রবিবার, ০১ জুন, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৫, ০৭:৪৮

উপেক্ষিত উত্তর

সৌরভ সালেকীন
উপেক্ষিত উত্তর

প্রিয় মেহরিশা,

এই নামটা একান্তই আমার পছন্দের। এই নামের মধ্য দিয়েই তোমাকে আরেকবার বিশেষ করে তুলতে চাচ্ছি, নামের মধ্য দিয়ে এটা এই প্রথমবারের মতো এবং হয়তোবা শেষ বারের মতো। তুমি কি জানো মেহরিশা মানে কি? মেহরিশা মানে সেই নারী যে হৃদয় ছুঁয়ে যায় প্রেমের আলোয়, যে শক্তিশালী অথচ কোমল, প্রেমময়ী অথচ আত্মমর্যাদাশীল। সে প্রেমিকা, কিন্তু শুধুই ভালোবাসার বস্তু নয়Ñসে ভালোবাসার উৎসও। হ্যাঁ, তুমি ঠিক তাই ছিলে। সুতরাং, আমার দৃষ্টিতে মেহরিশার একমাত্র স্বত্বাধিকারী তুমি।

আমি জানি, তুমি কোনোদিনই আমাকে মন থেকে ক্ষমা করবে না, হয়তো ‘ক্ষমা’ শব্দটাই আমার প্রসঙ্গে তোমার অভিধান থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবুও আমি উদ্বিগ্ন নই।

যে সরলতা একদিন তোমাকে আমার প্রতি মুগ্ধ করেছিল, তার পরিণতি কীভাবে আমাদের এই অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেÑতা জানানোর অসহনীয় পীড়া আমাকে আজ কলম ধরতে বাধ্য করেছে। আশা করি ভালো আছো।

জানো মেহরিশা , মানুষ অতীত ভুলে বাঁচতে পারে না, ঠিক যেমন গাছ বাঁচতে পারে না শেকড় ছাড়া। আমি যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলাম অতীত ভুলে বাঁচতে, কিন্তু পারিনি। তাই, ক্ষত সেরে উঠবেÑএই আশা বাদ দিয়েই এগোচ্ছিলাম অতঃপর আকষ্মিক তোমার সাক্ষাৎ!

আমি কখনো ভাবিনি, তোমার এই সাক্ষাৎ আবারও আমাকে অতীতে ফিরিয়ে নেবে। হাসিখুশি নষ্ট করে বাড়িয়ে দেবে দুঃখ। পুরনো ক্ষতের উপর নতুন করে আঘাত করবে।

আমি এসব দেখেও কিছু করতে পারছিলাম না। আমার হাত-পা বাঁধা ছিল দায়িত্ব আর সম্মানের জঞ্জালে। মগজে জন্মানো এক রূঢ় কণ্ঠস্বর আমাকে ভয় দেখায়। আচ্ছা মেহরিশা তুমিই বলো, মানুষ ভয় পেলে কি করে? অবশ্যই ভয় থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তাই না? আমিও তো মানুষ। আমার মধ্যেও তো সাধারণে ব্যতিক্রম তেমন কিছু নেই। তাই আমিও পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আর সেটা জীবন থেকে নয়, তোমার থেকে। এ এক তীব্র সত্য যে, “কেউই তাঁর প্রকৃত স্বত্বা থেকে পালাতে পারে না।” আমিও পারিনি। অতঃপর, তোমাকে ছেড়ে সেই কণ্ঠস্বরের পরামর্শেই জীবন এগিয়ে নেওয়ার পথ খুঁজতে থাকি। সবশেষে আজ আমি বেঁচে আছি এক উদভ্রান্ত মানুষের মতো।

