ ইকবাল-বিন-বাশারের সামনে তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন। বললেন, হান্নান আমাদের সাথে নিয়মিত কাজ করবে। ইকবাল ভাই খুব খুশি হলেন। বললেন, তুমি এগিয়ে যাও, তোমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। এভাবে কখন যে সাংবাদিকতা নেশা থেকে পেশা হয়ে গেলো টেরই পেলাম না। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ শুরু হয়েছিল সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক হিসেবে। ২০০৫ সালে অব্যাহতি নেওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চীফ রিপোর্টার এবং চীফ ফটোগ্রাফার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।

চাঁদপুরের তিন সাঁতারুর ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতার, মেঘনা নদীতে নৌ বাহিনী কর্তৃক জলদস্যুদের আটক, হাজীগঞ্জের কংগাইশে মেঘনা এক্সপ্রেসের ৬টি বগির লাইনচ্যুতি, ২০০২ সালে ক্লিনহার্ট অপারেশন, ইউপি নির্বাচন, ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০০৪ সালের বন্যা, চাঁদপুর সিএসডি গোডাউনে চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ মিলন রাণী ধর্ষণ ও হত্যা, আফ্রিকার আমাজান নদীর রাক্ষুসী মাছ ‘পিরানহা’ চাঁদপুরের পুকুরে চাষাবাদ, ২০০১ সালে চাঁদপুর রেলওয়ে বড় স্টেশন, মাছঘাট ও নৌ-টার্মিনাল ডাকাতিয়া নদীতে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে তলিয়ে যাওয়া, হাইমচরে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গন, মতলব উত্তরের নন্দলালপুরে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে ভাঙ্গন কিংবা চাঁদপুর শহরের কোন্ এলাকার নামকরণ কীভাবে হলো--এরকম অংসখ্য ঘটনা-দুর্ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের সাথে মিশার সুযোগ হয়েছিল। আর এসব ঘটনা-দুর্ঘটনার সংবাদগুলো নিয়মিত দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে গুরুত্বের সাথে প্রকাশ পাওয়াটা আমার সাংবাদিকতাকে সমৃদ্ধ করেছিল। পাঠক মহলে পেয়েছিলাম ব্যাপক পরিচিতি ও ভালোবাসা। যা আজও আমি বহন করে চলেছি।

প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত ভাইয়ের সাহচর্যে থেকে সংবাদ সংগ্রহের কৌশল, এডিটিং কিংবা সম্পাদনা, পেস্টিং, মেকআপ এবং ছাপাখানায় রাত জেগে বসে থাকা, শেষতক পত্রিকার ছাপানো কপির প্রথম পাঠক হয়ে সূর্যোদয়ের আগ মুহূর্তে বাসায় ফেরা--এসবই ছিল শিক্ষণীয়। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আরেক প্রাণপুরুষ অ্যাডঃ ইকবাল-বিন-বাশার। জীবন্ত কিংবদন্তি এই মানুষটির আমরা যারা সান্নিধ্য পেয়েছিলাম তারা সবাই ঋণী। তাঁর নির্লোভ মানসিকতা ও সাহসিকতা চাঁদপুর কণ্ঠকে পাঠকপ্রিয়তা অর্জনে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়েছিল।

প্রতিদিনের অ্যাসানইমেন্ট পালন, নিজের লেখা সংবাদ পরদিনের পত্রিকায় ব্যানার হেডে ছাপা, অসংখ্য পাঠকের কাঙ্ক্ষিত খবর তুলে ধরার তৃপ্তি, পাঠকের বাহবা পাওয়া, এসবে স্মৃতিকাতর হলে মনে হয়--রিপোর্টার ছিলাম, ভালোই ছিলাম।

লেখক : সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর প্রেসক্লাব; সাবেক চীফ রিপোর্টার ও চীফ ফটোগ্রাফার, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ; সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক ইল্শেপাড়; জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক ইনকিলাব।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়