জানো মেহরিশা! তুমি আমার দেখা সবচেয়ে অদ্ভুত মেয়েদের একজন। আমি ঐশীকে চিনতাম, পুরোপুরি না হলেও অনেকটাই। তুমি ঐশীর মতো নও, একদম আলাদা। তবে হ্যাঁ ঐশীর লাবণ্য ছাপ তোমার চেহারায় এখন একটু একটু করে ফুটে উঠছে। কি অদ্ভুত তাই না! অনেক দিন অদেখা থাকার পর হঠাৎ যদি দেখা হয়ে যায় তাহলে কি অদ্ভুত ঘটনাই না ঘটবে। আমার অনুভূতিরা দ্বিখণ্ডিত হয়ে সঠিক ব্যক্তিত্ব চিনতে ব্যর্থ হবে, দ্বিধাদ্বন্দে অপ্রকাশিত থেকে যাবে অনুভূতি।

একবার মনে হবে এই হলো ঐশী আবার মনে হবে না, এটা নিশ্চিত মেহরিশা। যাকগে এসব ভেবে কাজ নেই তবে হ্যাঁ যদি কখনো এরকম দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যাই তুমি তখন এই চিঠির কথা মনে করে আমাকে সংশোধন করে দিও!

মেহরিশা তোমার মনে আছে, তুমি ঐশীর কাছে অভিযোগ করেছিলে আমি নাকি কথা কম বলি? উত্তরে ঐশী বলেছিল, পরিচয় একটু স্বাভাবিক হোক, তখন দেখবি বিরক্ত হয়ে গেছিস!

হ্যাঁ, অবশেষে একদিন তুমি বিরক্ত হয়েছিলে। আমি জানি না তোমার বোনের সে উত্তরের চাক্ষুষ প্রমাণ তোমাকে অবাক করেছিলো কি-না। তবে তোমার বিরক্তবোধ আমি আঁচ করতে পেরেছিলাম। তুমি হয়তো ভাবোইনি যে, শান্তশিষ্ট কল্পনা করা একটা মানুষ হঠাৎ এমন উত্তাল সমুদ্র হলো কিভাবে? সেই মুহূর্তটা কল্পনা করলে আমার এখনো চাপাহাসি পায়!

এবার কল্পনা করে দেখ, আমার সাথে স্বাভাবিক হওয়া মানুষগুলো কিরকম বিরক্তি নিয়ে আমাকে সহ্য করে! আমি তাদের সবাইকে সম্মান করি, তাদের প্রতি আমার দায়বদ্ধ ভালোবাসা আজীবন থেকে যাবে। পাশাপাশি তোমার প্রতিও! তুমিও তাদেরই একজনÑঅনন্যও বটে!

আজ এই অসময়ে তোমাকে মনে করার কোনো বিশেষ কারণ নেই, এটাও একপ্রকার দায়বদ্ধতা। তোমার বারান্দা হয়ে প্রবেশ করা বাতাসেরও কোনো বিশেষত্ব নেই সেটাও আরেক দায়বদ্ধতার প্রতীক, তুমি তোমার আশপাশে যা কিছু দেখছো, শুনছো এবং উপলব্ধি করছো তাঁর সবকিছুই কোনো না কোনো ভাবে, কারো না কারো কাছে দায়বদ্ধ!

আমার কর্মহীন বকবক খুব বেশি শুনাতে চাচ্ছি না, আবার এতোদিন পর তোমাকে পাঠানো পত্র প্রয়াসে ধরা কলমের আঁচও থামতে চাচ্ছে না। আমি নিরূপায়, হয়তো চাইলেই লিখবো না বলে অভিমান করে ঘুমানো যেত কিন্তু আমার অভিমান! আমার অভিমান তো তুমি কখনোই বোঝোনি, আজও যে বুঝবে না তা আমার বিগত অভিজ্ঞতা! আমি লিখতে বাধ্য হলাম তোমার প্রশ্নের প্রতি, তোমার আক্ষেপের প্রতি, তোমার হাল ছাড়ার প্রতি! তুমি সত্যিই অনন্য, তোমার হাল ছেড়ে দেওয়ার পূর্বমুহূর্ত তার শ্রেষ্ঠ প্রমাণ আমার কাছে রেখে করে গেছে।

তুমি ‘সুযোগের সদ্ব্যবহার করা’ উক্তির ভিন্ন রূপ দেখে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো কেনো? কেনো সুযোগ হাতছাড়া করেছি? আমি চাইলেই পারতাম ইচ্ছে মতো যেকোনো কিছু করার কিন্তু কেনো করিনি? করিনি কারণ, তোমার প্রতি একটা স্নেহ বোধ আমার শুরু থেকে ছিলো। তোমার পাগলামোর প্রতি আমার দুর্বলতাও শেষের দিনগুলোতে তীব্র হচ্ছিল। কিন্তু আমি তো অবুঝ নই, জেনেশুনে কিভাবে আগুনে হাত দিই, দিলে নিজেরটা দেওয়া যায় কিন্তু সাথে তোমারটা? তোমারটা কীভাবে দিই? সুতরাং তোমার ভালোর জন্য আমি সবটাই চেপে গেছি। আমি সবর্দা চেয়েছি তুমি ভালো থাকে। এবার সেটা আমার উপস্থিততে হোক অথবা অনুপস্থিতিতে। তবে সময় সাপেক্ষে বিচার করলে দেখা যাবে আমার অনুপস্থিতি তোমার জন্য কল্যাণকর আর সেজন্যই তো, আই এম আউট!

যাইহোক, আশা করি তোমার উত্তর তুমি পেয়ে গেছ, আমার বকবক তোমার কাছে খাপছাড়া লাগতে পারে তারজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। তবে হ্যাঁ তুমি যা জানতে চেয়েছিলে তা আজ— এই অবস্থানে দাড়িয়ে এই মুহূর্তে বলা খুবই সহজ!

জানো, আমাকে বিয়ে করতে চাওয়া তোমার প্রথম প্রস্তাবের পর আমি বিষয়টা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত ছিলাম। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে এমন কিছুও আমার সঙ্গে ঘটবে, সম্ভবত ঐশীও ভাবেনি। ঐশীও ভাবেনি, যে ছেলেকে সে ভালোবাসতে চায়নি অথবা বাসতে চেয়েও সুযোগ পায়নি সেই ছেলের প্রতি তাঁর ছোটবোন একসময় দূর্বলতা অনুভব করবে!

মেহরিশা! ঐশীর সাথে আমার শেষ কথা হয়েছি কোনো এক রমজানের প্রথম তারাবির পর! তোমাকে নিয়ে সে খুব উদ্বিগ্ন ছিলো। হ্যাঁ মেহরিশা তোমাকে নিয়ে! আমাকে পাঠানো তোমার সব বার্তা ঐশী পড়েছিল, তুমি বিষয়টা জানলেও হয়তো অতোটা গুরুত্ব দেওনি। কেবল জানার পর বলেছিলো তুমি কাউকে ভয় পাও না। তোমার সাহস দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম, কিন্তু ঐশী সেই সাহস দেখে মুগ্ধ না হয়ে ভীষণ ভয় পেয়েছিল, তুমি হয়তো সেটা অনুমান করতে পারোনি, আমি পেরেছিলাম। আর পেরেছিলাম বলেই ঐশীর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি, যা কিছুই হয়ে যাক তোমাকে কোনো অপরিকল্পিত ভবিষ্যতের হাতছানি দিব না। আর সবশেষে আমি আমার কথা রেখেছি, সম্ভবত ঐশীও এখন এই বিষয়টার পরিণতি জেনে নিশ্চিন্ত। সে আর এখন উদ্বিগ্ন থাকবে না। তুমিও বোধকরি খুশি হয়তো মনে মনে ভাবছো তখন কি পাগলামোটাই না করেছিলাম। ব্যাপার না, আমি তোমার সে-সব কর্মকাণ্ডকে সুখময় স্মৃতি হিসেবে স্বরণে রেখেছি। তবে তুমি চিন্তা করো না, সেসব স্মৃতি একান্তই আমার আত্ম অনুভবে থাকবে কেউ কিচ্ছু টের পাবে না। তুমি সুখী হও এটাই কামনা করি। বাদবাকি সব মগজ বিদ্রোহের নামে কারারুদ্ধ হয়ে যাক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়